রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনার লক্ষ্যে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে ত্রিপক্ষীয় ভার্চুয়াল বৈঠক আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
মঙ্গলবার দুপুর ২টায় সচিব পর্যায়ের এই বৈঠক শুরু হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হতে পারে। বৈঠকে নতুন একটি প্রস্তাবও মিয়ানমারকে দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
রোহিঙ্গাদের আস্থা ফেরানোর জন্য গ্রামভিত্তিক প্রত্যাবাসন শুরুর প্রস্তাব বৈঠকে দেওয়া হবে বলে সোমবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
তিনি বলেন, কোনো নির্দিষ্ট একটা গ্রামের রোহিঙ্গাদের পাইলট প্রকল্প হিসাবে প্রত্যাবাসন করার মাধ্যমে প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়। প্রত্যাবাসনের সময় জাতিসংঘ ও তার সংস্থাসমূহ, চীন, আসিয়ান, ভারত ও জাপানসহ যে কোনো প্রকার আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততা করা গেলে রোহিঙ্গাদের মধ্যে আস্থার সৃষ্টি হবে।
বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলছেন, ভার্চুয়াল আলোচনায় প্রত্যাবাসন শুরুর কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং প্রত্যাবাসন শুরুর প্রক্রিয়াগত কাজগুলো শুরুর তাগিদ আসতে পারে। তারা মনে করেন, মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে আন্তরিক নয়। তারা তাই বিভিন্ন ধরনের সময়ক্ষেপণ করার কৌশল গ্রহণ করে থাকে।
মিয়ানমারে ২০১৭ সালের আগস্টে শুরু হওয়া সামরিক বাহিনীর নিরাপত্তা অভিযানে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নির্বিচারে দমন-পীড়ন চালানো হয়। ওই সময়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। জাতিসংঘ উদ্বাস্তু সংস্থা ইউএনএইচসিআরের সহযোগিতায় বাংলাদেশ সরকার ২০১৭ সালের অভিযানের পর যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে; তাদের নাম, পরিচয় ও রাখাইন রাজ্যের কোন এলাকা থেকে এসেছে তার বিস্তারিত বিবরণসহ বায়োমেট্রিক নিবন্ধন করা হয়েছে।
নিবন্ধনের তথ্য মোতাবেক, মিয়ানমারের অভিযানের পর আট লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এই তালিকা মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মিয়ানমার তালিকা থেকে ৪২ হাজার রোহিঙ্গা নাম যাচাই করেছে। তার মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ নাম মিয়ানমার প্রত্যাখ্যান করেছে। ফলে প্রায় ২৮ হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার ক্লিয়ার করেছে। কিন্তু তার মধ্যে কোনো রোহিঙ্গাকে এখনও ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে কি না- তা নিয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে আস্থার অভাব দেখা দিয়েছে। এ কারণে দুই দফায় ফেরত পাঠানোর আয়োজন করা হলেও রোহিঙ্গাদের কেউ রাখাইন রাজ্যে ফিরে যেতে চাননি। তারপর কোভিড-১৯ মহামারি শুরু হলে প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত যাবতীয় কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে যায়। তার ওপর মিয়ানমারে পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।