রাজধানী ঢাকার গুলিস্তানের সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটের মূল নকশার বাইরে ৬৭৯টি দোকান গড়ে তোলা হয়েছে। এসব দোকানের বিপরীতে মার্কেট কর্তৃপক্ষ কোটি কোটি টাকা লোপাট করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এই দোকানগুলো উচ্ছেদ শুরু করেছে।
বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় মার্কেটটিতে অভিযান শুরু করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। অভিযানের নেতৃত্ব দেন করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন। প্রথম দিনের অভিযানে বেশ কয়েকটি দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে ডিএসসিসি।
এর আগে সকালে উচ্ছেদ শুরুর আগে মার্কেটের সামনে মানববন্ধন করেন ব্যবসায়ীরা। নকশাবহির্ভূত এসব দোকানের মালিকরা দাবি করেন, তাদের দোকানের বিষয়ে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ রয়েছে। মোটা অংকের টাকা দিয়ে তারা এসব দোকানের মালিক হয়েছেন। আর সিটি করপোরেশনকেও নিয়মিত খাজনা দিয়ে আসছেন। আছে দোকানের ট্রেড লাইসেন্সও।
এ সময় ব্যবসায়ীদের পক্ষে চারজন আইনজীবী করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিনের সঙ্গে কথা বলতে যান। তবে তাদেরকে মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন ডিএসসিসি কর্মকর্তা।
অভিযানের শুরুতে মার্কেটটির সঙ্গে লাগোয়া ফুটপাতের অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা হয়। এরপর উচ্ছেদ শুরু হয় মার্কেটের মূল ভবনে। মার্কেটের নকশার বাইরে গড়ে তোলা দোকানগুলো একে একে ভাঙতে শুরু করে নগর কর্তৃপক্ষ।
মার্কেটের ন্যাশনাল ইলেকট্রিক নামের একটি দোকানের মালিক উজ্জ্বল হোসেন এস এম বলেন, আমি দুইটা দোকান কিনেছিলাম ৫০ লাখ টাকা দিয়ে। ৮৪ মাসের খাজনা দিয়েছি তিন হাজার ৬১৬ টাকা। সিটি করপোরেশনের সার্ভেয়ার বাচ্চু মিয়া আমাদের মার্কেটে আসতেন। মেপে মেপে নিয়ে যেতেন। আমি যার থেকে দোকান কিনেছি তাকে টাকা দিয়েছি। সিটি করপোরেশনকে দোকান কেনার টাকার দিইনি। তখন যারা মার্কেটের দায়িত্বে ছিল তাদেরকে টাকা দিয়েছি।
দুই বছর আগে ছয় লাখ টাকা দিয়ে দোকান কেনেন মো. সাগর। মার্কেটের পঞ্চম তলায় সুন্দরবন স্কয়ার মালিক সমিতির কার্যালয়ে টাকা দেন তিনি। সাগর বলেন, সুন্দরবন স্কয়ারের কমিটি আমার থেকে টাকা নিয়েছে। তারা তাদের সিল দিয়ে আমার থেকে টাকা নিয়েছে। আমি টাকা দিছি, আমার তো ব্যথা আছে। তারা দলীয় লোক। তাদের পাওয়ার আছে। এই টাকা থেকে সরকার কয় টাকা পাইছে আমি জানি না। আমি আগের মালিকের থেকে দোকান কিনছি। সিটি করপোরেশনের রাজু ভাই, ইফতেখার ভাই দোকানের কাগজপত্র আমার নামে ট্রান্সফার কইরা দিল।
আক্ষেপ জানিয়ে সাগর বলেন, পাঁচ দিন আগে শুনি, এই দোকানগুলা নকশার বাইরে। এগুলো ভেঙে ফেলবে। আমরা কি জানি কোনটা নকশার বাইরে, কোনটা নকশার ভেতরে? আমাদের কথা হলো এটাই, কারা শুরু থেকে এই দোকানগুলা বানাইলো? এই দোকানের টাকা কারা নিল? কেন আমরা এত বছর সিটি করপোরেশনের খাজনা দিলাম? আমাদের দোকান যদি অবৈধ হয়, তাহলে দোকানের ওপর এই সিটি করপোরেশন আমাদেরকে ট্রেড লাইসেন্স আগের মেয়র কেন, কীভাবে দিলেন? আমাদেরকে কেন আজ পথে ফালাইলো? আমাদের কী অন্যায়? এই দোকান কারা বানাইলো?
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মার্কেটের কমিটির সঙ্গে সম্পৃক্ত শাহবুদ্দিন সাবু, কমিটির সভাপতি শাহজাহান সাজুসহ বিগত কমিটির নেতারা সিটি করপোরেশনের বাজার শাখা থেকে এসব দোকানের অনুমোদন নিয়ে দেয়া হবে জানিয়ে ব্যবসায়ীদের থেকে টাকা নেন। ব্যবসায়ীরা জানান, মার্কেটের কোনো দোকান তিন লাখ টাকার কমে হাত বদল হয়নি। সে হিসেবে ৬৭৯টি দোকানের বিপরীতে প্রায় ২০ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে।
এদিকে উচ্ছেদের বিষয়ে জানতে চাইলে করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন জানান, তিনি দক্ষিণ সিটি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের নির্দেশনায় মার্কেটের নকশাবহির্ভূত স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করছেন।