স্ত্রী হত্যার অভিযোগ ছিল দিহানের বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধেও

স্কুলছাত্রী ধর্ষণ

রাজধানী ঢাকার কলাবাগানে ‘ও’ লেভেল পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত তানভীর ইফতেফার দিহানের বড়ভাই সুপ্ত সরকারের বিরুদ্ধেও ছিল স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ। কিন্তু প্রভাবশালী বাবা আবদুর রউফ সরকারের কারণে ওই মামলার বাদী আপস করেন বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।

দিহানের বাবা আবদুর রউফ সরকার রাজশাহী জেলার অবসরপ্রাপ্ত সাব-রেজিস্ট্রার। তার গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার রাতুগ্রাম। জেলার বাগমারা উপজেলার তাহেরপুরেও বাড়ি রয়েছে আবদুর রউফ সরকারের। এছাড়া রাজশাহী নগরীর সাগরপাড়া ও পদ্মা আবাসিক এলাকায় রয়েছে আরও দুটি বাড়ি। ঢাকায় রয়েছে ফ্ল্যাট।

বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক আবদুর রউফ সরকার তিন ছেলের জনক। বড় ছেলে সুপ্ত সরকারকে নিয়ে তিনি এখন দুর্গাপুরের গ্রামের বাড়িতে বসবাস করেন।

তার স্ত্রী সানজিদা সরকার শিল্পী মেজ ছেলে নিলয় সরকার ও ছোট ছেলে দিহানকে নিয়ে ঢাকার কলাবাগানের ওই ফ্ল্যাটে বসবাস করেন। ছেলেদের মতো মা শিল্পীও বেপরোয়া জীবনযাপন করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এলাকাবাসী জানায়, ছোটবেলা থেকেই দিহান ঢাকায় থাকেন। তাই তার সম্পর্কে গ্রামের মানুষের ধারণা কম। তবে তার বড় ভাই সুপ্ত মাদকাসক্ত। ২০০৯ সালেই তার বিরুদ্ধে স্ত্রী রুনা খাতুনকে হত্যার অভিযোগ ওঠে। পরে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সেই মামলার আপস করে সুপ্তর পরিবার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুপ্তর স্ত্রী রুনা খাতুনের বাবার বাড়ি কিশোরগঞ্জে। নানার বাড়ি রাজশাহী নগরীর হোসনীগঞ্জ মহল্লায় থাকতেন তিনি। এখানেই সুপ্তর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেই পরিচয় থেকে প্রেম এরপর বিয়ে।

কিন্তু সুপ্ত ছিলেন মাদকাসক্ত। এ নিয়ে তার পরিবারে প্রায়ই অশান্তি লেগে থাকতো। বিয়ের কিছু দিনের মাথায় রহস্যজনক মৃত্যু হয় রুনার। মুখে বিষ ঢেলে স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ ওঠে সুপ্তর বিরুদ্ধে। এই কাণ্ডে তার বাবা-মায়েরও সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে।

ওই সময় মেয়ে হত্যার অভিযোগে থানায় মামলা দায়ের করেন রুনার মা। অভিযুক্তদের গ্রেফতারে রুনার মরদেহ নিয়ে রাজশাহী নগরীতে মিছিলও করে এলাকাবাসী।

মামলাটির সাক্ষী ছিলেন রুনার নানার বাড়ির এলাকার এক নারী। নাম প্রকাশ না করে তিনি বলেন, বিয়ের পর থেকেই শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছিলেন রুনা। শেষে তার মুখে জোর করে বিষ ঢেলে দেয়া হয়। পরে তাকে নেয়া হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। দুই দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যান রুনা।

রুনার স্বজন ও এলাকার লোকজন তার মরদেহ নিয়ে নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। তারা রুনার স্বামীসহ তার পরিবারের সদস্যদের শাস্তির দাবি জানিয়েছিলেন। এ নিয়ে দায়ের করা মামলাটি চলেছিল বেশ কিছুদিন। অবশেষে সুপ্তর বাবা টাকার জোরে আপস মিমাংসায় বসতে বাধ্য করেন রুনার স্বজনদের।

রাজধানীর কলাবাগানের ঘটনায় পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে ভুক্তভোগীকে প্রেমে প্রলুব্ধ করে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে কৌশলে বাসায় নিয়ে যান দিহান। এরপর নিজের ফাঁকা বাসায় ওই ছাত্রীকে একা পেয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেন তিনি।

ধর্ষণের সময় আসামির অমানবিক কার্যকলাপের কারণে ভুক্তভোগীর গোপনাঙ্গ ফেটে গিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। ভুক্তভোগী অসুস্থ হয়ে পড়লে ঘটনাটি অন্যদিকে প্রবাহিত করার জন্য তাকে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান অভিযুক্ত দিহান। সেখানেই ওই ছাত্রীর মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতেই রাজধানীর কলাবাগান থানায় ওই স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন তার বাবা। এতে একমাত্র আসামি করা হয় দিহানকে। শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন গ্রেফতার দিহান।

জবানবন্দি রেকর্ড করার পর ঢাকা মহানগর হাকিম মামুনুর রশীদ মামলার এজাহার গ্রহণ করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২৬ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন। এরপর অভিযুক্ত দিহানকে কারাগারে পাঠানো হয়।

শেয়ার করুন