রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকারের এক যুগ

র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। ফাইল ছবি

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, যে সংগঠনটির অর্জন আর দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অর্জন একই মুদ্রার এপীঠ-ওপীঠ। বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে অদ্যাবধি বাঙালির প্রায় সব মহৎ ইতিহাসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। সোহরাওয়ার্দী-ভাসানী-শেখ মুজিবদের হাত ধরে দলটির যাত্রা শুরু। বহু চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে আওয়ামী লীগের হাল এখন বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনার হাতে।

১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ পর্যন্ত নানা ষড়যন্ত্রে ক্ষত-বিক্ষত আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতেই ১৯৮১ সালের ১৭ মে এক বর্ষণমুখর দিনে স্বদেশে ফিরে দলের দায়িত্বভার নিজ কাঁধে তুলে নেন আওয়ামী লীগের কাণ্ডারি ও বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা। দলের দায়িত্ব নেয়ার পরপরই শুরু তাঁর নির্ভীক সংগ্রামের নতুন বন্ধুর পথের অভিযাত্রা। একদিকে পিতার হন্থারক সামরিক স্বৈরতন্ত্রের দোসরদের পদচারণা, অন্যদিকে দলের অভ্যন্তরে নেতৃত্বাভিলাষী একাধিক নেতা ও গোষ্ঠির ষড়যন্ত্র। পিতৃ-মাতৃ ও স্বজনহারা হাসিনা পাড়ি দেন এক অজানার উদ্দেশ্যে, যে যাত্রায় তাঁর সঙ্গীদের অনেকেই বিশ্বস্ত ছিলেন না। তবুও অবিচল দৃঢ় প্রত্যয়ী শেখ হাসিনা কোনো বিভ্রান্তির বেড়াজালে পা দেননি।  

universel cardiac hospital

শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য বারবার সশস্ত্র হামলা করা হয় এবং কারান্তরীণ করা হয় বহুবার। কিন্তু কোনো আঘাতই তাঁকে তাঁর লক্ষ্য থেকে কক্ষচ্যুত করতে পারেনি। আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি দলকে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে শেখ হাসিনার কঠিন সময় ও বন্ধুর পথচলা ক্ষুদ্র পরিসরে লিপিবদ্ধ করা সম্ভব নয়। শুধু আমরা বলতে পারি, রাষ্ট্রীক ও দলীয় উভয় ক্ষেত্রেই তাঁকে হাঁটতে হয়েছে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে। তবে সবসময় তিনি পেয়েছেন দেশব্যাপী বঙ্গবন্ধুর লক্ষ কোটি আদর্শিক কর্মী ও জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন, অকৃত্রিম ভালবাসা।

শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ইতিহাসে ৪ বারের মতো প্রধানমন্ত্রী। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রথমবারের মতো রাষ্ট্র পরিচালনা কালে তাকে দুর্লঙ্ঘ প্রাচীর উর্লঙ্ঘ করতে হয়েছে। কেননা বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকে তাঁর আগপর্যন্ত যারা সরকারে ছিল তারা সকলেই পাকিস্তানের মতাদর্শে লালিত-পালিত ছিলেন এবং পাকিস্তানের ভাবাদর্শকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিা করেছিলেন। ক্ষমতাগ্রহনের পর তিনি এসব প্রাচীর ভেঙে বাংলাদেশকে তাঁর নিজস্ব কাঠামো দিয়েছিলেন। তারপর ২০০১ সালে এসে আবার ধাক্কা খান। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা পায় আওয়ামী লীগ। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠন করে টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছে আওয়ামী লীগ। পিতার আদর্শের পথ ধরেই শেখ হাসিনা দেশকে নিয়ে যাচ্ছেন উন্নয়নের মহাসোপানে। টানা এক যুগ ধরে তাঁর নেতৃত্বে সারা দেশে চলছে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ। মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও কর্ণফুলী টানেলের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে দেশজুড়ে প্রায় শতভাগ বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা হয়েছে। পাশাপাশি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, নারী শিক্ষার উন্নয়ন, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল ও দারিদ্র দূরীকরণে রাখছেন অগ্রণী ভূমিকা।

করোনার মধ্যেও প্রতিটি ক্ষেত্রে রেকর্ড গড়ছে বাংলাদেশ। দারুণ গতিতে আসছে রেমিট্যান্স; রিজার্ভের ক্ষেত্রেও সৃষ্টি হয়েছে রেকর্ড। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে মতপার্থক্যের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন, তখন অনেকেই একে অবাস্তব বলে সমালোচনা করলেও ইতিমধ্যেই পদ্মা সেতুর সবগুলো স্প্যান বসানো হয়েছে। কক্সবাজারের মাতারবাড়ী ও পটুয়াখালীর পায়রায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেলের ৬১ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। চ্যালেঞ্জ নিয়েই যেমন বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পন্ন করে চলেছেন- তেমনি ছিটমহল সমস্যার সমাধান, সমুদ্রসীমানা বিরোধেরও নিষ্পত্তি করেছেন শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনাকে ভবিষ্যত ইতিহাস যেভাবেই মূল্যায়ন করুক না কেন, তিনি যে একজন সফল ও যোগ্য রাষ্ট্রনেতা একথা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। স্বজন হারানোর শোক বুকে চাপা দিয়ে তিনি জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন অক্লান্তভাবে। যে কোনো মানবিক বিচারেই তাঁর এই অবিরাম পথচলাকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখবে ইতিহাস। ইতিহাস বিচারও করবে নির্মোহ এক দৃষ্টিকোণ থেকে।

আজ বাংলাদেশের জন্য শেখ হাসিনা শুধু কোনো ব্যাক্তি কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান নয়, তিনি হচ্ছেন রূপকথার সেই ফিনিক্স পাখি যে ধ্বংসস্তুপ থেকে বারবার জেগে উঠে। যিনি দেশের মানুষকে নতুন করে বাঁচতে শেখায়। সকল মানবিক গুণাবলিই তাঁর মধ্যে কাজ করে। নির্লোভ এই রাজনীতিক রাজনীতিকে জনগণের কল্যাণ সাধনের হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেছেন। স্নেহ মমতা আর ভালবাসায় অতুলনীয় এই মানুষটি স্নেহান্ধও নন, বিনম্র হলেও সিদ্ধান্ত গ্রহণে অটল ও দৃঢ়। তাঁর জয় হোক। জয় শেখ হাসিনা।

লেখক: সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক কর্মী

সম্পাদক, মত ও পথ।

শেয়ার করুন