রাজধানীতে আন্তজেলা বাসগুলোর প্রবেশ ঠেকাতে ঢাকার চার আশপাশে আরও চারটি বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। আজ বুধবার ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রগণ বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির কাছে কারিগরি কমিটি কর্তৃক আন্তজেলা বাস টার্মিনাল ও ডিপোর জন্য প্রস্তাবিত ১০টি স্থানের মধ্যে একটি ‘বাটুলিয়া’ এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের কাছে একথা বলেন।
ঢাকার দুই মেয়র একমত হয়ে বলেছেন, রাজধানীর গণপরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং রাজধানীতে যাতে আন্তজেলা বাসগুলো প্রবেশ প্রতিরোধের জন্যই এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। রাজধানীতে শুধুমাত্র সিটি সার্ভিসগুলো চলাচল করবে।
ঢাকার দুই মেয়র বলেছেন, গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল সিটি টার্মিনাল হিসেবে পরিচালিত হবে। সিটি বাসগুলো এসব জায়গা টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারছে না। আন্তজেলা বাস এগুলো টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহার করছে। এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে তারা উদ্যোগ নিয়েছেন।
এ সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, আন্তজেলা বাস টার্মিনাল হিসেবে ঢাকা মহানগরীর শহরতলির চারটি স্থানকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে বাস রুট রেশনালাইজেশনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আমরা পুরো গণপরিবহন ব্যবস্থাকে এটি শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে চাই। এরইমধ্যে কাজ আরম্ভ হয়েছে। সে প্রেক্ষিতেই গত সভাতে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আন্তজেলা বাস টার্মিনালের জন্য যে ১০টি স্থানকে নির্বাচন করা হয়েছে, সেখান থেকে তালিকা ছোট করে আনা হয়েছে। আমরা মনে করেছি যে, সার্বিকভাবে ৪টি গ্রহণযোগ্য হতে পারে। সে প্রেক্ষিতে আজকে বাটুলিয়ায় সরেজমিন পরিদর্শনে এসেছি।
সরেজমিনে পরিদর্শনের কারণ স্থানগুলোর কার্যকারিতা দেখতে চাওয়া উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাটুলিয়ার পর সাভারের হেমায়েতপুর, কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ও কাঁচপুর পরিদর্শনে যাব। এই ৪টি স্থান পরিদর্শনের পর আগামী জানুয়ারি মাসে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সভা হবে। সেখানে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সিদ্ধান্তের পর মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। আমাদের লক্ষ্য হলো ঢাকা শহরের উপর থেকে চাপ কমিয়ে আনা।
বহির্বিশ্বে আন্তজেলা গণপরিবহন শহরের মধ্যে ঢুকে না উল্লেখ করে ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, ঢাকা শহরের মধ্যে যে বাস টার্মিনালগুলো আছে, যেমন- মহাখালী, সায়দাবাদ, গাবতলী আন্তজেলা বাসগুলো সেসব টার্মিনাল ব্যবহার করে থাকে। সিটি বাস টার্মিনাল কার্যকর নেই। তার মানে যত্রতত্রভাবে সিটি বাসগুলো রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থেকে যানজট সৃষ্টি করে এবং একটি বিশৃংখল পরিবেশ সৃষ্টি করে। সবকিছু মিলিয়ে সামগ্রিকভাবে গণপরিবহনে একটি শৃঙ্খলা নিয়ে আসতে এই কার্যক্রম। আমাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে, যাতে করে আগামী বছরের মধ্যে একটি সুনির্দিষ্ট রূপরেখার আওতায় আসা যায়।
এদিকে বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি বাস্তবায়নের ফলে বাইরের বাসগুলো ঢাকা শহরের মধ্যে ঢুকতে পারবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, শহরের বাস শহরের ভেতরে চলবে এবং শহরের বাইরের বাস অর্থাৎ আন্তজেলা বাস একটি নির্দিষ্ট জায়গায় এসে থেমে যাবে। বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি বাস্তবায়নের মাধ্যমে শহরের বাইরের বাস ঢাকার মধ্যে ঢুকতে পারবে না। কারণ এখন শহরের বাসের সাথে আন্তজেলা বাসের প্রতিযোগিতা হচ্ছে। এতে কিন্তু আমাদের ট্রাফিক ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে এবং ট্রাফিক জামের চেষ্টা হচ্ছে। সুতরাং শহরের বাসকে শহরের ভেতরে চলতে হবে এবং একটি নির্দিষ্ট রুটের মধ্যে চলতে হবে।
আতিকুল ইসলাম বলেন, গত সভাতে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ঢাকায় ঘাটারচর হতে মতিঝিল পর্যন্ত, যেখানে ১৬০টির বেশী বাস ও ২৯ জনের বেশি মালিকের বাস চলাচল করে। কিন্তু সেটিকে আমরা একটি কম্পানির মধ্যে নিয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছি।’
বাস মালিক ও শ্রমিকরাও এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবাই চাই একটি শৃংখলা আনতে। তাই শৃঙ্খলা আনার জন্য শহরের বাস শহরের ফ্র্যাঞ্চাইজ রুট দিয়ে চলবে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে পয়লা এপ্রিল থেকে ঘাটারচর-মতিঝিল রুটে প্রথম (বাস রুট ফ্রেঞ্চাইজি) শুরু হবে।
পরিদর্শনকালে অন্যান্যের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বিএম আমিন উল্লাহ নূরী, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা সেলিম রেজা, ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটি এর নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রেজাউর রহমানসহ দুই সিটি কর্পোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বাস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।