ফিরে দেখা ২০২০: বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি

অর্থনীতি ডেস্ক

বাংলাদেশের অর্থনীতি
ফাইল ছবি

দুয়ারে নতুন বছর। বিভিন্ন কারণে ২০২০ সাল মহাকালের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি, মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া, মৃত্যুর মিছিল, ভ্যাকসিনের প্রত্যাশা ইত্যাদি এ বছর ছিল আলোচিত বিষয়। বিশে বিষময় এমন একটি বছরে করোনা ভাইরাস ছাড়াও বেশ কিছু ঘটনা আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে বছরের বিভিন্ন সময়। আমাদের অর্জন, হতাশা, বেদনা, প্রাপ্তি, প্রত্যাশা পূরণের সেই ঘটনাগুলো আরেকবার দেখে নিতেই এই আয়োজন। এই পর্বে থাকছে দেশের অর্থনীতির আলোচিত কিছু বিষয়। গ্রন্থনা ও সম্পাদনা করেছেন ফয়জুল আল আমীন

পদ্মা সেতু
পদ্মা সেতু। ফাইল ছবি

২০২০ সালে করোনা ভাইরাস থামিয়ে দিয়েছিল বিশ্ব অর্থনীতির চাকা। করোনার ভয়াবহ আঘাতে উন্নত ও আধুনিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রগুলোরও চরম বিপর্যস্ত অবস্থা দেখেছে বিশ্ববাসী। তবে এমন মহামারীর মাঝেও বাংলাদেশের চিত্রটা ভিন্নই ছিল। বলা যায়, করোনা সারাবিশ্বকে নাড়া দিলেও বড় দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশকে খুব বেশি দুর্বল করতে পারেনি। উল্টো এই করোনার মাঝেই নির্মাণাধীন পদ্মাসেতুর সবগুলো স্প্যান বসানোর কাজ শেষ হওয়ার মধ্য দিয়ে নিজেদের অর্থে সেতু তৈরির চূড়ান্ত ধাপ পার করে বিশ্বে ইতিবাচক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ।

universel cardiac hospital

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য পদ্মা সেতু ছিল একটি স্বপ্ন। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ কাজ ছিল এটি। ৬.১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৮.১০ মিটার প্রস্থ সেতু এখন বাংলাদেশের বড় সেতু। এই সেতু প্রমাণ করেছে বাঙালি জাতি আর পিছিয়ে নেই। নিজস্ব অর্থায়নে বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষমতা রাখে।

২০৩৫ সালে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতি

বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান। প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশ এখন যে ধরনের অর্থনৈতিক বিকাশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ দেশটি হবে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতি। ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনোমিক্স এন্ড বিজনেস রিসার্চ তাদের সর্বশেষ এক রিপোর্টে এই পূর্বাভাস দিয়েছে। ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবল ২০২১’ নামের এই রিপোর্টটি শুক্রবার প্রকাশ করা হয়। এতে মূলত সামনের বছর এবং আগামী ১৫ বছরে বিশ্বের কোন দেশের অর্থনীতি কী হারে বাড়বে, তারই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। সিইবিআর প্রতিবছর এই রিপোর্ট প্রকাশ করে।

এই রিপোর্ট অনুযায়ী আর মাত্র ৭ বছর পর পরেই চীন হবে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি। ২০৩০ সালে ভারত হবে তৃতীয়। আর ২০৩৫ সাল নাগাদ ১৯৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান বহু ধাপ উপরে উঠে পৌঁছে যাবে ২৫ নম্বরে।

২০২০ সালের সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।

সিইবিআর বলছে, করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে অনেক ওলট-পালট ঘটে গেছে। ইউরোপ-আমেরিকার বেশিরভাগ বড় অর্থনীতির দেশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর বিপরীতে চীন খুব কৌশলে করোনাভাইরাস দ্রুত এবং কঠোরভাবে মোকাবেলার কারণে সামনের বছরগুলোতে পৌঁছে যাবে বেশ সুবিধেজনক অবস্থানে। করোনা ভাইরাস মহামারি সত্ত্বেও সামনের বছরগুলিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে জোরালো প্রবৃদ্ধি আশা করা হচ্ছে।

করোনা ভাইরাস মহামারি সত্ত্বেও সামনের বছরগুলিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে জোরালো প্রবৃদ্ধি আশা করা হচ্ছে।

চীন যে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে বিশ্বের এক নম্বর অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হবে, সেটাকে সময়ের ব্যাপার বলেই মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু সিইবিআর বলছে, করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে এই প্রক্রিয়া আরও দ্রুততর হয়েছে। আগে যা ধারণা করা হয়েছিল, তার থেকে ৫ বছর আগেই ২০২৮ সালে চীন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাবে।

পোশাক খাত

পোশাকশ্রমিক
বাংলাদেশের পোশাকশ্রমিক। ফাইল ছবি

করোনার থাবায় যেখানে বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলোও নিজেদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশে আশার আলো দেখিয়েছে তৈরি পোশাক শিল্প। করোনার সময়ে তৈরি পোশাক কারখানাগুলো বন্ধ থাকলেও নতুন করে ক্রয়াদেশ আসা ও স্থগিতাদেশ হওয়া পোশাকের ক্রয়াদেশের পণ্য নিতে শুরু করেছেন বিদেশী ক্রেতারা। বিশ্বের নামীদামী ব্র্যান্ডগুলোও এখন আগ্রহ দেখাচ্ছে পণ্য নিতে। এতে আশার আলো ছড়িয়ে পড়ছে সরকার ও খাত সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। করোনাকালীন খাতটিতে রক্ষার জন্য বিশেষ প্রণোদনাও কাজে এসেছে। কারখানাগুলোতে কর্মরত লাখো শ্রমিকের পাশে দাঁড়ানোর কারণেই এমনটি সম্ভব হয়েছে।

শেয়ারবাজার

সারা বিশ্বে কোভিড-১৯ মহামারির তালমাতাল পরিস্থিতিতেও দেশের পুঁজিবাজারে সূচক, লেনদেন, বাজার মূলধন বৃদ্ধি পেয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। করোনাকালে নতুন কমিশন দায়িত্ব নিয়ে নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছে। পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০২০ সালের শুরুতে বাজারে লেনদেন তলানিতে নেমে যায়। 

শেয়ারবাজার
শেয়ারবাজার

সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী রোববার (২৭ ডিসেম্বর) শেয়ারবাজারে বড় উত্থান হওয়ায় ডিএসইর বাজার মূলধন ইতিহাসের সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছায়। এক দিনের ব্যবধানে ২৮ ডিসেম্বর সেই রেকর্ডও ভেঙে গেছে। দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ডিএসইর বাজার মূলধন ৪ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। সোমবার লেনদেন শেষে বাজারটির মূলধন দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা, আগের দিন ছিল ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ একদিনে বাজার মূলধন বেড়েছে ২ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা। বাজার মূলধন বাড়ার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ বেড়েছে।

বাজার মূলধনে রেকর্ড সৃষ্টি হওয়ার দিনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্য সূচক বেড়েছে। এর মাধ্যমে টানা চার কার্যদিবস ঊর্ধ্বমুখী থাকল শেয়ারবাজার। সেই সঙ্গে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ১৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থায় উঠে এসেছে।

রেমিটেন্স ও রিজার্ভ

প্রণোদনায় রেমিট্যান্স বাড়তে পারে
রেমিটেন্স। ফাইল ছবি

রেমিটেন্সের ওপর ভর করে বাংলাদেশের রিজার্ভে একটার পর একটা রেকর্ড হচ্ছে। এইতো কয়েক দিন আগে রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলারও ছাড়াবে বলে প্রত্যাশা ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৬৭১ কোটি ৩১ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি।

শেয়ার করুন