নির্ধারিত ৯০ মিনিটের পর অতিরিক্ত ত্রিশ মিনিটেও এলো না ফলাফল। অগত্যা দ্বারস্থ হতে হলো টাইব্রেকারের। যেখানে প্রথম চারটি শটের জন্য খেলোয়াড়ের নাম আগেই ঠিক করে রেখেছিলেন বার্সেলোনা কোচ রোনাল্ড কোম্যান। পঞ্চম শট কে নেবে? প্রশ্ন রাখতেই উদ্দীপ্ত কণ্ঠে ২১ বছর বয়সী রিকি পুইগ বললেন, আমি নেবো!
টাইব্রেকারে প্রথমে শট নেয় রিয়াল সোসিয়েদাদ। নিজের পাঁচটি শট শেষে তারা গোল করতে পারে ২টি। অন্যদিকে বার্সেলোনা তাদের প্রথম চার শটে সফল ঠিক ২ বারই। ফলে ম্যাচ নির্ধারণী শটটি নেয়ার ভার পড়ে রিকি পুইগের কাঁধে। জিতলেই ফাইনালে, হেরে গেলে বিদায়- এমন কঠিন ম্যাচে চাপের মুখে দাঁড়িয়ে কোনো ভুল করেননি পুইগ, পেনাল্টি শুটআউট জিতে ফাইনালে পৌঁছে গেছে বার্সেলোনা।
শেষের নায়ক যদি রিকি পুইগ হন, তাহলে ম্যাচের মূল নায়ক নিঃসন্দেহে গোলরক্ষক মার্ক টের স্টেগান। যার অতিমানবীয় পারফরম্যান্সের কল্যাণে টাইব্রেকারে শ্বাসরুদ্ধকর এক জয় পেয়েছে বার্সা। যেখানে মূল ম্যাচ ছিল ১-১ গোলে ড্র এবং অতিরিক্ত ত্রিশ মিনিটেও হয়নি গোল। পরে টাইব্রেকারে বার্সেলোনা জিতেছে ৩-২ গোলে।
ম্যাচটি ছিল স্প্যানিশ সুপার কাপের সেমিফাইনাল, বার্সার ফরোয়ার্ড লাইনে ছিলেন না দলের প্রাণভোমরা লিওনেল মেসি। পুরো ম্যাচজুড়েই অনুভূত হয়েছে তার অভাব। পুরো ১২০ মিনিটে একটির বেশি গোল করতে পারেনি বার্সেলোনা। উল্টো সোসিয়েদাদের আক্রমণে কেঁপেছে বার্সার রক্ষণ, বারবার দলকে উদ্ধার করেছেন জার্মান গোলরক্ষক টের স্টেগান।
কর্দোবার নুয়েভো আর্সাঙ্গেলে মেসিকে ছাড়া খেলতে নেমে প্রথমার্ধে আক্রমণের চেয়ে বেশি রক্ষণেই মনোযোগ দিতে হয়েছে বার্সেলোনাকে। আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে থাকা সোসিয়েদাদ প্রথমার্ধেই করে বেশ কয়েকটি জোরালো আক্রমণ। কিন্তু কখনও স্টেগানের বিশ্বস্ত হাত, আবার কখনও ফিনিশিং ব্যর্থতায় গোলবঞ্চিত হয় তারা।
ম্যাচের প্রথম গোলটি করেন ফ্রেংকি ডি ইয়ং। ৩৯ মিনিটের সময় গ্রিজম্যানের ক্রসে হেডে বল জালে জড়ান বার্সার মিডফিল্ডার। দ্বিতীয়ার্ধে গোল শোধের জন্য বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি সোসিয়েদাদকে। ম্যাচের ৫১ মিনিটের সময় ডি-বক্সের মধ্যে হ্যান্ডবল করেন ফ্রেংকি ডি ইয়ং। ফলে পেনাল্টি পায় সোসিয়েদাদ। সফল স্পট কিকে দলকে লিড এনে দেন মিকেল ওয়ারজাবাল।
এরপর বেশ কয়েকটি সুযোগ আসে বার্সেলোনার সামনে। কিন্তু কোনোটিই কাজে লাগাতে পারেননি ওসুমানে দেম্বেলে, অ্যান্তনিও গ্রিজম্যানরা। নির্ধারিত ৯০ মিনিটে আর হয়নি গোল। ফলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত ত্রিশ মিনিটে। যেখানে শুরু ও শেষে অসাধারণ দুইটি সেভ করেন স্টেগান। যা বাঁচিয়ে রাখে বার্সেলোনার আশা।
শুধু মূল ম্যাচেই নয়, টাইব্রেকারেও নায়ক স্টেগান। ত্রিশ মিনিটে দুই দল গোল না পাওয়ায় ফল মীমাংসার জন্য খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। যেখানে জন বাতিস্তা ও ওয়াজাবালের নেয়া প্রথম দুই শট ঠেকিয়ে দেন স্টেগান। তৃতীয় শট পোস্টে মারেন উইলিয়াম হোসে। ফলে উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দেয় বার্সেলোনার সামনে।
কিন্তু বার্সার হয়েও প্রথম শট মিস করেন ডি ইয়ং। তবে দ্বিতীয়, তৃতীয় শটে গোল করেন ওসুমানে দেম্বেলে ও মিরালেম পিয়ানিচ। পরে চতুর্থ শটে সোসিয়েদাদের প্রথম গোল করেন মিকেল মেরিনো কিন্তু মিস করেন বার্সেলোনার গ্রিজম্যান। পঞ্চম শটে আবার লক্ষ্যভেদ করে সোসিয়েদাদের আশা বাঁচিয়ে রাখেন আদনান ইয়ানুজাই।
ফলে পুরো ম্যাচের ফল নির্ধারণের ভার গিয়ে পড়ে সাহসী তরুণ রিকি পুইগের কাঁধে। বুদ্ধিদীপ্ত শটে গোলরক্ষকে ডানে পাঠিয়ে বিপরীত দিকে গোল করেন পুইগ। মেসিকে ছাড়াই সেমিফাইনাল জিতে বার্সেলোনা পেয়ে যায় স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালের টিকিট।
আগামী ১৭ জানুয়ারি হবে টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচ। যেখানে বার্সেলোনার প্রতিদ্বন্দ্বী হবে রিয়াল মাদ্রিদ বনাম অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের মধ্যকার দ্বিতীয় সেমিফাইনাল জয়ী দল।