সারাদেশে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ ছাড়াই ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ১৭ জানুয়ারি সারাদেশে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। ওই খসড়ার ওপর দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তির পর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হবে আগামী ২ মার্চ। ২০১৯ সালে যেসব নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে গত ১ জানুয়ারি যাদের ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে, তাদের নাম থাকছে এ ভোটার তালিকায়। ভোটার তালিকা আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী, প্রতি বছর ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের বিধান রয়েছে।
কয়েকজন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ২০২০ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ না করায় নতুন ভোটারদের বড় একটি অংশ বাদ পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। একইসঙ্গে অনেক মৃত ভোটারকে বাদ দেওয়া সম্ভবও হবে না। তারা বলেন, ২০১৯ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ১৩ লাখ ৯২ হাজার ২৩৬ জন মৃত নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। ২০২০ সালে প্রকাশিত ভোটার তালিকা থেকে এসব নাগরিকের নাম বাদ দেওয়া হয়। ২০১৯ সালে ১৮ বছরের কম বয়সীদের আগাম তথ্য নেওয়া হয়। ওই তথ্যের ভিত্তিতে নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্তির সুযোগ থাকলেও এ সময়ে যারা মারা গেছেন, তাদের নাম কর্তন করা সম্ভব হয়নি। ফলে ভোটার তালিকায় কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে যাবে, এটাই স্বাভাবিক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, করোনাসহ বিভিন্ন কারণে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। আগে আমরা যে তিন বছরের তথ্য সংগ্রহ করেছি, সেটার ভিত্তিতে তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে।
তিনি জানান, আইনি বিধান অনুযায়ী ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে। তবে যদি কেউ যোগ্য হওয়ার পরও ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েন, তাহলে কীভাবে তাদের তালিকাভুক্তি করা হবে, সে বিষয়ে কমিশনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, আগামী ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। ওই দিনকে ‘ভোটার দিবস’ হিসেবে উদযাপন করে থাকে ইসি। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে এবার সীমিত আয়োজনে ভোটার দিবসের আয়োজন করা হচ্ছে। দিবসটিতে মিছিল ও জনসমাগম হয়—এমন কর্মসূচি রাখা হচ্ছে না। তবে উপজেলা ও থানা, জেলা, আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয় এবং কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় নির্বাচন ভবনে আলোকসজ্জা করা হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ব্যানার ও ফেস্টুন টানানো হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছিল নির্বাচন কমিশন। ওই সময়ে ১৬ বছর বয়সীদেরও তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এতে প্রায় ৯৬ লাখ নাগরিকের তথ্য পেয়েছিল ইসি। এরমধ্যে ৬৭ লাখ ৫৮ হাজার ৩৪১ জনকে ভোটার তালিকাভুক্ত করে ২০২০ সালের ২ জানুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। বাকি প্রায় সাড়ে ২৮ লাখ নাগরিকের তথ্য নির্বাচন কমিশনের তথ্যভাণ্ডারে জমা রয়েছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে, এমন নাগরিকদের নাম খসড়া ভোটার তালিকায় প্রকাশ করতে যাচ্ছে ইসি। এ তালিকা আগামী ১৭ জানুয়ারি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রকাশ করা হবে। খসড়া তালিকার ওপর কারও আপত্তি বা সংশোধনী থাকলে, তা ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত জানানো যাবে। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ওইসব দাবি ও আপত্তি নিষ্পত্তি করা হবে। ২ মার্চ ভোটার দিবসে চূড়ান্ত হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে।
সূত্র জানায়, ভোটার তালিকা আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে ভোটার তালিকা হালনাগাদের বিধান রয়েছে। হালনাগাদের সময়ে ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছেন, এমন নাগরিকদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি করা, মৃতদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া এবং ভোটার এলাকা স্থানান্তর করেছেন—এমন নাগরিকদের তথ্য সংশোধনের বিধান রয়েছে। বিধিমালায় কোন প্রক্রিয়ায় কীভাবে তথ্য সংগ্রহ করা হবে, তারও বর্ণনা রয়েছে। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণের বছর ২০২০ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ ছাড়াই হালনাগাদ ভোটার তালিকার তথ্য প্রকাশ করতে যাচ্ছে ইসি। যদিও আইনের ১১ ধারায় উল্লেখ রয়েছে, ‘আইনে উল্লিখিত পদ্ধতিতে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা না হলে, এর বৈধতা ও ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ন হবে না।’