চোর বাহিনী গঠন করে ফুলে ফেঁপে ওঠেন পাগলা মিজান

নিজস্ব প্রতিবেদক

কাউন্সিলর পাগলা মিজান
কাউন্সিলর পাগলা মিজান। ফাইল ছবি

প্রথমে বাহিনী গঠন করে ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি; এরপর ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন মাদক কারবারীদের গডফাদার। ১৯৯৪ সালে তিনি কাউন্সিলরও নির্বাচিত হয়ে যান। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজানের সর্ম্পকে এমন তথ্য উঠে এসেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) তদন্তে।

সিআইডি বলছে, অবৈধভাবে ২০ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন মিজান। এ ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তার নামে রয়েছে অন্তত ১৫টি ফ্ল্যাট। তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচার আইনের মামলার চার্জশিটে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। সম্প্রতি সিআইডি আদালতে ওই চার্জশিট জমা দেয়।

universel cardiac hospital

গত বছর আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ক্যাসিনো ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু করলে হাবিবুর রহমান মিজান বিদেশে পালানোর চেষ্টা করেন। এরপর ১১ অক্টোবর র‌্যাব তাকে মৌলভী বাজারের শ্রীমঙ্গলের একটি বাসা থেকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে। পরে তার বিরুদ্ধে সেখানে অস্ত্র আইনে মামলা হয়।

র‌্যাব তার ঢাকার বাসায় অভিযান চালিয়ে ছয় কোটি ৭৭ লাখ টাকার চেক ও এক কোটি টাকার এফডিআর উদ্ধার করে। এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় অর্থ পাচার আইনে (মানিলন্ডারিং আইন) মামলা হয়। এ মামলায় তদন্ত শেষে সিআইডি আদালতে চার্জশিট জমা দেয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক এস এম মিরাজ আল মাহমুদের দেওয়া চার্জশিটে মিজানুর রহমানের অবৈধ আয় ও তার উত্থানের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়।

এতে বলা হয়, মিজান গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি থেকে ১৯৭৩ সালে ঢাকায় এসে মোহাম্মদপুর এলাকায় নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছিলেন। ছিনতাই করে পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করলে রক্ষা পাওয়ার জন্য তিনি নিজেই বিবস্ত্র হয়ে দৌড়াতে থাকেন। তখন থেকে লোকজন তাকে পাগলা মিজান নামে চেনে। এক পর্যায়ে নিজে বাহিনী গঠন করে ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি শুরু করে তার গ্রুপের লোকজন। ধীরে ধীরে মিজান হয়ে ওঠেন মাদক কারবারীদের গডফাদার। ১৯৯৪ সালে তিনি কাউন্সিলরও নির্বাচিত হয়ে যান।

চার্জশিটে বলা হয়, ১৯৭৫ সালের শেষ দিকে মিজান মিরপুরে একটি মিষ্টির দোকান দিয়েছিলেন। ৮০’র দশকে গণপূর্তের ঠিকাদারি লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। ২০০১ সালে বছিলায় একটি ইটভাটা দেন। ওই এলাকাতেই ‘হাবিব প্লাজা নামে একটি মার্কেট, লালমাটিয়ার স্বপ্নপুরী হাউজিংয়ে সাতটি ফ্ল্যাট, মোহাম্মদপুর আওরঙ্গজেব রোডে একটি ফ্ল্যাট এবং পল্টনে পুরো পাঁচতলা ভবনে ১০টি ফ্ল্যাটের সন্ধান মিলেছে। এ ছাড়া তিনি ঢাকার হজ কাফেলা অ্যান্ড ট্রাভেলসের মালিক। এর বাইরে মাদক ব্যবসার ভাগ, দখল ও ত্রাসের রাজত্ব করে তিনি টাকা কামিয়েছেন। তার স্ত্রীর নামেও তিনটি ফ্ল্যাট রয়েছে।

সিআইডির তদন্ত সংশ্নিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মিজানের স্ত্রী মনি রহমানের নামে তিনটি ফ্ল্যাট ছাড়াও তিনটি গাড়ি রয়েছে। কয়েকটি ব্যাংক হিসাবে তার নামে ১৬ লাখ ৬৩ হাজার ৩৫৪ টাকা পাওয়া গেছে। তবে করোনা আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যাওয়ায় তাকে চার্জশিটভুক্ত আসামি করা হয়নি।

শেয়ার করুন