পরবর্তী নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন ট্রাম্প?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মার্কিন ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসিত হওয়া প্রথম কোনো প্রেসিডেন্ট হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এখন ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার যে প্রত্যাশা ট্রাম্প ব্যক্ত করেছেন, তাতে তিনি নিষিদ্ধ হচ্ছেন কি না- সেই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

ক্যাপিটল ভবনে দাঙ্গায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে বুধবার প্রতিনিধি পরিষদে তাকে অভিশংসিত করা হয়েছে। ওই তাণ্ডবে এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচ ব্যক্তি নিহত হয়েছিলেন।

universel cardiac hospital

আগামী ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন ডেমোক্র্যাটদলীয় জো বাইডেন। এর আগে সিনেটে ট্রাম্পের বিচার হওয়া সম্ভব হবে না। অর্থাৎ মেয়াদ শেষ না করে অপমানজনকভাবে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে হচ্ছে না এই আবাসন ব্যবসায়ী ধনকুবেরকে।

তবে পরবর্তী সময় সিনেটে বিচারের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন তিনি। যদি তাতে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন, তবে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া থেকে তাকে বিরত থাকতে হবে।

সপ্তাহ খানেক পরে সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা হতে যাওয়া ডেমোক্র্যাটিকদলীয় চাক শুমার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয়বার অভিশংসিত হওয়ার লজ্জা বহন করছেন ট্রাম্প।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে সিনেটের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, তার বিচার কার্যক্রম এগিয়ে যাবে।

ডেমোক্র্যাট সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিনিধি পরিষদে ভোট হওয়ার সময় প্রশ্ন ছিল একটি— কতজন রিপাবলিকান তাদের সঙ্গে যোগ দেবেন। শেষে দেখা গেছে, ১০ রিপাবলিকান সদস্য নিজ দলের বাইরে গিয়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন।

শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পকে অভিশংসনে প্রস্তাব ২৩২-১৯৭ ভোটে পাস হয়েছে।

এ সময়ে হোয়াইট হাউসে বসে একটি ভিডিওবার্তা দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যাতে অভিশংসন নিয়ে তার কোনো বক্তব্য ছিল না। এমনকি বাইডেনের বিজয় জালিয়াতির মাধ্যমে হয়েছে বলে এতদিন যে অভিযোগ তিনি করেছেন; তা নিয়ে কোনো মন্তব্য নেই।

বরং সহিংসতা ছেড়ে আমেরিকানদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্ট।

মহামারী ও ভঙ্গুর অর্থনীতির দায় নিয়ে শপথ নিতে যাওয়া জো বাইডেন বলেন, আমি আশা করছি, অভিশংসনের ক্ষেত্রে সাংবিধানিক দায়দায়িত্ব পালনের একটি উপায় বের করে নিয়ে আসতে পারবেন সিনেট নেতৃবৃন্দ। পাশাপাশি তারা দেশের অন্যান্য জরুরি কার্যক্রমও চালিয়ে যাবেন।

ট্রাম্পের বিচারের পাশাপাশি মন্ত্রিসভায় নিজের মনোনীতদের অনুমোদন দিতে সিনেটের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাইডেন।

বছরখানেক আগে প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হওয়ার পর রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেটে তিনি খালাস পেয়েছিলেন। তখন নির্বাচনের আগে বাইডেনের পরিবারের তথ্য পেতে তিনি নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ তোলা হয়েছিল।

আর গত ৬ জানুয়ারি ন্যাশনাল মলের জমায়েতে দেওয়া বক্তৃতাই তার এবারের অধঃপতনের জন্য দায়ী। সমর্থকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল বাইডেন চুরি করে নিয়েছেন। কাজেই কংগ্রেসের দিকে পদযাত্রা করে তাদের শক্তি দেখানো প্রয়োজন।

ট্রাম্পের কয়েক সপ্তাহের ষড়যন্ত্র তত্ত্বেও উজ্জীবিত হয়ে তার উগ্র সমর্থকরা ক্যাপিটল হিলে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এতে এক পুলিশ কর্মকর্তা আহত হওয়ার পর মৃত্যুবরণ করে।

গুলিতে মার্কিন বিমানবাহিনীর সাবেক এক নারী কর্মকর্তা নিহত ও আহত হওয়ার পর তিন বিক্ষোভকারী মারা যান। দাঙ্গা থেকে বাঁচতে আইনপ্রণেতারা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। এতে বাইডেনকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

ভোটের আগে প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যানসি পেলোসি বলেন, ট্রাম্পকে অবশ্যই ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। আমরা সবাই যে দেশকে ভালোবাসী, সেই দেশের জন্য ট্রাম্প পরিষ্কার হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছেন।

সিনেটের বর্তমান সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা মিচ ম্যাককনেল বলেন, আগামী ২০ জানুয়ারির আগে ট্রাম্পের অভিশংসন বিচারের আহ্বান জানাতে পারছেন না। কিন্তু বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করতে ভোটের আয়োজন করবেন।

তিনি বলেন, কীভাবে আমি ভোট দেব, তা নিয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসিনি। যখন বিচারের বিষয়টি উপস্থাপিত হবে, তখন আমি আইনি যুক্তিতর্ক শোনার আশায় আছি।

মঙ্গলবার নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়, ট্রাম্প অভিশংসনের অপরাধ করেছেন—ম্যাককনেল এমনটা বিশ্বাস করেন বলে ব্যক্তিগতভাবে আভাস দিয়েছেন।

এতে ট্রাম্পের পায়ের নিচ থেকে মাটি আরও বেশি করে সরে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ তাকে দোষী সাব্যস্ত করতে রিপাবলিকান অন্যান্য সিনেটরও যোগ দিতে পারেন।

শেয়ার করুন