দুয়ারে নতুন বছর। বিভিন্ন কারণে ২০২০ সাল মহাকালের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি, মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া, মৃত্যুর মিছিল, ভ্যাকসিনের প্রত্যাশা ইত্যাদি এ বছর ছিল আলোচিত বিষয়। বিশে বিষময় এমন একটি বছরে করোনা ভাইরাস ছাড়াও বেশ কিছু ঘটনা আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে বছরের বিভিন্ন সময়। আমাদের অর্জন, হতাশা, বেদনা, প্রাপ্তি, প্রত্যাশা পূরণের সেই ঘটনাগুলো আরেকবার দেখে নিতেই এই আয়োজন। এই পর্বে থাকছে হলিউড ও বলিউডের আলোচিত কিছু বিষয়। গ্রন্থনা ও সম্পাদনা করেছেন ফয়জুল আল আমীন
হলিউড
হলিউডে ২০২০ সাল ছিল ছবি মুক্তির খরা। কী কঠিন বাস্তবতা! হলিউডে যেগুলোকে টার্গেট করা হয়েছিল ২০২০ সালের আকর্ষণীয় ছবি হিসেবে, সেগুলোর একটিও মুক্তি পায়নি।
স্কারলেট জোহানসনের ‘ব্ল্যাক উইডো’, মাইকেল রডরিগেজ ও চার্লিজ থেরনের ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস নাইন’, টম ক্রুজের ‘টপ গান : ম্যাভেরিক’, দ্য রকখ্যাত ডোয়েইন জনসনের ‘ব্ল্যাক অ্যাডাম’, ড্যানিয়েল ক্রেইগের ‘নো টাইম টু ডাই’ ও গাল গাতোদের ‘ডেথ অন দ্য নাইল’সহ অধিকাংশ ছবিই মুক্তির তারিখ পিছিয়ে অপেক্ষায় আছে পরের বছরের জন্য। বলা চলে, কোভিড ১৯-এর কারণে হলিউডে এ বছর ছিল ছবি মুক্তির খরা।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে থিয়েটার ও নেটফ্লিক্স মিলিয়ে যে ছবিগুলো মুক্তি দেয়া হয়েছে, সেগুলোর দর্শকভাগ্যও যে খুব ভালো ছিল- তা নয়। তবে ধারণার বাইরেও কয়েকটি ছবি ভালো ব্যবসা করেছে। এ বছর হলিউডে সবচেয়ে ভালো ব্যবসা করা ছবিটির নাম ক্রিস্টোফার নোলান পরিচালিত ও এলিজাবেথ দেবিকি অভিনীত ‘টেনেট’। এটি আয় করেছে প্রায় ৩৬২ মিলিয়ন ডলার। প্রায় ২০২ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে ‘বার্ডস অব প্রে’।
ক্যাথি ইয়ান পরিচালিত এ ছবিতে অভিনয় করেছেন মেরি এলিজাবেথ ও উইনস্টিড প্রমুখ। পরের অবস্থানে রয়েছে লেই হোয়ানেল পরিচালিত এলিজাবেথ মস ও এলডিস হজ অভিনীত ‘দ্য ইনভিজিবল ম্যান’ ছবিটি। প্রায় ১৪১ মিলিয়ন ডলার ব্যবসা করেছে ছবিটি। একেবারে খারাপ যায়নি নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়া অ্যারন সরকিন পরিচালিত সাচা ব্যারন ও ইয়াহিয়া আবদুল মতিন অভিনীত ‘দ্য ট্রায়াল অব শিকাগো সেভেন’ ছবিটি।
এটি আয় করেছে প্রায় ১০৮ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া যোসেফ ডেকার পরিচালিত ও এলিজাবেথ মস অভিনীত শার্লি, জেসন ওহিনার পরিচালিত ও সাচা ব্যারন অভিনীত বোরাট সাবসিকুয়েন্ট মুভিফিল্মও মোটামুটি ব্যবসা করেছে।
ইসরায়েলি সুন্দরী হলিউড অভিনেত্রী গাল গাতোদের এ বছরের উল্লেখযোগ্য আকর্ষণ ছিল ‘ওয়ান্ডার উইম্যান ১৯৮৪’। কিন্তু ছবিটি বারবার পিছিয়ে যুক্তরাজ্যে মুক্তি পেয়েছে বছর শেষে। এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত রেসপন্স আশানুরূপ। ধারণা করা হচ্ছে, আমেরিকায় মুক্তি পাওয়ার পর ছবিটি ব্যবসায়িকভাবে দারুণ সাফল্য বয়ে আনবে।
এ বছর হলিউডে সবচেয়ে আলোচিত তারকার নাম কিংবদন্তিতুল্য অভিনেতা টম ক্রুজ। তার অভিনীত ছবি মুক্তি না পেলেও ‘মিশন ইম্পসিবল সেভেন’ ছবির শুটিং নিয়ে নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছেন এ তারকা। বছর শেষেও আলোচনায় ছিলেন কোভিড-১৯ সতর্কতা বিষয়ে। স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে দুই কর্মীকে গালাগাল করেছেন শুটিং স্পটে। নেটদুনিয়ায় তার অডিও ভাইরাল হয়েছে।
এ বছর একইভাবে ছবি মুক্তি না পেলেও আলোচনায় ছিলেন ডোয়েইন জনসনও। তার অভিনীত কালো মানুষদের জীবনের জয়গান নিয়ে নির্মিত ‘ব্ল্যাক অ্যাডাম’ নিয়ে বেশ আশাবাদী ছিলেন তিনি। হলিউডের দর্শকও মুখিয়ে ছিলেন, কিন্তু ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে আগামী বছর। তবে করোনা আক্রান্ত হয়ে এমনকি সুস্থ হয়ে তিনি আলোচনায় এসেছেন আবারও।
২০২০ সালে হলিউড হারিয়েছে একাধিক জনপ্রিয় তারকা। জেনে নিন হারানো তারকাদের সম্পর্কে।
কার্ক ডগলাস: হলিউডের কিংবদন্তি অভিনেতা কার্ক ডগলাস গত ৬ ফেব্রুয়ারি ১০৩ বছর বয়সে মারা যান। নিউইয়র্কে জন্ম নেয়া বিংশ শতাব্দীর সফল অভিনেতাদের মধ্যে অন্যতম কার্ক ডগলাস। তিনি স্কুলজীবন থেকেই শিল্প-সংস্কৃতির বিভিন্ন অঙ্গনে কাজ করেন। তিনি তিনবার অস্কারে মনোনীত হন। হলিউডে টানা ৫০ বছর অভিনয় করেন। ডগলাস ১৯৪৬ সালে প্রথমবার অভিনয় করেন ‘দ্য স্ট্রেঞ্জ লাভ অব মার্থা আইভার্স’ ছবিতে। তবে তার অভিনয়ের প্রিয় জায়গা ছিল মঞ্চ। ক্ল্যাসিক চলচ্চিত্র ‘সাইক্লোপস’-এর মধ্য দিয়ে তিনি হয়ে উঠেন সিনেমাপ্রেমীদের প্রিয় অভিনেতা। ৫০-এর দশকে তার বেশি কয়েকটি সিনেমা সাড়া ফেলে। সেগুলো হলো- এইস ইন দ্য হোল (১৯৫১), দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য বিউটিফুল (১৯৫২), অ্যাক্ট অব লাভ (১৯৫৩), টু থাউজেন্ড লিগ আন্ডার দ্য সি (১৯৫৪), চ্যাম্পিয়ন (১৯৪৯), লাস্ট ফর লাইফ (১৯৫৬) ও স্পার্টাকাস (১৯৬০)। নব্বইটিরও বেশি টেলিভিশন নাটক ও চলচ্চিত্রের নায়ক হয়েছিলেন ডগলাস। হলিউডে ৫০ বছর অভিনয়ের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ১৯৯৬ সালে সম্মানসূচক পুরস্কার পেয়েছিলেন।
চ্যাডউইক বোসম্যান: ‘ব্ল্যাক প্যানথার’-খ্যাত জনপ্রিয় মার্কিন তারকা চ্যাডউইক বোসম্যান মৃত্যুবরণ করেছেন ২৯ আগস্ট। সাউথ ক্যারোলিনায় জন্ম নেয়া চ্যাডউইক বোসম্যান হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ২০১৩ সালে টেলিভিশনে অভিনয় শুরু করলেও খুব দ্রুতই তিনি হলিউডের নজরে আসেন। আর শিগগিরই তিনি তারকা হয়ে ওঠেন। ‘ব্ল্যাক প্যানথার’ ছাড়াও অনেক জনপ্রিয় সিনেমায় অভিনয় করেছেন বোসম্যান। এসবের মধ্যে রয়েছে ‘দা ফাইভ ব্লাডস’, ‘অ্যাভেঞ্জার্স : ইনফিনিটি ওয়ার’, ‘অ্যাভেঞ্জার্স : এন্ডগেম’, ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা : সিভিল ওয়ার’, ‘ম্যাসেজ ফ্রম দ্য কিং’, ‘গডস অব ইজিপ্ট’, ‘দ্য কিং হোল’, ‘মার্শাল’ ইত্যাদি।
কমেডিয়ান কার্ল রেইনার: হলিউডের কিংবদন্তি অভিনেতা কার্ল রেইনার চলে গেলেন ১ জুলাই। যুক্তরাষ্ট্রে বিনোদন জগতে অত্যন্ত পরিচিত ও জনপ্রিয় মুখ ছিলেন রেইনার। সাম্প্রতিক বছরে তিনি জর্জ ক্লুনি অভিনীত ‘ওসিনস ইলেভেন’ সিনেমা এবং ‘ব্রডওয়ে: বিয়ন্ড দ্য গোল্ডেন এজ’ ও ‘ইফ ইউ’র নট ইন দ্য ওবিট, ইট ব্রেকফাস্ট’ ডকুমেন্টারিতে অভিনয় করেছেন।
কার্ল রেইনারের আত্মজীবনীভিত্তিক উপন্যাস ‘এন্টার লাফিং’ নিয়ে সিনেমা ও ব্রডওয়ে শো নির্মিত হয়।
বলিউড
২০২০ সালে মহামারির সময়েও থেমে থাকেনি বলিউডের ছবি মুক্তির কার্যক্রম। জেনে নিন এ বছরের বলিউডের সেরা ৬ সিনেমার তালিকা।
দিল বেচারা: এটি সুশান্ত সিংহ রাজপুতের অভিনীত শেষ সিনেমা। ডিজনি প্লাস হটস্টারে ২৪ জুলাই মুক্তি পেয়েছিল এই ছবিটি। জন গ্রিনের বই ‘ফল্ট ইন আওয়ার স্টারস’-র গল্প ও একই নামের ইংরেজি সিনেমার অনুসরণে তৈরি হওয়া সিনেমাটি ৭.৯ রেটিং পেয়েছিল আইএমডিবিতে।
চিন্টু কা বার্থডে: বিনয় পাঠক অভিনীত এই সিনেমাটি ছিল দর্শকের জন্য একেবারে সারপ্রাইজ প্যাকেজ। সাধারণ এক মানুষ কীভাবে অসাধারণ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যান, মজার মোড়কে সেই গল্পই দেখানো হয়েছে। ইরাকে আটকে পড়া ছয় বছরের চিন্টুর এই গল্প ৭.৮ রেটিং পেয়েছে।
লুডো: দুরন্ত গল্পের মিশ্রণ ও সেরামানের অভিনয়ে দারুণভাবে প্রশংসিত হয়েছে লুডো ছবিটি। অনুরাগ বসুর এই ছবি নেটফ্লিক্সে রিলিজ হয়েছিল চলতি বছর ১৯ অক্টোবর। পঙ্কজ ত্রিপাঠী, অভিষেক বচ্চন, রাজকুমার রাও, আদিত্য রয় কাপুরের মতো অভিনেতার নিয়ে তৈরি সিনেমাটি ৭.৭ রেটিং পেয়েছে।
লুটকেস: কুণাল খেমু ও রাসিকা দুগালের অভিনীত এই কমেডি থ্রিলারটি জুলাই মাসে রিলিজ হয়েছিল ডিজনি প্লাস হটস্টারে। কুণালের অভিনীত চরিত্র নন্দু টাকা ভর্তি এক সুটকেস খুঁজে পান, তা নিয়ে আবর্তিত হয়েছে মজার এই ছবিটি। ছবিটির রেটিং ৭.৬।
তানহাজি: অজয় দেবগণের অভিনীত তানহাজি, দ্য আনসাং ওয়ারিয়র চলতি বছরের অন্যতম হিট সিনেমা এটি। মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে তানহাজি মালুসারের সাম্রাজ্য পুর্নদখলের জন্য ঐতিহাসিক লড়াই দেখানো হয়েছে যেখানে। সাইফ আলি খানও রয়েছেন সিনেমাটিতে। ৭.৬ রেটিং পেয়েছিল সিনেমাটি।
আংরেজি মিডিয়াম: এটি ইরফান খান অভিনীত শেষ ছবি। ১৩ মার্চ ডিজনি প্লাস হটস্টারে মুক্তি পেয়েছিল এই ছবি। ২০১৭ সালের হিন্দি মিডিয়াম ছবির সিকুয়েল এটি। সাধারণ এক মধ্যবিত্তের অনেক প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও মেয়েকে লন্ডনের স্কুলে পড়ানোর স্বপ্নপূরণের গল্প মজার মোড়কে দেখানো হয় যেখানে। যা ৭.৩ রেটিং পেয়েছে।
২০২০ সালে বলিউড হারিয়েছে বেশ কয়েকজন জনপ্রিয় তারকা। জেনে নিন হারানো তারকাদের সম্পর্কে।
ঋষি কাপুর: ইরফানের মৃত্যুর একদিন পরই মারা যান প্রবীণ অভিনেতা ঋষি কাপুর। প্রবল শ্বাসকষ্ট নিয়ে গত ২৯ এপ্রিল তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৩০ তারিখ তিনি মারা যান।
ওয়াজিদ খান: বিখ্যাত সাজিদ-ওয়াজিদ জুটির অন্যতম সংগীত পরিচালক ওয়াজিদ খান ১ জুন মারা যান। করোনা সংক্রমণের ফলে তার কিডনিতে প্রভাব পড়ে। মাত্র ৪২ বছর বয়সে তিনি মারা যান।
জগদীপ: নন্দিত কমেডিয়ান জগদীপ মারা যান গত ৮ জুলাই। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন ৮১ বছরের প্রবীণ অভিনেতা।
ইরফান খান: প্রতিভাবান অভিনেতা ইরফান খান ২৯ এপ্রিল মারা যান। ২০১৮ সাল থেকে তিনি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করছিলেন। তার মস্তিষ্কে নিউরো-এন্ডোক্রাইন টিউমার হয়েছিল। পরে তিনি কোলন সংক্রমণে মারা যান।
সরোজ খান: বলিউডের জনপ্রিয় নৃত্য পরিচালক সরোজ খান হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান গত ৩ জুলাই। বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি বলিউডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ৩ হাজারের বেশি গানে নৃত্য পরিচালনা করেছেন তিনি।
- আরও পড়ুন >> ফিরে দেখা ২০২০: বিশ্বে আলোচিত যেসব ঘটনা
সুশান্ত সিংহ: ১৪ জুন বাসভবন থেকে উদ্ধার হয় সুশান্ত সিংহ রাজপুতের দেহ। ৩৪ বছরের অভিনেতার মৃত্যু তদন্ত এখনও চালাচ্ছে তিন কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই, ইডি ও এনসিবি।
এস পি বালাসুব্রহ্মণ্যম: ২৫ সেপ্টেম্বর চেন্নাইয়ের একটি হাসপাতালে করোনা-সম্পর্কিত জটিলতার কারণে মারা যান জনপ্রিয় গায়ক এস পি বালাসুব্রহ্মণ্যম।