মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কর্তৃক ‘বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত’ রোহিঙ্গাদের তাদের দেশ মিয়ানমার কখন ফেরত নিয়ে যাবে তা বলা মুশকিল বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।
আজ রোববার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলামের দুই বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রকাশিত বই দুটি হলো- ‘রোহিঙ্গা-নিঃসঙ্গ নিপীড়িত জাতিগোষ্ঠী ও শেষ সীমান্তের পর কোথায় যাব আমরা’। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে প্রকাশনা সংস্থা খড়িমাটি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। ১৯৭৮ সালে দেখেছি, ১৯৯২ সালে দেখেছি। তখন অনেক রোহিঙ্গা আমাদের দেশে এসেছে। ১৯৯২ সালে প্রায় ২ লাখ ৫৩ হাজার রোহিঙ্গা আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছিল। পরবর্তীতে আলোচনার মাধ্যমে তারা ২ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা ফেরত নিয়েছে। সেজন্য আমরা আশাবাদী। এখনো তারা নিয়ে যাবে। কিন্তু কখন তা বলা মুশকিল।
তিনি বলেন, মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র। তাদের সঙ্গে আমাদের আলাপ হয়েছে। তারা বারবার বলছে, তারা তাদের লোকগুলোকে নিয়ে যাবে। কখনো বলেনি নিয়ে যাবে না। তবে আমরা বলেছি, ঠিক আছে নিয়ে যাও, তবে অবশ্যই তাদের নিরাপত্তা তোমাদের নিশ্চিত করতে হবে। তারা বলেছে, আমরা তাদের (রোহিঙ্গা) সিকিউরিটি এনশিউর করবো। আমরা তাদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ প্রায় সাড়ে তিন বছর একজন রোহিঙ্গাও ফেরত যায়নি। কারণ তাদের মধ্যে আন্তরিকতার অভাব।
মিয়ানমার বারবার নানা অজুহাতে আলোচনা পিছিয়ে নিচ্ছে জানিয়ে বলেন, গত বছর ৩০ জানুয়ারির পর আমাদের বড় মিটিং হয়েছে। এরপর তারা কোভিডের বাহানা দিয়ে, তারপর ইলেকশনের বাহানা দিয়ে এ বিষয়গুলো পিছিয়ে নিয়েছে। এবার তাদের দেশে ইলেকশন শেষ। আমরা আশা করছি যে, আবার নতুন করে আলোচনা শুরু করতে পারবো। আজকেও মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ পৃথিবীতে মডেল সৃষ্টি করেছে দাবি করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ পৃথিবীর একমাত্র দেশ যারা একাই ১১ লাখ শরণার্থী আশ্রয় দিয়েছে। ইরাক, ইরান ও সিরিয়ার ১০ লাখ শরণার্থীকে ইউরোপের ২৭টি দেশ ভাগ করে নিয়েও সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। এখানে প্রধানমন্ত্রী মানবিক কারণে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছেন। প্রথমে কিন্তু বিদেশিরা কেউ সাহায্য করেনি। আমাদের এখানকার মানুষরাই তাদের আশ্রয় দিয়েছে, খাবার দিয়েছে। এই মহানুভবতা আর কোথায় আছে? আমরা এটার মাধ্যমে আদর্শ সৃষ্টি করেছি, মডেল সৃষ্টি করেছি; যে বাঙালিরা মানুষ। তারা মানুষকে মানবিকতা দেখাতে জানে।
ইউরোপের রেনেসাঁ বিপ্লবের আগেই বাঙালিরা মানবতার জয়গান গেয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, যখন ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে রেনেসাঁ প্রতিষ্ঠিত হয়, তারও আগে এই বঙ্গভূমে চণ্ডিদাস লিখে গেছেন ‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই’। চণ্ডিদাসের এই ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে যখন, ওই সব দেশ তখন চিন্তাও করেনি। আমরা সেই বাঙালি, আমরা সেই মানুষ। আমরা মানুষ বলেই এতো আগে মানবতার জয়গান গেয়েছি। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী আমাদের শাশ্বত সত্যকে আবার প্রতিষ্ঠিত রূপ দিয়েছেন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে।
মন্ত্রী মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলামের লেখা বই প্রসঙ্গে বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কথা বলতে হলে রেফারেন্সের প্রয়োজন হয়। কারণ অনেকে মনে করে রোহিঙ্গারা চট্টগ্রাম থেকে পালিয়ে যাওয়া। তাই মেজর (অব.) এমদাদের এই বইগুলোকে আমরা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করতে পারবো। এখানে ১২০০ বছর আগের ইতিহাসও লিপিবদ্ধ হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, দক্ষিণ কোরিয়ার অনারারি কনসাল মো. মহসিন, দৈনিক সুপ্রভাতের সম্পাদক রুশো মাহমুদ। মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন চবির আইন অনুষদের ডিন আবু আল নোমান।