আমাদের জীবনে এবারের খ্রিষ্টীয় নববর্ষ ২০২১ বহুমাত্রিক তাৎপর্য নিয়ে হাজির হয়েছে। বিভিন্ন কারণে ২০২০ সাল মহাকালের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বিদায়ী এই বছরটিকে বরণ করার সময় কেউ ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি যে, বছরটি মানব জাতির জন্য এতটা বিষময় হবে। প্রায় সারা বছরই করোনাভাইরাসের মরণ-ভীতিতে কেটেছে বিশ্ববাসীর। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহানে যে ভাইরাস প্রথম সনাক্ত হয়েছিল, তা খুব দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। ২৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন ভাইরাসটির নামকরণ করে কোভিড-১৯।
বিদায়ী বছরে বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি আলোচিত শব্দ কোভিড-১৯ বা প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। বিশ্ব অর্থনীতিকে পঙ্গু করা এই ভাইরাস পৃথিবীর অর্ধেক জনগোষ্ঠী, প্রায় ৪০০ কোটি মানুষকে মাসের পর মাস ঘরবন্দি থাকতে বাধ্য করেছে। এ সময়ে করোনা সংক্রমিত হয়েছেন প্রায় ৮ কোটি মানুষ। পাশাপাশি মৃত্যু বরণ করেছেন প্রায় ১৮ লাখ মানুষ। আরও কত মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়ে করোনা তার ভয়ানক তাণ্ডব বন্ধ করবে তা বলা মুশকিল। কেননা এখনও দেশে দেশে চলছে প্রাণঘাতী করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, মৃত্যুবরণ করছে।
বিশ্বে বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ৮ শত কোটির কাছাকাছি। এই বিপুল জনগোষ্ঠীর এখন একটাই প্রত্যাশা, করোনা-ঝড় মোকাবিলায় সক্ষম হোক মানুষ। অবশ্য বছর বিদায়ের পূর্বে বিশ্ববাসীকে আশার আলো দেখিয়েছে চিকিৎসা-বিজ্ঞান। স্বল্পতম সময়েই আবিষ্কার হয়েছে করোনার ভ্যাকসিন। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিযাসহ বেশ কয়েকটি দেশে শুরু হয়েছে ভ্যাকসিনের ব্যবহার। বাংলাদেশও নতুন বছরের শুরুতেই ভ্যাকসিন পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে এই ভ্যাকসিন সব শ্রেণি-পেশার মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছানো নিয়ে আছে অনেক অনিশ্চয়তা। ইতোমধ্যে করোনা শনাক্তের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে দেয়া এক ভিডিওবার্তায় করোনা ভাইরাসের টিকার বিশ্বব্যাপী ন্যায্য বণ্টনের আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম ঘেব্রেয়েসুস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালকের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে আমরাও বলতে চাই, বিশ্বকে রক্ষায় বাংলাদেশসহ ঝুঁকিতে থাকা সব রাষ্ট্রের মানুষের জন্য করেনার টিকা নিশ্চিত করাই হোক নতুন বছরের অঙ্গীকার। ২০২১ সাল হোক নতুন বিশ্ব গড়ার বছর। আমাদের সবার প্রত্যাশা, করোনায় কবলিত স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশসমূহের জনগোষ্ঠীর জন্য টিকার ন্যায্য বন্টন নিশ্চত করতে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে উন্নত দেশগুলোর এগিয়ে আসার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠবে বাসযোগ্য মানবিক পৃথিবী। নতুন বছরটি কল্যাণময় হোক।