দেশের ক্রমবর্ধমান উৎপাদন খাত সিরামিকশিল্প। করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারিকালে দেশে এ শিল্পের ব্যবসা স্বাভাবিক হলেও বিদেশের বাজারে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না সিরামিক পণ্য। ফলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে এ পণ্যের রফতানি।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন বলছে, চলতি (২০২০-২০২১) অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই- ডিসেম্বর) বিদেশের বাজারে প্রায় ১৫ কোটি ডলারের সিরামিক পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ দশমিক ১৮ শতাংশ কম। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের প্রথমার্ধে প্রায় ১৮ কোটি ডলারের সিরামিক পণ্য রফতানি করেছিল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ) সভাপতি ও চায়না বাংলা ইন্ডাস্ট্রিজের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিগত কয়েক বছরের তুলনায় রফতানি কমেছে। সারাবিশ্বের পরিস্থিতি তো জানেনই। মানুষ কাজ হারিয়েছে, ব্যবসায় মন্দা। মানুষ শৌখিন পণ্যের দিকে মনোযোগী কম হচ্ছে।’
তবে করোনার মাঝেও দেশের বাজারে ভালো অবস্থানে আছে সিরামিক পণ্যের ব্যবসা। এক সময় বিত্তবানদের ঘরে শোভা পেত সিরামিকের তৈরি থালা-বাসন। কালের পরিক্রমায় সেই সিরামিক পণ্য এখন সবার ঘরে ঘরে। ষাটের দশকে দেশীয় তাজমা সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজের মাধ্যমে এ খাতে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ। এখন দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি হচ্ছে সিরামিক পণ্য।
বিসিএমইএ’র তথ্য মতে, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে প্রায় ৫৬৭ কোটি টাকার সিরামিক পণ্য বিদেশের বাজারে রফতানি করে বাংলাদেশ। তবে দেশে সিরামিকের বাজার আরও বিস্তৃত। বছরে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয় স্থানীয় বাজারে। প্রায় ১০ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত।
এ বিষয়ে বিসিএমইএ সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘গত বছরের মার্চ-এপ্রিল-মে, এই তিন মাস আমরা কঠিন অবস্থার মধ্যে দিন পার করেছি। সেখান থেকে অবস্থা এখন ভালো। স্থানীয় চাহিদা বেড়েছে। লোকাল মার্কেটে আমাদের আইটেমগুলো ভালো চলছে। আমাদের ইন্টার্নাল অবস্থান ভালো। এ কারণে এক্সপোর্ট কম হলেও কোম্পানিগুলো টিকে আছে।’
এক সময় শুধু থালা-বাটি-গ্লাসকেই সিরামিক পণ্য হিসেবে ভাবা হলেও এখন দেশে টেবিলওয়্যার, টাইলস ও স্যানিটারি ওয়্যার- এই তিন ধরনের সিরামিক পণ্য উৎপাদন হচ্ছে। বিসিএমইএ’র তথ্য অনুযায়ী, দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করতে দেশে সিরামিকশিল্পের প্রায় কয়েকশ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে প্রায় ৭০টি প্রতিষ্ঠান ব্র্যান্ড হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। যারা ইউরোপ, আমেরিকাসহ অন্তত ৫০টি দেশে এ ধরনের পণ্য রফতানি করে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট, হোটেল, রিসোর্টসহ বিনোদন কেন্দ্রে এখন বিদেশি সিরামিক সামগ্রীর পরিবর্তে দেশীয় সিরামিক সামগ্রীর ব্যবহার বেশি। দেশের বাজার বিবেচনা করে বিশ্ববিখ্যাত থাই ব্র্যান্ড কোটোর কারখানা স্থাপন করেছে দেশীয় কোম্পানি গ্রেটওয়াল সিরামিকস।
এ প্রসঙ্গে ইন্টেরিয়র প্রতিষ্ঠান ডিজাইন কোড ইন্টেরিয়রের মালিক আবদুল্লাহ আল মিরাজ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দেশীয় টাইলস ও স্যানিটারি প্রোডাক্ট অনেক মানসম্পন্ন, দেখতেও আকর্ষণীয়। সিরামিক পণ্য যখন একজন ক্লায়েন্ট পছন্দ করেন, তখন বাংলাদেশি প্রোডাক্টই পছন্দ করেন।’