ভিডিওবার্তার বিষয়ে হেফাজতে ইসলামের প্রয়াত আমির শাহ আহমদ শফীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন আহমদ শফী বলেছেন, জুনায়েদ বাবুনগরী বারবার বলছেন, আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যু স্বাভাবিক হয়েছে। আর এর স্বপক্ষে তিনি আমার ভিডিও বার্তার মাধ্যমে দেয়া স্বীকারোক্তিকে বড় দলিল হিসেবে পেশ করছেন। অথচ আমার কাছ থেকে জোরপূর্বক এই স্বীকারোক্তি নেয়া হয়েছে ২২ সেপ্টেম্বর। আর তা প্রচার করা হয়েছে এক সপ্তাহ পর। এতেই প্রমাণিত হয়, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের বাঁচানোর হীন উদ্দেশ্যে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করার জন্য এই ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
হেফাজতে ইসলামের এই নেতা বলেন, অথচ আমি পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও বার্তায় বলেছি যে, আমাকে জিম্মি করে জোরপূর্বক ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে এই পরিত্যক্ত স্বীকারোক্তি নেয়া হয়েছিল। আমি পরিষ্কার ভাষায় বলেছি, আমার বাবার মৃত্যু স্বাভাবিক হয়নি। এরপরও বিগত ২৩ ডিসেম্বর হাটহাজারী মাদ্রাসায় হেফাজতের নামে মামা-ভাগ্নের সংবাদ সম্মেলনে বাবুনগরী আমার সেই স্বীকারোক্তিকেই বড় দলিল হিসেবে পেশ করেছেন এবং তিনি মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি-ধামকি দিয়েছেন। আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার কথা বলেছেন। আমাদের প্রশ্ন হলো, আমার পিতার মৃত্যু যদি স্বাভাবিক হয়ে থাকে তাহলে তদন্তে বাবুনগরীর এত ভয় কিসের? তার দাবি অনুযায়ী তদন্তে তিনি নির্দোষই সাব্যস্ত হবেন। এই মামলা কাউকে অমূলক হয়রানির জন্য করা হয়নি। সুতরাং এই মামলার তদন্তে কোনো ধরনের বাধার সৃষ্টি করা হলে এর সম্পূর্ণ দোষ বাবুনগরী গংদের ওপরই বর্তাবে।
হেফাজতের বর্তমান কমিটি প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, হাটহাজারী মাদরাসার দায়-দায়িত্ব ছিনিয়ে নেয়া ও আল্লামা শফীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর প্রায় মাসখানেক পর হেফাজতে ইসলামের নামে মামা-ভাগ্নের একটি অবৈধ কাউন্সিল করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে একটি অবৈধ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ বাবুনগরীর মামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী দুই বছর আগে নিজেই হেফাজত থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং জাতীয় দৈনিকে তার পদত্যাগের সেই ভিডিও এখনো বিদ্যমান আছে। তিনি হেফাজতের কোনো দায়িত্বে না থাকলেও তারই আহ্বানে অবৈধ কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠিত তথাকথিত এই কমিটিতে বাবুনগরীর পারিবারিক সদস্যই রয়েছে প্রায় ২২ জন। এছাড়া দুইটি রাজনৈতিক দলের একটির ৩৬ জন ও আরেকটির ২৪ জন সদস্যকে বিভিন্ন পদে পদায়ন করে হেফাজতকে একটি চিহ্নিত রাজনৈতিক গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন এবং দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করা হচ্ছে। আজকের এই সংবাদ সম্মেলন থেকে আমরা এই অবৈধ কমিটিকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।
এ সময় তিনি চারটি দাবি পাঠ করেন। দাবিগুলো হচ্ছে- বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে আল্লামা শাহ আহমদ শফীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করে এর সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে, তার পরিবারের পক্ষ থেকে দায়েরকৃত মামলা তদন্তপূর্বক অবিলম্বে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করতে হবে, আল্লামা শাহ আহমদ শফীর পরিবারের সদস্যদের ও তার অনুসারীদের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে। যারা মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি-ধামকি দিচ্ছে তাদেরকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে এবং আল্লামা শাহ আহমদ শফীর রেখে যাওয়া সকল দ্বীনী ও সামাজিক অঙ্গনগুলো থেকে বিরোধীদের অপসারণ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আল্লামা শফীর ছোট ছেলে আনাস বিন আহমদ শফী, সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা সলিমুল্লাহ ও মাওলানা মঈনুদ্দিন রাহী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।