আটকেপড়া প্রবাসীদের সরকারি খরচে ফিরিয়ে আনা হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রবাসী
ফাইল ছবি

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ বলেছেন, লেবাননসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আটকেপড়া প্রবাসীদের সম্পূর্ণ সরকারি খরচে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।

শুক্রবার (১৮ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস-২০২০ উপলক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।

universel cardiac hospital

আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস আজ। এবারের প্রতিপাদ্য— মুজিববর্ষের আহ্বান, দক্ষ হয়ে বিদেশ যান। এবারের মূল ও জাতীয় অনুষ্ঠান আগামী ৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকার সম্মতি দিয়েছেন।

লিখিত বক্তব্যে ইমরান আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও বেকারত্ব দূরীকরণে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের গুরুত্ব অপরিসীম। এ দেশে প্রতিবছর আনুমানিক ২০ থেকে ২৫ লাখ কর্মী শ্রমবাজারে যুক্ত হচ্ছে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রতি বছর প্রায় সাত থেকে আট লাখ লােক বৈদেশিক কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশে গমন করে। বিএমইটি’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ সালে সাত লাখ ১৫৯ জন কর্মী বিদেশ গেছেন। কিন্তু বর্তমানে মহামারি করােনাভাইরাস ও বিভিন্ন গন্তব্য দেশের অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বৈদেশিক কর্মসংস্থান হ্রাস পেয়েছে। এই করােনা মহামারি পরিস্থিতিতে মন্ত্রণালয় দেশে-বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের আর্থ-সামাজিক রি-ইন্ট্রিগেশনসহ সামগ্রিক সুরক্ষা, বর্তমান শ্রমবাজার ধরে রাখা, নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধান, বন্ধ শ্রমবাজার উন্মুক্তকরণসহ করােনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ কর্মী তৈরিকে প্রাধান্য দিয়েছে। এ লক্ষ্যে করােনা মহামারিকালে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে মন্ত্রণালয়।

গৃহীত কার্যক্রমের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হলো- প্রবাসী বাংলাদেশিদের সমস্যা দ্রুত সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/দফতর/সংস্থা নিয়ে ১৪টি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা, বিদেশে বাংলাদেশ মিশনের শ্রম কল্যাণ উইংয়ের মাধ্যমে দুস্থ ও কর্মহীন হয়ে পড়া প্রবাসী কর্মীদের মাঝে বিশেষ বরাদ্দ হিসেবে ৯ কোটি ৮৫ লাখ ২৫ হাজার টাকার ওষুধ, ত্রাণ ও জরুরি সামগ্রী বিতরণ, করােনাকালে সৌদি আরবের ডিপোর্টেশন সেন্টারে অবস্থানরত মােট ২০৭ জন নারী কর্মীকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বাের্ডের তহবিল হতে বিমান ভাড়া প্রদান করে দেশে ফেরত আনা হয়েছে, একইভাবে লেবানন থেকে ৯৫ জন কর্মী এবং ভিয়েতনামে আটকে পড়া ১০৫ জন কর্মীকে দেশে ফেরত আনা হয়েছে। লকডাউনেরসময় গত ২৯ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত বিদেশ প্রত্যাগত ৫ হাজার ৯ শত ৭৪ জন কর্মীকে জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা করে বিমানবন্দরে তাৎক্ষণিক মােট ২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বিদেশ প্রত্যাগত কর্মীদের এবং প্রবাসে করােনায় মৃত কর্মীর পরিবারের উপযুক্ত সদস্যকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে সহজ শর্তে ২০০ কোটি টাকার বিনিয়ােগ ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করছে। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বাের্ডের তহবিল থেকে গত ১৫ জুলাই হতে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে মাত্র ৪ শতাংশ সরল সুদে ও সহজ শর্তে এ ঋণ প্রধান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর আওতায় ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪১১ জন ঋণগ্রহীতাকে ইতােমধ্যে ৮ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করা হয়।

বিদেশ ফেরত কর্মীদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের অনুকূলে সরকার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ অনুমােদন করেছে। ইতোমধ্যে প্রায় ২০০ কোটি টাকা থেকে পুরুষ কর্মীদের জনা ৯ শতাংশ সুদে ও নারী কর্মীদের জন্য ৭ শতাংশ সুদে বিতরণ শুরু হয়েছে। বিদেশ প্রত্যাগত কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং প্রবাসী কর্মীদের কল্যাণ সেবা শক্তিশালীকরণের এই প্রকল্পটি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে দ্রুত বাস্তবায়িত হবে বলে আশা করা যায় ।

ইমরান আহমেদ বলেন, দক্ষ কর্মী তৈরির লক্ষ্যে সারাদেশে ৬৪টি টিটিসি ও ৬টি আইএমটি চালু আছে। উপজেলা পর্যায়ে ৪০টি টিটিসি নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে আছে। মুজিববর্ষের বিশেষ উদ্যোগে মহান মুক্তিযুদ্ধের বছরের স্মারক হিসেবে উপজেলা পর্যায়ে আরাও ১০০টি টিটিসি নির্মানের প্রকল্প রয়েছে। ইতােমধ্যে এর ডিপিপি প্রণয়নের কাজ সমাপ্ত হয়।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতি উপজেলা থেকে প্রতিবছর গড়ে ১ হাজার জনকে বিদেশে কর্মসংস্থানের অঙ্গীকার করেছেন। গত অর্থবছরে গড়ে এই সংখ্যার চেয়েও বেশি কর্মী বিদেশে পাঠানো হয়। অদূর ভবিষ্যতে প্রতি উপজেলা থেকে ন্যূনতম ১ হাজার জনকে বিদেশে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, প্রবাসী কর্মীদের একটি অংশ দেশে ফেরত এসেছে। গত ১ এপ্রিল থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ৩ লাখ ২৬ হাজার ৭৫৮ জন প্রবাসী কর্মী দেশে ফিরে এসেছেন। তাদের অনেকে কাজের মেয়াদ শেষে বা কাজ না থাকায় দেশে ফেরত এসেছেন। যদিও আশঙ্কা করা হয়েছিল, অর্থনৈতিক মন্দা এবং করােনার প্রভাবে প্রধান কর্মী নিয়ােগকারী দেশসমূহে শ্রমবাজার বিপর্যস্ত হওয়ার কারণে অনেক বিদেশী কর্মী বেকার হয়ে পড়বে। কিন্তু আশার কথা হলাে, এখন পর্যন্ত ফেরত আসা কর্মীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হয়ে উঠেনি। এক্ষেত্রে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিদেশি মিশন ও দূতাবাস একযােগে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যম কর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব আহমেদ মুনিরুস সালেহীন।

শেয়ার করুন