পূর্বশর্ত দিয়ে পরমাণু কর্মসূচির কোনো আলোচনা নয় : রুহানি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি
ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। ছবি : ইন্টারনেট

কোনো পূর্বশর্ত দিয়ে পরমাণু আলোচনায় রাজি নয় ইরান। বিষয়টি সাফ জানিয়ে দিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, বিশ্বশক্তির সঙ্গে স্বাক্ষর হওয়া পরমাণু চুক্তি নিয়ে আর কোনো শর্ত গ্রহণ করবে না তেহরান। এমনকি ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা কর্মসূচি ও আঞ্চলিক কার্যক্রম নিয়ে কারও সঙ্গে কোনো সমঝোতা হবে না।  খবর আলজাজিরার।

যুক্তরাষ্ট্র চাইছে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ও আঞ্চলিক কর্মকাণ্ডকে মূল চুক্তির আওতায় আনতে। এই শর্ত দিয়ে তারা ফের পরমাণু সমঝোতায় আসতে চায়। এ নিয়ে কোনো দরকষাকষির সুযোগ নেই বলে জানান রুহানি।

ফেব্রুয়ারিতে দেশটিতে প্রথম কোভিড-১৯ সংক্রমণ দেখা দেয়ার পর সোমবার তেহরানে নিজের প্রথম সংবাদ সম্মেলনে হাসান রুহানি বলেন, আমরা কারও পূর্বশর্ত দিয়ে আলোচনায় রাজি নই। যৌথ কর্মপরিকল্পনা (জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্লান অব অ্যাকশন-জেসিপিওএ) নিয়ে আর কোনো দরকষাকষি নয়। এটি নিয়ে আর কোনো আলোচনার সুযোগ নেই।

‘হয় চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী সব পক্ষকে যৌথ কর্মপরিকল্পনা পুরোপুরি মানতে হবে, না হয় কেউ মানবে না। তারা যদি এটি মেনে চলে আমরাও মানব।’

৫ বিশ্বশক্তি ও জার্মানির সঙ্গে স্বাক্ষর হওয়া ইরানের পরমাণু সমঝোতা নিয়ে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, এই সমঝোতার সঙ্গে পরমাণু ইস্যু যোগ করতে হবে।  এ প্রস্তাব উড়িয়ে দিয়ে হাসান রুহানি বলেন, এটি কিছুতেই সম্ভব নয়।

‘তারা এ নিয়ে আমাদের সঙ্গে আগেই আলোচনা করেছে। সব কিছু আলোচনা শেষেই যৌথ কর্মপরিকল্পনা স্বাক্ষর হয়েছে। এখানে ইরানের সঙ্গে পক্ষভুক্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া ও জার্মানি।’

রুহানি বলেন, ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে জেসিপিওএর সঙ্গে যোগ করতে গত কয়েক মাস ধরে চেষ্টা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘেও তারা এ বিষয়ে চেষ্টা চালিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। 

ইরানের প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পরমাণু সমঝোতাকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিলেন কিন্তু তিনি সফল হতে পারেননি। ইরান সরকার সর্বশক্তি দিয়ে পরমাণু সমঝোতাকে টিকিয়ে রেখেছে।

সবাই যদি পুরোপুরি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে আলোচনার টেবিলে আসে, তবেই আমরা আলোচনায় বসতে প্রস্তুত।

ইরানের পরমাণুবিজ্ঞানী ফাখরিজাদেহকে হত্যার নিন্দা জানিয়ে হাসান রুহানি বলেন, ফাখরিজাদেহর রক্তের বদলা নেয়াকে নিজের ন্যায্য অধিকার বলে মনে করে ইরান এবং সঠিক সময়ে উপযুক্ত স্থানে প্রতিশোধ নেয়া হবে।

দীর্ঘ ২৯ বছর পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে প্রেসিডেন্ট পর্যায়ে টেলিফোন সংলাপ এবং তার ধারাবাহিকতায় ইরানের বিতর্কিত পরমাণু কর্মসূচি বিষয়ে ইরান ও বিশ্বের ছয় শক্তিমান রাষ্ট্রের মধ্যে এক অন্তর্বর্তী সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর ২০১৩ সালে।

এর পর ২০১৫ সালে বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট থাকার সময় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি হয় ইরানের। ওই চুক্তির মূল বিষয় ছিল– ইরান পরমাণু কার্যক্রম সীমিত রাখবে এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি কমিশন ইরানের যে কোনো পরমাণু স্থাপনায় যে কোনো সময় পরিদর্শন করতে পারবে। বিনিময়ে ইরানের ওপর থেকে অর্থনৈতিক অবরোধ তুলে নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।

কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর গত বছর এই চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ায় যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে ইরানের ওপর ফের অর্থনৈতিক অবরোধও আরোপ করেন তিনি। ওই চুক্তিকে ত্রুটিপূর্ণ ও একপেশে হিসেবে উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেছিলেন, এ চুক্তির মাধ্যমে ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জন থামানো যাবে না।

শেয়ার করুন