ফিরে দেখা ২০২০: ঢালিউড ও টালিউডের আলোচিত যেসব ঘটনা

বিনোদন ডেস্ক

২০২০ সালে ঢালিউডে মুক্তি পাওয়া ছবি
২০২০ সালে ঢালিউডে মুক্তি পাওয়া ছবি। ফাইল ছবি

দুয়ারে নতুন বছর। বিভিন্ন কারণে ২০২০ সাল মহাকালের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি, মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া, মৃত্যুর মিছিল, ভ্যাকসিনের প্রত্যাশা ইত্যাদি এ বছর ছিল আলোচিত বিষয়। বিশে বিষময় এমন একটি বছরে করোনা ভাইরাস ছাড়াও বেশ কিছু ঘটনা আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে বছরের বিভিন্ন সময়। আমাদের অর্জন, হতাশা, বেদনা, প্রাপ্তি, প্রত্যাশা পূরণের সেই ঘটনাগুলো আরেকবার দেখে নিতেই এই আয়োজন। এই পর্বে থাকছে ঢালিউড ও টালিউডের আলোচিত কিছু বিষয়। গ্রন্থনা ও সম্পাদনা করেছেন ফয়জুল আল আমীন 

ঢালিউড

universel cardiac hospital
ববিতা, জয়া, শাকিব, শাবনূর, পরীমনি ও বুবলী
ববিতা, জয়া, শাকিব, শাবনূর, পরীমনি ও বুবলী। ছবি: সংগৃহীত

২০২০ সাল ছিল বাংলা সিনেমার জন্য ভয়ংকর এক বছর। করোনা ভাইরাস মহামারি শুরুর আগে ২০২০ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত মাত্র পাঁচটি বাংলা সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল। ছবিগুলো হলো- ‘জয় নগরের জমিদার’, ‘গণ্ডি’, ‘বীর’, ‘হলুদবনি’ ও ‘শাহেনশাহ’। এর মধ্যে শাকিবের সিনেমা কিছুটা ব্যবসা করতে পেরেছে। এরপরেই শুরু হয় করোনা মহামারির প্রকোপ, থমকে যায় বিশ্ব। দীর্ঘ আট মাস বন্ধ থাকার পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে ১৬ অক্টোবর থেকে খুলেছে সিনেমা হল। ‘সাহসী হিরো আলম’ নামের মানহীন সিনেমার মাধ্যমে হল খুললেও, মুখ থুবড়ে পড়ে ছবিটি। পরে গত ২৩ অক্টোবর ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ মুক্তির মাধ্যমে খুলেছে মাল্টিপ্লেক্স। এ ছবিটিও ব্যবসার দিক থেকে খুব বেশি সুবিধা করতে পারেনি। তবে কিছু সংখ্যক দর্শকের প্রশংসা কুড়িয়েছে।

তানভীর মোকাম্মেল পরিচালিত ‘রূপসা নদীর বাঁকে’ ছবিটি ১১ ডিসেম্বর মুক্তি পায়। এতে অভিনয় করেছেন জাহিদ হোসেন শোভন, খায়রুল আলম সবুজ, নাজিবা বাশার, রামেন্দু মজুমদার, চিত্রলেখা গুহ ও ঝুনা চৌধুরীসহ অনেকেই।

একই দিনে চয়নিকা চৌধুরী পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘বিশ্বসুন্দরী’ মুক্তি পায়। দেশের ২৫টি সিনেমা হলে চলে সিয়াম, পরীমনি, চম্পা, ফজলুর রহমান বাবু ও আলমগীর অভিনীত ছবিটি। কিন্তু, শুধুমাত্র বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্স ছাড়া কোথাও সিনেমাটি নিয়ে তেমন আলোচনা শোনা যায়নি।

প্রথম ইংরেজি ভাষায় নির্মিত ছবি ‘দ্য গ্রেভ’
প্রথম ইংরেজি ভাষায় নির্মিত ছবি ‘দ্য গ্রেভ’। ফাইল ছবি

২৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের সিলভার স্ক্রিনে মুক্তি পেয়েছে দেশের প্রথম ইংরেজি ভাষায় নির্মিত ছবি ‘দ্য গ্রেভ’। বাংলায় ছবিটির নাম ‘গোর’। সরকারি অনুদানে নির্মিত এই ছবির পরিচালক গাজী রাকায়েত। দুই ভাষার একই ছবিতেই অভিনয় করেছেন মৌসুমী হামিদ, দিলারা জামান, মামুনুর রশীদ, সুষমা সরকার ও এ কে আজাদ সেতু।

গত বছর মোট ৪১টি বাংলা ছবি মুক্তি পেয়েছিল। এবার সেই সংখ্যা ১২টিতে এসে নেমেছে। কমতে কমতে বর্তমানে দেশে ৬০ থেকে ৭০টি সিনেমা হল কোনোরকমে চালু আছে। তবে উৎসবগুলোতে এখনো ৯০টির কাছাকাছি সিনেমা হলে ছবি প্রদর্শিত হয়।  দেশের বন্ধ হয়ে যাওয়া সিনেমা হল পুনরায় চালু করা, পুরনো হল সংস্কার এবং নতুন হল নির্মাণের জন্য এক হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অনেকগুলো বন্ধ সিনেমা হল চালু হবে। চালু সিনেমা হলগুলো সংস্কার ও আধুনিক করা হবে। চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেকেই বলেছেন, শুধু সিনেমা হল সংস্কার হলে কি চলচ্চিত্র শিল্প ঘুরে দাঁড়াবে? ভালো ভালো সিনেমা নির্মাণের পাশাপাশি সমগ্র চলচ্চিত্র নিয়ে ভাবা জরুরি। ২০২০ সাল বাংলা সিনেমার জন্য ভয়ংকর এক বছর।

আলোচিত ১০

ববিতা উইকিপিডিয়ায় সাত ভাষায়: আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাংলাদেশী অভিনেত্রী ববিতা প্রায় ৩০০টির বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এ বছর তিনি ভিন্ন এক রেকর্ড তৈরি করছেন। মুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ায় সাতটি ভাষায় তার তথ্য উঠে এসেছে। এ দেশের বেশিরভাগ তারকার ক্ষেত্রে এক বা দুই ভাষাতেই তথ্য দেখা যায়। কিন্তু ববিতার ক্ষেত্রে যুক্ত হয়েছে বাংলা, ইংরেজি, আরবি, কোরীয়, তামিল, ওড়ীয় ও পাঞ্জাবি ভাষা।

শাকিব খানের তিন ছবি: শাকিব খান অভিনীত বেশি এবং আলোচিত ছবি চলতি বছর মুক্তি পেয়েছে। ১৪ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পেয়েছিল তার অভিনীত ও প্রযোজিত ছবি ‘বীর’। পরিচালক কাজী হায়াতের ৫০তম ছবি এটি। ছবির নায়িকা হিসেবে ছিলেন শবনম বুবলী। ৬ মার্চ মুক্তি পায় শামীম আহমেদ রনি পরিচালিত ছবি ‘শাহেনশাহ’। এ ছাড়া, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আই থিয়েটারে ‘নবাব এলএলবি’ নামের ছবিটি ১৬ ডিসেম্বর মুক্তি পায়। বাংলাদেশে প্রথম কোনো নায়কের ছবি শুধু অনলাইনে মুক্তি পেয়েছে।

জয়া আহসানের হাতে আন্তর্জাতিক পুরস্কার: মাদ্রিদ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব-২০২০ এ বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ নারী অভিনয়শিল্পী বিভাগে পুরস্কার জিতেছেন জয়া আহসান। ভারতীয় পরিচালক অতনু ঘোষের ‘রবিবার’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য এ পুরস্কার অর্জন করেন তিনি।

চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে তার স্বামী অনিক মাহমুদ
অনিক মাহমুদ হৃদয়ের সঙ্গে জনপ্রিয় নায়িকা শাবনূর। ছবি: সংগৃহীত

শাবনূরের বিচ্ছেদ: সাত বছর আগে অনিক মাহমুদ হৃদয়ের সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন জনপ্রিয় নায়িকা শাবনূর। চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ করেন এই অভিনেত্রী।

ফোর্বসের ১০০ ডিজিটাল তারকায় পরীমনি: গত ৭ ডিসেম্বর এশিয়ার ১০০ ডিজিটাল তারকার তালিকা প্রকাশ করে আমেরিকার বিজনেস ম্যাগাজিন ফোর্বস। তালিকায় আছেন বাংলাদেশী অভিনেত্রী পরীমনি। এ ছাড়া, এবার সোশ্যাল বেকারস ডটকম প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের শীর্ষ ডিজিটাল তারকাদের নাম। সেই তালিকার প্রথমে আছেন এই অভিনেত্রী।

স্টার সিনেপ্লেক্স বন্ধের খবর: সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে জানা যায়, বসুন্ধরা সিটিতে থাকছে না দেশের প্রথম মাল্টিপ্লেক্স স্টার সিনেপ্লেক্স। পরে বসুন্ধরা ও স্টার সিনেপ্লেক্সের মধ্যে আলোচনায় সমাধান হয়ে সেখানেই থাকে। ২০০৪ সালে পথচলা শুরু করেছিল স্টার সিনেপ্লেক্স।

প্রযোজক সমিতি বাতিল: প্রযোজক সমিতির এক সদস্যের অভিযোগের ভিত্তিতে নির্বাচনে অনিয়মের কারণে ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির ২০১৯-২০২১ মেয়াদের কার্যনির্বাহী কমিটি বাতিল করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

নুসরাত ফারিয়ার বাগদান: চিত্রনায়িকা মডেল নুসরাত ফারিয়া ও রনি রিয়াদ রশিদ আংটি বদল করেছেন চলতি বছর। দুই পরিবারের মতামতে মার্চ মাসে তাদের আংটি বদল হয়। রনি একটি টেলিকমিউনিকেশন প্রতিষ্ঠানের সিইও হিসেবে কর্মরত।

কোথাও নেই বুবলী: বুবলী অভিনীত ‘বীর’ ছবিটি চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পায়। এরপর তার আর কোনো খবর নেই, কোথাও দেখা যায়নি তাকে। তার অভিনয় ক্যারিয়ারের এগারোটি ছবির দশটিতেই আছেন শাকিব খান।

যাদের হারিয়েছি

২০২০ সালে বাংলাদেশ হারিয়েছে বেশ কয়েকজন জনপ্রিয় অভিনেতা, গায়ক ও পরিচালক। জেনে নিন তাদের সম্পর্কে।

আলাউদ্দিন আলী
কিংবদন্তি সুরকার আলাউদ্দিন আলী। ফাইল ছবি

আলাউদ্দিন আলী: একাধিক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত বরেণ্য সংগীতব্যক্তিত্ব আলাউদ্দিন আলী মারা যান গত ৯ আগস্ট। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের প্রদাহ ও রক্তে সংক্রমণ জনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। পাশাপাশি তার ক্যানসারও ছিল।

আলী যাকের: ক্যানসারে ভুগে এবং শেষ বেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বিশিষ্ট অভিনেতা ও নাট্য নির্দেশক আলী যাকের। গত ২৭ নভেম্বর ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

সাদেক বাচ্চু: ১৪ সেপ্টেম্বর করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান নন্দিত অভিনেতা সাদেক বাচ্চু। এদিন দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

এন্ড্রু কিশোর
এন্ড্রু কিশোর। ফাইল ছবি

এন্ড্রু কিশোর: এ বছরই ক্যানসারে ভুগে না ফেরার দেশে চলে গেছেন বাংলা চলচ্চিত্রের ‘প্লেব্যাক সম্রাট’ এন্ড্রু কিশোর। গত ৬ জুলাই রাজশাহীর মহিষবাথান এলাকায় তার বোন ডা. শিখা বিশ্বাসের বাড়িতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

মতিউর রহমান পানু: বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি আয় করা সিনেমা ‘বেদের মেয়ে জোছনা’র প্রযোজক, পরিচালক মতিউর রহমান পানু মারা যান ২৪ মার্চ রাত সাড়ে ১১টার দিকে। তিনি রাজধানীর উত্তরায় নিজ বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

আজাদ রহমান: গত ১৬ মে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী সুরকার, সংগীত পরিচালক ও কণ্ঠশিল্পী আজাদ রহমান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মা গো’, ‘ভালোবাসার মূল্য কত’, ‘ও চোখে চোখ পড়েছে যখনই’, ‘মনেরও রঙে রাঙাব’, ‘ডোরা কাটা দাগ দেখে বাঘ চেনা যায়’সহ বিখ্যাত সব গানের সুরকার তিনি।

অভিনেতা আব্দুল কাদের
অভিনেতা আব্দুল কাদের। ফাইল ছবি

আবদুল কাদের: ২০২০ সালে বিনোদন দুনিয়ায় শেষ ধাক্কাটা লাগে ‘বদি’ খ্যাত অভিনেতা আবদুল কাদেরের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। ২৬ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি ক্যানসারে ভুগছিলেন। পাশাপাশি করোনায়ও আক্রান্ত হয়েছিলেন।

মিনু মমতাজ: বহুদিন ধরে কিডনি এবং চোখের সমস্যায় ভুগছিলেন অভিনেত্রী মিনু মমতাজ। অবশেষে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান গত ২২ সেপ্টেম্বর দুপুর ১টায়। রাজধানীর গ্রীন লাইফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। বর্ষীয়ান এই অভিনেত্রী করোনায় আক্রান্ত ছিলেন।

সেলিম আশরাফ: দেশের জনপ্রিয় সুরকার সেলিম আশরাফ মারা যান গত ২ মার্চ। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি শ্বাসকষ্ট ও কিডনির জটিলতায় ভুগছিলেন। ‘যে মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছে লক্ষ মুক্তি সেনা’সহ একাধিক জনপ্রিয় গানের সুরকার তিনি।

হাসান ইমাম: টেলিভিশন নৃত্যশিল্পী সংস্থার সাবেক সভাপতি, দেশের সুপরিচিত নৃত্যশিল্পী এবং নৃত্য পরিচালক হাসান ইমাম মারা যান গত ১৫ মে সন্ধ্যায়।

অভিনেতা কে এস ফিরোজ
অভিনেতা কে এস ফিরোজ। ফাইল ছবি

কে এস ফিরোজ: গত ৯ সেপ্টেম্বর ভোর ৬টা ২০ মিনিটে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মারা যান নাট্য ও মঞ্চ অভিনেতা কে এস ফিরোজ। করোনায় আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়।

নাসির উদ্দিন দিলু: গত ৩ নভেম্বর সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন দেশের নামজাদা চলচ্চিত্র প্রযোজক ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সাবেক সদস্য নাসির উদ্দিন দিলু।

সেলিম খান: টানা ছয় দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ১০ ডিসেম্বর সকাল ৬টায় পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন দেশের ঐতিহ্যবাহী ও বৃহৎ অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সংগীতার স্বত্বাধিকারী সেলিম খান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৫ বছর।

আমিনুল ইসলাম মিন্টু: ৮ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রসম্পাদক আমিনুল ইসলাম মিন্টু মারা গেছেন ১৮ ডিসেম্বর দিবগত রাতে। তিনিও করোনায় আক্রান্ত ছিলেন বলে জানিয়েছিলেন তার পরিবার।

টালিউড

টালিউড তারকা
টালিউড তারকা। ফাইল ছবি

`টালিউড’ নামটি হলিউড থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে রাখা হয়। এর নেপথ্যে আছেন আমেরিকান সিনেমাটোগ্রাফার উইলফোর্ড ই. ডেমিং যিনি ভারতে সবাক চলচ্চিত্র নির্মাণের সাথে জড়িত। ইন্ডাস্ট্রিটি যেহেতু টালিগঞ্জে অবস্থিত তাই হলিউডের সাথে মিল রেখে এর নাম `টালিউড’ বা `টলিউড’ রাখা স্বাভাবিকই ছিল। সেই সময়টিতে টালিগঞ্জ ছিল ভারতের অন্যতম সিনেমা কেন্দ্র, যেমনটি ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হলিউড।

পারিশ্রমিক জটে টালিউড

বড়-ছোট দুই পর্দাতেই পাওনা বাকি থাকার অজস্র উদাহরণ। এই পরিস্থিতিতে পেশাদারিত্ব বজায় রেখে কীভাবে কাজ করেন শিল্পীরা? আর এ বছর এপ্রিলে টালিউডে পেমেন্টের সমস্যা নিয়ে অনেক কিছু ঘটে গেল। সেইসময়ে মুক্তি পাওয়া ‘বসু পরিবার’ বক্স অফিসে ভালই ব্যবসা করছে। কিন্তু ছবি তৈরির নেপথ্যে অনেক কাহিনি রয়েছে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা সেনের মতো অভিনেতাদের চেক বাউন্স করেছে। দীর্ঘ দিন শুটিং বন্ধও ছিল। পরিচালক সুমন ঘোষের অভিযোগের তীর ছিল প্রযোজক রাকেশ সিংহের দিকে। এ সময় একের পর এক শিল্পীর চেক বাউন্স হচ্ছে। পাওনা মেটানো হয়নি বলে শুটিংয়ের সময়ে জেনারেটর বন্ধের উপক্রম হয়েছিল। একপর্যায়ে পাওনা আদায়ের জন্য ধারাবাহিকের শুটিংও বন্ধ হয়েছে। ছোট পর্দায় একাধিক ধারাবাহিক নামিয়েছিলেন প্রযোজক রানা সরকার। কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে তিনি সব সিরিয়াল অন্য প্রযোজনা সংস্থার হাতে তুলে দিতে বাধ্য হয়েছেন।

যাদের হারিয়েছি

২০২০ সালে টালিউড হারিয়েছে একাধিক জনপ্রিয় তারকা। জেনে নিন হারানো তারকাদের সম্পর্কে।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ফাইল ছবি

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়: ১৫ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে অভিনেতা, আবৃত্তিকার, কবি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। প্রথমত তিনি ছিলেন অভিনেতা। কবিতাচর্চা, রবীন্দ্রপাঠ, সম্পাদনা, নাট্যসংগঠন তার বিপুল বৈচিত্র্যের একেকটি দিক। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সবকিছু নিয়েই অনন্য। তিনি যে সত্যজিৎ রায়ের ‘অপু’।

১৯৩৫-এর ১৯ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলায় জন্ম সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের। কলেজের ফাইনাল ইয়ারে হঠাৎ একদিন মঞ্চে শিশির ভাদুড়ীর নাটক দেখার সুযোগ হয় তাঁর। সেদিনই জীবনের মোড় ঘুরে যায় তাঁর। তিনি পুরোদস্তুর নাটকে মনোনিবেশ করেন।

সৌমিত্রই সত্যজিতের সৃষ্টি ‘ফেলুদা’কে বড় পর্দায় জীবন্ত করেছিলেন। ফেলুদা পরে বহুবার হয়েছে ছোট ও বড় পর্দায়। কিন্তু যে কোনো বাঙালি একবাক্যে স্বীকার করবেন যে সৌমিত্রর মতো ফেলুদা আর কেউ নন। সৌমিত্রর উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে ‘অশনিসংকেত’, ‘সোনার কেল্লা’, ‘দেবদাস’, ‘নৌকাডুবি’, ‘গণদেবতা’, ‘হীরক রাজার দেশে’, ‘আতঙ্ক’, ‘গণশত্রু’, ‘সাত পাকে বাঁধা’, ‘ক্ষুধিত পাষাণ’, ‘তিন কন্যা’, ‘আগুন’, ‘শাস্তি’, ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’প্রভৃতি। অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন সৌমিত্র। ২০০৪ সালে তাকে পদ্মভূষণে সম্মানিত করা হয়। এ ছাড়া জাতীয় পুরস্কার, দাদাসাহেব ফালকেসহ অনেক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। অভিনয়ের পাশাপাশি আবৃত্তি, রবীন্দ্রপাঠ, সম্পাদনা, নাট্যসংগঠন করেছেন তিনি। ১৯৬০ সালে সৌমিত্র বিয়ে করেন দীপা চট্টোপাধ্যায়কে। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ে পৌলমী চট্টোপাধ্যায় সংস্কৃতি চর্চা করেন।

অভিনেতা তাপস পাল
অভিনেতা তাপস পাল। ফাইল ছবি

তাপস পাল: ভারতীয় বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা তাপস পাল ১৮ ফেব্রুয়ারি মুম্বাইয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন । ১৯৫৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর হুগলির চন্দননগরে জন্মেছিলেন তাপস পাল। ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি তার প্রবল আগ্রহ ছিল। পরিচালক তরুণ মজুমদারের হাত ধরে মাত্র ২২ বছর বয়সে বাংলা ছবির দুনিয়ায় পা রাখেন তাপস পাল। প্রথম ছবি ‘দাদার কীর্তির’ সঙ্গেই দর্শক-সমালোচকদের মন জিতে নেন তিনি। এর পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাপস পালকে। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবিগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘সাহেব’, ‘অনুরাগের ছোঁয়া’, ‘পারাবত প্রিয়া’, ‘উত্তরা’, ‘ভালোবাসা ভালোবসা’।

১৯৮১ সালে ‘সাহেব’ ছবিতে দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পান তাপস পাল। বাংলার পাশাপাশি বেশ কিছু হিন্দি ছবিতেও তিনি অভিনয় করেছেন। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কৃষ্ণনগর থেকে তৃণমূলের টিকিটে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন তাপস পাল। ২০১৯ পর্যন্ত কৃষ্ণনগরের সাংসদ ছিলেন তিনি। ২০১৬ সালে রোজভ্যালি চিটফাণ্ড যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হন তিনি। ১৩ মাস সিবিআই হেফাজতে থাকার পর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জামিনে মুক্তি পান তিনি।

শেয়ার করুন