পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ক্ষমতায় এলে হতে পারে তিস্তা চুক্তি!

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির ভার্চুয়ালি বৈঠক

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভার্চুয়ালি বৈঠকের পর আবার আলোচনায় এসেছে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা তিস্তা চুক্তির প্রসঙ্গটি। সেই বৈঠকে এতদিনেও তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন করতে না পারায় লজ্জিত বলে জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি।

এই আলোচনার পর তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে জোর দিচ্ছে বিজেপি সরকার। এই চুক্তি বাস্তবায়নে প্রধান বাধা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। এই রাজ্যের আগামী বিধানসভা নির্বাচনে ক্ষমতায় আসতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকা বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ক্ষমতায় এলে তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকা।

universel cardiac hospital

শনিবার আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ বৈঠকের পর, ফের তিস্তার জলে ঢেউ উঠল। দুই দেশের যৌথ বিবৃতিতে স্পষ্ট করে দেয়া হলো, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাবিত কোনো বিকল্প প্রস্তাব নয়, ২০১১ সালে দুই দেশের সরকার তিস্তা জলবণ্টনসংক্রান্ত যে চুক্তিতে সম্মত হয়েছিল, সেটিই দ্রুত সই করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে মোদি সরকার যে ধারাবাহিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেটিও বলা হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গে যখন নির্বাচন কড়া নাড়ছে, তখন ঢাকার সঙ্গে যৌথ বিবৃতিতে এই তিস্তা প্রসঙ্গ মমতার প্রতি মোদির বার্তা বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে এই প্রশ্নও উঠে আসছে, আগামী বিধানসভা ভোটে জিতে বিজেপি ক্ষমতায় এলে কি উত্তরবঙ্গের নেতৃত্ব বা সাংসদেরা বাংলাদেশের সঙ্গে জলবণ্টনে রাজি হবেন?

যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘দু দেশের সরকার ২০১১ সালে তিস্তার জলবণ্টনের প্রশ্নে অন্তর্বর্তী চুক্তিতে রাজি হয়েছিল। সেটি এবার দ্রুত সই করার দিকে জোর দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফের জানিয়েছেন, ভারত সরকারের ধারাবাহিক প্রয়াস চলছে এবং এ ব্যাপারে ভারতের প্রতিশ্রুতি অটুট।’

আনন্দবাজার জানায়, কূটনৈতিক শিবিরের মতে, যৌথ বিবৃতিতে শেখ হাসিনা তথা বাংলাদেশের প্রস্তাবকে মান্যতা দিয়ে ২০১১ সালের উল্লেখ রাখা হয়েছে ঠিকই, তবে এতে মোদি সরকারেরও সায় ছিল। তিন বছর আগে হাসিনার ভারত সফরের সময় তিস্তার বদলে বিকল্প জলবণ্টন চুক্তির উল্লেখ করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। মমতার প্রস্তাব ছিল, তোর্সা-জলঢাকা-রায়ডাক নিয়ে ফের নদী কমিশন গড়ে আলোচনা শুরু করা হোক। বিষয়টিতে ক্ষুব্ধ হয় কেন্দ্র। হতাশ ঢাকারও বক্তব্য ছিল, তিস্তা ও তোর্সার অববাহিকা এক নয়। তিস্তার জল শুকিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশে এই নদীর অববাহিকায় একটা বিস্তীর্ণ এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে।

তাছাড়া ভূপ্রকৃতিগত কারণে তোর্সার বাড়তি জল আনাটাও সম্ভব নয়। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চল থেকে তোর্সা ছাড়া জলঢাকা ও রায়ডাক নদী বাংলাদেশে বয়ে এসেছে। কিন্তু খুব বেশি দূর না এসেই তারা বিভিন্ন নদীতে মিশে যাওয়ায় তিনটি নদীর অববাহিকা ছোট। এই কারণে এগুলি বাংলাদেশে কোনো গুরুত্বপূর্ণ নদী হিসাবেই বিবেচিত হয় না। তোর্সা, জলঢাকা বা রায়ডাকে ভারত বাড়তি জল দিলেও তিস্তা অববাহিকার দুর্দশা ঘুচবে না।

আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়, রাজনৈতিক শিবিরের মতে, ২০১৭ সালে মমতার বিকল্প জলবণ্টনের প্রস্তাব দেয়াই একমাত্র নয়। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের ঢাকা সফরে ভারত-বাংলাদেশ তিস্তা চুক্তি সই করার বিষয়টি যখন চূড়ান্ত হয়ে যায়, তখন থেকেই বিরোধিতা করছেন মমতা। মনমোহনের সঙ্গে তার বাংলাদেশ যাওয়ার কথা থাকলেও, তিনি যাননি। মনমোহনের বাংলাদেশ সফরের কয়েক দিন আগে বিদেশসচিব শিবশঙ্কর মেনন মমতার সঙ্গে দেখা করে খসড়া চুক্তিটি (যেটার উল্লেখ গতকাল করা হয়েছে যৌথ ঘোষণাপত্রে) সম্পর্কে জানিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে। সূত্রের খবর, ওই খসড়ায় রাজি ছিলেন না মমতা।

কূটনৈতিক সূত্রের মতে, অদূর ভবিষ্যতে অর্থাৎ বাংলায় ভোটের পর তিস্তার জল কোন দিকে গড়াবে সেটা ভবিষ্যৎই বলবে। কিন্তু বর্তমানে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে যেকোনো ধরনের ছিদ্র দিয়ে ড্রাগনের ঢুকে পড়ার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। সূত্রের মতে, বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে প্রায় ১০০ কোটি ডলারের ঋণ নিয়ে আলাপ আলোচনা করছে। চীনের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাবিত ঋণটি তিস্তা অববাহিকার সামগ্রিক পরিচালন ব্যবস্থা এবং তিস্তা নদীর বিভিন্ন প্রকল্পকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার সঙ্গে যুক্ত। নদী অববাহিকা ঠিকভাবে ব্যবহার, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, গ্রীষ্মে খরা মোকাবিলা করার জন্য এই পুঁজি কাজে লাগানো হবে। বাংলাদেশ এবং চীনের বাণিজ্য সম্পর্কের ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতা বেশ কিছু বছর ধরেই সাউথ ব্লকের নজরের মধ্যে রয়েছে।

আনন্দবাজার লিখেছে, ওয়াকিবহাল শিবিরের মতে, তিস্তার জন্য ঋণ দেয়ার বিষয়টি নিছকই উন্নয়নমূলক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ নয়। এর চরিত্র আলাদা। তিস্তা নিয়ে বাংলাদেশের আবেগ এবং গত এক দশক ধরে ভারতের সঙ্গে ঢাকার টানাপড়েনের বিষয়টিকে বেইজিং কৌশলগতভাবে কাজে লাগাতে চাইছে কি না, সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে।

শেয়ার করুন