ধমকায়—গুলি করবে, ঝাঁজরা করে দিবে : কাদের মির্জা

নোয়াখালী প্রতিনিধি

আবদুল কাদের মির্জা
আবদুল কাদের মির্জা। ফাইল ছবি

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জা তার ‘সত্য বচন’ অব্যাহত রেখেছেন। নিজের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে গতকাল মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘আমি বললে অপরাধ। ধমকায় —গুলি করবে, ঝাঁজরা করে দিবে। কিন্তু আমি এসবকে ভয় পাই না। আমি ওবায়দুল কাদেরকেও ভয় পাই না। দল থেকে বহিষ্কার করে দেওয়া হলেও আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি ছেড়ে যাব না।’

গতকাল বিকেলে বসুরহাট পৌরসভার জামাইরটেকে নির্বাচনী পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

গত বৃহস্পতিবার থেকে হঠাৎ বিভিন্ন সভায় তার বক্তব্য নিয়ে দেশের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। এসব বক্তব্যে সুষ্ঠু নির্বাচন ও জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি যথাযথভাবে করার দাবি জানান তিনি। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধেও সরব হন। এসব দাবিতে রোববার সমর্থকদের নিয়ে বসুরহাটের জিরো পয়েন্ট এলাকা অবরোধ করেন কাদের মির্জা। টায়ার জ্বালিয়ে হাতে ঝাড়ু নিয়ে বিক্ষোভ দেখান তার সমর্থকেরা।

কাদের মির্জার দাবি, অসুস্থতা থেকে সুস্থ হয়ে তিনি সব সময় সত্য বলার পণ করেছেন। ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় বসুরহাট পৌরসভার নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী।

গতকাল সকালে বসুরহাট পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের একটি নারী সমাবেশে এবং বিকেলে জামাইরটেকে নির্বাচনী পথসভায় বক্তব্য দেন কাদের মির্জা। এসব সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে কাদের মির্জা বলেন, ‘আপনি জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন মাদকের বিরুদ্ধে। কিন্তু সেটা আমাদের নেতারা কার্যকর করেনি, প্রশাসন কার্যকর করেনি। আপনি এই সিদ্ধান্ত দেন যে মাদকের সঙ্গে, নারীর সঙ্গে যারা জড়িত; তারা দলের কোনো পর্যায়ে কোনো প্রতিনিধি হতে পারবে না।’

একজন উপজেলা চেয়ারম্যানের সমালোচনা করে কাদের মির্জা বলেন, ‘এই উপজেলা চেয়ারম্যান ক্ষমতায় থাকাকালে সরকারি বাসায় নারী, জুয়া চলত। চর বালুয়ায় হাজার হাজার একর জমি দখল করেছে। মাদকের ব্যবসা করে। কোম্পানীগঞ্জের বড় কাজগুলো নোয়াখালীর নেতারা দিছে, সে করেছে। আরেকজন আছে আমার ভাগনে রাহাত, আমাদের রক্তের নয়। সে বদির সঙ্গেও দেখা করেছে। সে সরকারি জায়গা দখল করে ভবন করেছে। আমি সেনাবাহিনী নিয়ে ভাঙতে গেছি, সে আমার দিকে চোখ রাঙিয়েছে, কারণ তার কাছে অস্ত্র আছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি যখন নোয়াখালীর অপরাজনীতি, ফেনীর অপরাজনীতি এবং সন্দ্বীপের এমপি, যে আমার এলাকার হাজার হাজার একর জমি দখল করে রেখেছে, এদের কথা যখন বলি, যখন প্রশাসনের অনিয়মের কথা বলি, যখন ভোট ডাকাতির বিরুদ্ধে কথা বলি, তখন আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র আজকে জাতীয় পর্যায় থেকে।’

কাদের মির্জা সাম্প্রতিক বিভিন্ন বক্তব্যে জেলায় নিয়োগ–বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি ও আওয়ামী লীগের জেলা কমিটি নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি করা হয়েছে দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের বাদ দিয়ে। এর প্রমাণ সাবেক সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদের ভাই জাবেদ (মিনহাজ আহমেদ জাবেদ) ও হাওয়া ভবনের মানিক (তমা গ্রুপের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক)। অতীতে কখনো তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিল না। অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে এদের নেতা বানানো হয়েছে।’

এ বিষয়ে আতাউর রহমান ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে বলেন, ‘উনি যা বলেছেন, তা তার একান্ত ব্যক্তিগত মতামত। গত পাঁচ বছর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। যেটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দিয়েছেন। কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো, হাওয়া ভবনের বিষয়ে, হাওয়া ভবন কোথায়, আমি তা জানিও না, চিনিও না। আমি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও কখনো ছিলাম না।’

আর সাবেক সেনাপ্রধানের ভাই মিনহাজ আহমেদ জাবেদ বলেন, ‘ছাত্র অবস্থায় সক্রিয় রাজনীতি না করলেও আমি শৈশব থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করি। এরপর দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হই। এতে দলের নেতারা যোগ্য মনে করায় সহসভাপতি করেছেন, আমি কোনো তদবির করিনি।’

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

এদিকে গতকাল দুপুরে কাদের মির্জার স্বাক্ষরিত একটি ‘প্রেস বিজ্ঞপ্তি’ গণমাধ্যমকে সরবরাহ করা হয়। এক পৃষ্ঠার প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন। এর শেষে তিনি বলেন, কোনো কোনো গণমাধ্যম বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য তাঁর সাম্প্রতিক বক্তব্য খণ্ডিত করে প্রকাশ করেছে। তিনি কেবল নোয়াখালীর আঞ্চলিক রাজনীতি নিয়েই কথা বলছেন।

শেয়ার করুন