আর কয়েক ঘণ্টা পরেই বিজয়ের ৪৯তম বার্ষিকীতে স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রাণ দেয়া অকুতোভয় বীর শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে সমগ্র জাতি। সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধের বেদিতে আগামীকাল ১৬ ডিসেম্বর শ্রদ্ধা নিবেদন করবে জাতি। শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় জাতির বীর সন্তানদের স্মরণ করতে পুরোপুরি প্রস্তুত সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ।
দিবসটি পালনে এরই মধ্যে পুরো সৌধ এলাকা ধুয়ে মুছে রং-তুলির আঁচড়ে রাঙিয়ে তোলা হয়েছে। নানা রঙের বাহারি ফুলের চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে স্মৃতিসৌধের সবুজ চত্বর। চত্বরের সিঁড়ি ও নানা স্থাপনায় পড়েছে রং-তুলির আঁচড়। আলোকসজ্জায় সাজানো হয়েছে স্মৃতিসৌধের রাস্তাসহ পুরো এলাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ পুরোপুরি শেষ। সৌধস্তম্ভের উঁচু চূড়া থেকে শুরু করে শহীদবেদি ও পায়ে চলার পথসহ পুরো এলাকা ধুয়ে-মুছে চকচকে করা হয়েছে। সৌধ ফটক থেকে বেদি পর্যন্ত হাঁটাপথের লাল ইটগুলোতে সাদা রঙের ছোঁয়া ছড়াচ্ছে শুভ্রতা। বিভিন্ন স্থানে শোভা পাচ্ছে লাল, নীল, বেগুনি, হলুদ ও সাদাসহ বিভিন্ন বর্ণের ফুল গাছের চারা। ছেঁটে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তোলা হয়েছে সৌধ এলাকার শোভাবর্ধনের জন্য লাগানো গাছ।
মহান বিজয়ের এই দিনে প্রতিবারই সকালে স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিন বাহিনীর প্রধান, বিরোধীদলীয় নেতা, বিদেশি কূটনীতিক ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
কিন্তু এবার বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন না রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। তবে তাদের পক্ষে দুইজন সামরিক সচিব জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণে শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।
এরপর মন্ত্রিপরিপষদ সদস্য, দেশি-বিদেশি মেহমান ও কূটনৈতিকসহ ভিআইপি ব্যক্তিরা শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। পরে সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে জাতীয় স্মৃতিসৌধ।
বিজয় দিবসে আগত দর্শনার্থীসহ সকলের নিরাপত্তার জন্য কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে ঢাকা জেলা পুলিশ। এছাড়া সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।
অন্যদিকে বিজয় দিবসকে ঘিরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজার থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন স্থান মেরামত ও ডিভাইডারসহ আশপাশের গাছগুলোতে রং করা হয়েছে। প্রধান ফটকে ঢোকার জন্য জীবাণুনাশক স্প্রে ব্যবহার করতে বড় করে মেশিন স্থাপন করা হয়েছে।
সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে বেশ কিছুদিন ধরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছে। ইতোমধ্যে জাতীয় স্মৃতিসৌধের আশপাশের এলাকার গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উদযাপনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা বজায় থাকবে।
জাতীয় স্মৃতিসৌধের গণপূর্ত বিভাগের কর্মচারীরা জানান, বিজয় দিবস উপলক্ষে তাদের শতাধিক কর্মী সৌধ এলাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করে সৌধস্তম্ভসহ পুরো এলাকা ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করেছে। সৌধ প্রাঙ্গণের বিভিন্ন স্থানে রোপণ করা হয়েছে লাল, নীল, হলুদ, বেগুনিসহ বাহারি ফুল গাছের চারা। এছাড়া বিভিন্ন শোভা বর্ধনকারী গাছ ও ঘাস ছেঁটে ফেলাসহ আলোকবাতি স্থাপন করা হয়েছে।