তিস্তা চুক্তি না হওয়ায় ‘লজ্জিত’ মোদি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির ভার্চুয়ালি বৈঠক

ঢাকা-নয়া দিল্লির সম্পর্কে সবচেয়ে বড় গলার কাঁটা দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা তিস্তা ইস্যু। তিস্তা নিয়ে এবারও ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে আশ্বাস দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দুই প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়াল আলোচনায় তিস্তা ইস্যু নিয়ে মোদি শেখ হাসিনাকে দেয়া বার্তা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বলেছেন, তিস্তা নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সবকিছু রেডি থাকার পরও তিস্তা চুক্তি না হওয়ায় তিনি লজ্জিত।

তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী আলোচনার মাধ্যমে তিস্তার সমাধানের কথা বলেছেন বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভার্চুয়াল বৈঠক শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

বরাবরের মতো এবারও তিস্তা হিস্যা নিয়ে ভারতের পক্ষ থেকে আশ্বাস এসেছে। এ নিয়ে বাংলাদেশ আশাবাদী কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আশাবাদী।’

তিস্তা বাদে অন্য ছয় নদীর সমস্যার বিষয়ে খুব শিগগিরই বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ নদী কমিশন বৈঠক করবে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার আশ্বাস

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হত্যার পরিমাণ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার আশ্বাস দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে আবারও দিকনির্শেনা দেবেন বলে জানিয়েছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সীমান্তে যেন একটি প্রাণও না যায় সে ব্যাপারে ভারত অঙ্গীকারবদ্ধ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, তিনি এ বিষয়ে তার দেশের সংশ্লিষ্টদের আবারও দিকনির্দেশনা দেবেন। মোদি আশ্বাস দিয়েছেন, সীমান্তে যেন ছোটখাট অস্ত্রও ব্যবহার না হয়।’

বাংলাদেশ-ভারত কোনো দেশই সীমান্তে হত্যা চায় না বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ঢাকা ও নয়া দিল্লির সম্পর্ক আগের সময়ের চাইতে বেশ ভালো পর্যায়ে আছে বলে হরহামেশাই বলে যাচ্ছে দুই দেশ। তবে দুই দেশের সম্পর্কে গলার কাঁটা হিসেবে প্রায়ই সামনে আসে সীমান্ত হত্যা, তিস্তাসহ বিভিন্ন নদীর পানি ইস্যুর অসমাধানের বিষয়টি।

এই সমস্যাগুলোর মধ্যে সীমান্ত হত্যার বিষয়টি প্রায় দুই দেশের সম্পর্কে অস্বস্তি তৈরি করে। দুই দেশ প্রতি বছরই এই সমস্যা সমাধানে বৈঠক কিংবা আলোচনায় বসলেও এই সমস্যার সমাধান কর যাচ্ছে না। সর্বশেষ বাংলাদেশের বিজয় দিবসের দিনে বিএসএফের হাতে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্তে এক বাংলাদেশির হত্যার সংবাদ আসে।

দুই প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় ভারতে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশে নন-ট্যারিফ ব্যরিয়ার তুলে দেওয়ার বিষয়েও দেশটিকে ঢাকার পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

বঙ্গবন্ধুকন্যা ভারত-মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের মধ্যে যে সড়ক হচ্ছে সেটাতে বাংলাদেশ যুক্ত হতে ভারতের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে বলেও জানান মোমেন। এতে বাংলাদেশ কীভাবে লাভবান হতে পারে সেটাও সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন মোমেন। তিনি বলেন, ‘এই সড়কে বাংলাদেশে প্রবেশের প্রস্তাব পেলেও তৎকালীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজি ছিলেন না। এটাতে আমরা যুক্ত হতে পারলে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে।’

বাংলাদেশকে তিন কোটি ভ্যাকসিন দেবে ভারত

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়াল বৈঠকে কোভিড-১৯ মহামারিতে সামনের দিনগুলোতে কীভাবে সহযোগিতা অব্যাহত রাখা হয় সে বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে তিন কোটি ভ্যাকসিন দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ ভারতের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, তারা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন পাওয়া মাত্রই বাংলাদেশকে তিন কোটি ভ্যাকসিন দেবেন। এটা আমাদের দেশের জনগণকে দেয়া হবে।’

ভারতের বাংলাদেশকে আশ্বাস দেয়া ভ্যাকসিনের মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে জানতে চাইলে মোমেন জানান, মোটামুটি সুলভমূল্যে দেশটি বাংলাদেশকে ভ্যাকসিন দেবে।

বাংলাদেশকে ব্রিকসে চায় ভারত

বিশ্বের পাঁচ বৃহৎ উদীয়মান অর্থনীতির জোট ব্রিকসের উদ্যোগে পাঁচ বছর আগে গড়া নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে (এনডিবি) যুক্ত হতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত আমাদের অনুরোধ করছে ব্রিকসে ঢোকাতে। আমাদের পক্ষ থেকে এটা ভেবে দেখার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।’

ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার (ব্রিকস) অর্থনৈতিক জোট ব্রিকসের উদ্যোগে ২০১৫ সালের ২১ জুলাই যাত্রা শুরু করে নিউ ডেভলেপমেন্ট ব্যাংক-এনডিবি।

শেয়ার করুন