ত্রিপক্ষীয় বৈঠক: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আশা দেখছে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

রোহিঙ্গা
ফাইল ছবি

গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিককে নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে সব চেষ্টাই চালাচ্ছে সরকার। তবে এখনো কোনো রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠাতে পারেনি। বিষয়টি নিয়ে চীনের মধ্যস্থতায় মিয়ানমারের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক হয়েছে বাংলাদেশের। এই বৈঠকের পর বাংলাদেশ নতুন করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আশা দেখছে। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হতে পারে আশা করা হচ্ছে।

ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে আজ মঙ্গলবার দুপুর ২টা থেকে দেড় ঘণ্টা ধরে এই বৈঠক চলে। এতে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মাসুদ বিন মোমেন।

চীনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুও জাওহুইয়ের সভাপতিত্বে বৈঠকে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির আন্তর্জাতিক সহযোগিতা উপমন্ত্রী হাউ দো সুয়ান।

বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে মাসুদ বিন মোমেন পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আমরা প্রথম প্রান্তিকে প্রত্যাবাসন শুরু করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু, ব্যবস্থাপনার জন্য আরও কিছুটা সময় লাগবে বলে জানিয়েছে মিয়ানমার। তাই আমরা দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রত্যাবাসনের কথা বলেছি। তারা এতে সম্মত হয়েছে।

সচিব বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সময় রাখাইনে আন্তর্জাতিক সংস্থার উপস্থিতি বিষয়ক প্রস্তাবে চীন ও মিয়ানমার ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।

ভার্চুয়াল ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে রোহিঙ্গাদের গ্রামভিত্তিক প্রত্যাবাসনের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। তবে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে কক্সবাজারের ক্যাম্পে বসবাসকারী প্রায় আট লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গার মধ্যে ইতিমধ্যে যাচাই করা ৪২ হাজার জনকে দিয়ে প্রত্যাবাসন শুরুর কথা বলা হয়েছে।

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আমরা গ্রামভিত্তিক প্রত্যাবাসনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। কারণ, এতে নিজেদের গ্রামের বা এলাকার সবাই একসঙ্গে গেলে আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে নিরাপদ ও সুরক্ষিত বোধ করবে।

রোহিঙ্গারা যেন মিয়ানমারের আইন-কানুন মেনে চলে, বৈঠকে এ বিষয়ে আশ্বাস চায় মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। তারা আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা এআরএসএ-এর উপস্থিতির বিষয়টিও উল্লেখ করে।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আমরা বলেছি, আমাদের দেশে কোনো সন্ত্রাসীর আশ্রয় নেই। কিছু অপরাধী থাকলেও, তাদের কোনো ধর্মীয় বা রাজনৈতিক পরিচয় নেই।

সচিব বলেন, দ্বিপক্ষীয় যে চুক্তি আছে, তা যদি অক্ষরে অক্ষরে পালিত হয়, সেখানে ১০ লাখের বেশি মানুষকে নিয়ে যেতে বছরের পর বছর লেগে যাবে। গত তিন বছরে ৯০ হাজার নতুন বাচ্চাও জন্মগ্রহণ করেছে। সুতরাং এই টোটাল নম্বরটা বাড়তে থাকবে, অনেক জটিলতা আসতে থাকবে। দ্রুত শুরু করাটার বিকল্প নাই।

প্রসঙ্গত, গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে কয়েক মাসে লাখ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। এর আগে বিভিন্ন সময় কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসে। সবমিলিয়ে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নাগরিক এখন বাংলাদেশে রয়েছে। তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরাতে সবধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ।

শেয়ার করুন