সংবিধান এবং আমরা

র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি

মোকতাদির চৌধুরী
র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। ফাইল ছবি

আমাদের সংবিধান স্পষ্ট করেই বলছে, ‘আমরা অঙ্গীকার করিতেছি যে, যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল -জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সেই সকল আদর্শ এই সংবিধানের মূলনীতি হইবে ;

আমরা আরও অঙ্গীকার করিতেছি যে, আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য হইবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা- যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে’

আসুন আমরা সংবিধানের প্রস্তাবনার উপরিউক্ত বিবৃতির আলোকে বর্তমানে আমাদের রাষ্ট্রের হালহকিকত ও সরকারের কর্মধারা পরীক্ষা করি। সংবিধানের প্রস্তাবনার বক্তব্য এতই সুস্পষ্ট যে তার কোনো ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। আমরা যে সংবিধানের নির্দেশিকা বা ঘোষিত আদর্শ থেকে যোজন-যোজন দূরে আছি, এতে কি কোনো সন্দেহের অবকাশ আছে? বাঙালি জাতীয়তাবাদ এক্ষণে মুসলিম বাঙলার জাতীয়তাবাদে তথা পাকিস্তানি মতাদর্শে প্রায় স্থায়ীরুপ পেতে যাচ্ছে রাষ্ট্র ও সরকারের সচেতন-অচেতন পৃষ্ঠপোষকতায়।

সমাজতন্ত্রের যে ব্যাখ্যাই থাকে না কেন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সামাজিক বৈষম্য আকাশপাতাল রূপ নিয়েছে। লুটেরা অর্থনৈতিক সংস্কৃতি স্থায়ীরুপ পেতে যাচ্ছে আফ্রিকার অধিকাংশ দেশ, মধ্যপ্রাচ্য, রাশিয়া, চীন, কম্পোচিয়া, লাউস ইত্যাকার স্বৈরতান্ত্রিক দেশের পথ ধরে সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র ও শিল্প-বাণিজ্যিক গোষ্ঠীর কোটারি, রাজনীতি ও অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে। প্রকৃত রাজনীতির লোকেরা অনেকটাই ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্র যখন বা সরকার যখন ধর্মের প্রশ্নে ধর্মের ভেকধারী রাজনৈতিক ব্যবসায়ীদের সাথে সমঝোতার পথ ধরে তখন ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থার যে আধুনিক দর্শন তা ভূলুণ্ঠিত হয়। এক্ষেত্রে তখন প্রশ্ন আসে সংবিধানের বিচারে তাহলে আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি?

শেয়ার করুন