ডেমু ট্রেন মেরামতের নামে হরিলুট। দুই লাখ টাকা দামের যন্ত্রাংশ কেনা হয়েছে ৪২ লাখ টাকায়। ইঞ্জিনের বিশেষ মেরামতের নামে ৮ কোটি ২৫ লাখ টাকার সীমাহীন লুটপাটের অভিযোগ গড়িয়েছে দুদক পর্যন্ত। মালামাল কেনা হয়েছে ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি দামে।
এসব অভিযোগ রেলওয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক মঞ্জুর-উল-আলম চৌধুরীর বিরুদ্ধে, তবে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস রেলমন্ত্রীর।
২০১৩ সালে ৬৫৪ কোটি টাকায় ২০টি ডেমু ট্রেন কেনার পর থেকেই বিকল হতে শুরু করে। দীর্ঘদিন পড়ে থাকার পর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ কোটি ২৫ লাখ টাকায় ১৭টি ডেমুকে বিশেষ মেরামত “ওভার হোলিং” করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে।
বাংলাদেশে ডেমুর কোনো ওয়ার্কশপ, যন্ত্রাংশ কিংবা মেকানিক না থাকায়, চুক্তিতে শর্ত থাকলেও ডেমু উৎপাদনকারী চাইনিজ প্রতিষ্ঠান তাংশেনকে রাখা হয়নি মেরামতে। আবার এর ইঞ্জিন নির্মাতা জার্মানির প্রতিষ্ঠান ম্যানের কাছ থেকেও কেনা হয়নি কোনো যন্ত্রাংশ। শর্ত ভঙ্গ করে দুটি কাজই দেওয়া হয়েছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান ফারুক মেটাল ইঞ্জিনিয়ারিংকে। যাদের কোনো অভিজ্ঞতাই নেই।
মেরামতে কর্মরত শ্রমিকরা বলেন, চীন বা জার্মানির কোনো প্রতিনিধি এখানে ছিল না। আমরা নিজেরাই শিখি। আমাদের কোনো ট্রেইনারও নেই।
৮ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে মেরামত করা হলেও, এখনো ডেমুগুলো নানা সমস্যায় জর্জরিত। নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে যন্ত্রাংশ কেনা হয়েছে, যা নিম্নমানের বলে অভিযোগ ডেমু মেকানিকদের। তারা বলেন, হাওয়া লিক হয়ে যায়। দুর্বল যন্ত্রাংশের কারণে প্রায়ই সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
সম্প্রতি ডেমু মেরামতে দুর্নীতির অভিযোগ দুদকেও দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয় প্রতিটি যন্ত্রাংশ কেনা হয়েছে ২০ গুণ পর্যন্ত বেশি দামে।
এসব অভিযোগ রেলের বর্তমান অতিরিক্ত মহাপরিচালক রোলিং স্টক মঞ্জুর-উল-আলম চৌধুরীর বিরুদ্ধে। যিনি সেই সময় মেকানিক্যাল বিভাগের যুগ্ম পরিচালক ছিলেন। তিনি বলেন, আমি এসব না জেনে বলতে পারব না। কারা কিনেছে, কখন কিনেছে আমাকে জানতে হবে।
তবে সময় সংবাদকে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসের কথা জানান রেলপথ মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন।
বর্তমানে ২০টি ডেমুর বেশির ভাগই বিকল হয়ে পড়ে আছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম লোকশেডে।