আজ ১০ জানুয়ারি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি তিনি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে লন্ডন-দিল্লি হয়ে ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশে পৌঁছেছিলেন। ২৫ মার্চ ১৯৭১ তারিখে মধ্যরাতে তথা ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করার অব্যবহিত পরেই তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন। গ্রেফতারের পর থেকে মুক্তির আগ পর্যন্ত তিনি পাকিস্তানিদের হাতে বন্দি ছিলেন। এ সময়টা তাঁকে কঠিন অবস্থার মধ্যদিয়ে অতিক্রম করতে হয়েছে।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট তাঁকে পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রধানতম বা পয়লা নম্বরের শত্রু ঘোষণা করে তাঁর বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতার অভিযোগ এনে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে ফাঁসির ব্যবস্থা করেছিলেন। এ সময় পৃথিবীর সাথে ন্যূনতম সংযোগ ছিল না তাঁর। কোনো খবরাখবর পেতেন না তিনি। কী ঘটে যাচ্ছে তাঁর প্রিয় স্বদেশে, সে সম্পর্কে তাঁর সামান্যতম কোনো ধারণা ছিল না বা সামান্যতম ধারণা পাওয়ারও কোনো সুযোগ তাঁর ছিল না। অসম্ভব অকল্পনীয় মানসিক চাপ প্রয়োগ করেছিল। কিন্তু এতকিছুর পরও তিনি মুহুর্তের জন্যও জনগণের ওপর থেকে আস্থা হারাননি বা স্বাধীনতার সম্ভাবনা নিয়েও মনের অজান্তেও সন্দিহান হননি।
জনগণের ওপর অবিচল আস্থা, স্বাধীনতার প্রশ্নে আপোসহীন অঙ্গীকার, সংগ্রামের অজেয় চেতনা তাঁকে কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে ফাঁসির রজ্জুর হাতছানির মধ্যেও বেঁচে থাকার অফুরান সাহস জুগিয়েছিল। নিজ লক্ষ্যে অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস রেখে তিনি পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে এক অসম ও সুকঠিন মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ চালিয়ে গেছেন। তাঁর অমিত সাহস তাঁকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর প্রহসনের বিচারের রায়কে হাতের তুড়িতে উপেক্ষা করতে প্রেরণা দিয়েছে।
পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তিকে তাই বঙ্গবন্ধু দেখেছেন ‘অন্ধকার থেকে আলোর পথের যাত্রা’ এবং ‘দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি’র অভিযাত্রা’ হিসেবে। ১০ জানুয়ারি ১৯৭২-এ তাঁর স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এক নবরূপ অর্জন করে। একটি স্থিতিশীল সরকার প্রতিষ্ঠা, একটি অস্থির পরিস্থিতিকে সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন জাদুমন্ত্রের মতো কাজ করেছিল।
সামগ্রিক পর্যালোচনায় একথা আজ নিঃসন্দেহে প্রমাণিত যে, একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের গড়ে উঠায় তাঁর স্বদেশভূমিতে ফিরে আসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তাঁর প্রত্যাবর্তন আমাদের স্বাধীনতাকে সকল প্রভাবমুক্ত রাখতে সহায়তা করেছে। বাংলাদেশ তার নিজস্ব পরিচিতি নিয়ে-ভূখণ্ডগত, সংস্কৃতিগত, ভাষাগত ও প্রভাবগত সকল বিবেচনায়- যে আজ বিশ্ব-মানচিত্রে এক স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলেছে(যা জোটসরকার দর্শনগতভাবে স্বাধীনতা-পূর্ব অবস্থানে নিয়ে যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল) তা সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের কারণেই।
মুজিববর্ষের প্রান্তে দাঁড়িয়ে মুজিবের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস তাই আমাদের অন্তহীন অনুপ্রেরণার অংশ হিসেবে গণ্য। তাঁর জয় হোক। জয়তু মুজিব।