বিচারাধীন মামলা ও দণ্ডিত কারাবন্দির সব তথ্য রেজিস্টারে সংরক্ষণ করাসহ ৮ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে কারা মহাপরিদর্শক, জেলার ও ডেপুটি জেলারকে আদেশ দেয়া হয়েছে।
আদেশটির পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি রোববার (২৭ ডিসেম্বর) প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
আসামি মিজানুর রহমান কনকের ওকালতনামায় ডেপুটি জেলারের স্বাক্ষর না থাকা নিয়ে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ ১৯ অক্টোবর এ আদেশ দেন। আদেশে কারাবন্দির সব তথ্য সংরক্ষণসহ ৮ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়। এ রায় বাস্তবায়নের প্রতিবেদন সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর প্রতি তিন মাস পর পর দাখিল করতে হবে।
এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, র্যাবের মহাপরিচালক, আইজি প্রিজন, সব জেলার ও ডেপুটি জেলারের কাছে আদেশটি পাঠাতে বলা হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন (মানিক) ও সহকারী অ্যাটর্নি মাহজাবিন রাব্বানী দীপা। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। ডেপুটি জেলারের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মোহাম্মদ আলী আজম। আসামিপক্ষে আইনজীবী ছিলেন রুহুল কুদ্দুস কাজল ও শামীমা আক্তার।
হাইকোর্টের নির্দেশনাগুলো হল-
১. বিচারাধীন মামলায় বা দণ্ডিত কারাবন্দিদের নাম, ঠিকানা, মামলার নম্বর, মামলার ধারা, কোন আদালতে মামলা বিচারাধীন বা কোন আদালতের রায়ে কী দণ্ড হয়েছে, কারা মহাপরিদর্শক, জেলার, সহকারী জেলারকে সেসব তথ্য রেজিস্টারে রাখতে হবে।
২. কারা কর্তৃপক্ষকে দণ্ডিত বা বিচারাধীন মামলায় কারাবন্দির কারাগারে আসা ও বের হওয়ার তারিখ রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৩. যথাযথভাবে যাচাইয়ের পর নিশ্চিত হয়ে কারা কর্তৃপক্ষ বা কারা কর্মকর্তাকে দণ্ডিত ব্যক্তি বা বিচারাধীন মামলায় কারাবন্দির ওকালতনামায় সই করতে হবে বা সিল দিতে হবে।
৪. সংশ্লিষ্ট কারা কর্তৃপক্ষ অথবা কারা কর্মকর্তা ওকালতনামার যেখানে সই ও সিল দেবেন তার পাশে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার পুরো নাম, কারাগারের ল্যান্ডফোন ও মোবাইল ফোন নম্বর উলেখ করতে হবে।
৫. কোনো অশোভন, অযাচিত পরিবেশ-পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয় সেজন্য যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি কারাগার ও কারা প্রাঙ্গণের শান্তি, নিরাপত্তা বজায় রাখতে কারা কর্তৃপক্ষকে সব সময় সতর্ক এবং সজাগ থাকতে হবে।
৬. কারাগারের ভেতরে সব ধরনের অবৈধ মাদকদ্রব্যের সরবরাহ বন্ধে কারা কর্তৃপক্ষকে যথাযথ পদক্ষেপ ও ব্যবস্থা নিতে হবে।
৭. দর্শনার্থীদের কঠোরভাবে তল্লাশি করতে হবে এবং দর্শনার্থী কারও কাছে কোনো মাদকদ্রব্য, অবৈধ কিছু পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ও যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে।
৮. কারা আইন-১৮৯৪, কারাবন্দি আইন-১৯০০ এবং বাংলাদেশ জেলকোডসহ সংশ্লিষ্ট সব আইনের বিধান কারা কর্তৃপক্ষকে কঠোরভাবে প্রতিপালন করতে হবে।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, এনআরবি ব্যাংকের ১১ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির অভিযোগে জিওলোজাইজ সার্ভেয়ার কর্পোরেশনের প্রোপ্রাইটর অ্যান্ড চিফ সার্ভেয়ার মিজানুর রহমান কনকের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে দুদক। মামলায় ১৫ জুন হাইকোর্ট থেকে তিনি জামিন পান। করোনার কারণে সে সময় এফিডেভিট শাখা বন্ধ ছিল। আদালত বলেছিলেন, নিয়মিত আদালত চালু হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে ওকালতনামা এফিডেভিট করে দাখিল করতে।
পরে নিয়মিত আদালত চালু হলে এফিডেভিট শাখা দেখতে পায় তার একটি মামলার ওকালতনামায় জেলারের সই নেই। বিষয়টি তখন আদালতের নজরে আনে এফিডেভিট শাখা। তখন সইসহ ওকালতনামা পরবর্তী দিনে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়। এরপর আসামিপক্ষ ডেপুটি জেলারের সইসহ ওকালতনামা দাখিল করে। বিষয়টি দেখে আদালতের সন্দেহ হয়- আসামি জামিন নিয়ে বাইরে আছেন, তিনি কীভাবে জেলখানা থেকে ডেপুটি জেলারের সই পেলেন। তখন আদালত ডেপুটি জেলার খন্দকার মো. আল মামুনকে তলব করে ১১ অক্টোবর হাজির হতে বলেন। আদালতের আদেশে হাজির হন ডেপুটি জেলার। জবাব দাখিলের জন্য আইনজীবীর মাধ্যমে সময় প্রার্থনা করেন তিনি।
পরে আদালত ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত সময় দেন। ১৮ অক্টোবর তিনি হাজির হয়ে ‘ব্যাখ্যা দিয়ে’ ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। আদালতকে তার আইনজীবী জানান, জেলখানায় একসঙ্গে তিন-চারশ’ ওকালতনামায় সই করতে হয়। তখন বিষয়টি দেখে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এ সময় আদালত মিজানুর রহমান কনককে চার সপ্তাহের মধ্যে পুনরায় বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেন। পরে আদালত ১৯ অক্টোবর এ বিষয়ে আদেশ দেন।