প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ইতোমধ্যে তিন কোটি ডোজ করোনা ভ্যাকসিন সংগ্রহের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। শিগগিরই ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম শুরু হবে। আমাদের সরকারের সময়পোযোগী এ সকল দিক নির্দেশনা, উদ্যোগ, পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে দেশে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুহার বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম।’
বুধবার (২০ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সাংসদ কাজিম উদ্দিন আহম্মেদের (ময়মনসিংহ-১১) প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন তিনি। এর আগে সকালে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হলে প্রশ্নোত্তর পর্ব টেবিলে উত্থাপিত হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী করোনাকালে তার সরকারের যাবতীয় উদ্যোগ তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের বর্তমান করোনা পরিস্থিতি এবং অর্থনীতিতে তার প্রভাব বিবেচনায় রেখেই ইতোমধ্যে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুমোদন করা হয়েছে যেখানে যথাযথ কর্মকৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। এ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন মেয়াদকাল হবে জুলাই ২০২০ থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত । কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির ফলে সৃষ্ট বিরূপ আর্থ-সামাজিক প্রভাবকে প্রশমিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত তাৎক্ষণিক ও স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপসমূহ কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি করা। বৈদেশিক সফর এবং বিলাসবহুল ব্যয়কে নিরুৎসাহিত করা।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনার সময় ৬ হাজার ৯৯০ জন চিকিৎসক, ৫ হাজার ২৪ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স, ৩৮১ জন ফার্মাসিস্ট, ২০২ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া, স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ৪ হাজার ২১৭ জন চিকিৎসককে করোনাভাইরাস সংক্রমণ সংক্রান্ত তথ্য ও চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য হটলাইনে যুক্ত করা হয়েছে।
‘সরকারিভাবে ঢাকার মধ্যে ৫৪টি এবং ঢাকার বাইরে ৩৭টিসহ সর্বমোট ৯১টি পরীক্ষাগারে প্রতিদিন কোভিড-১৯ এর স্যাম্পল বা নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এছাড়া দেশের ৬৪টি জেলার ৫ হাজার ১০০ জন ডাক্তার এবং ১ হাজার ৭০০ জন নার্সকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট ও ইনফেকশন প্রিভেনশন এন্ড কন্ট্রোল বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার করোনা ভাইরাসের সঙ্কটের কারণে দেশের বিভিন্ন সেক্টরের, বিভিন্ন শ্রেণির ও পেশার মানুষের জীবন এবং জীবিকা রক্ষার্থে মোট প্রায় ১ লাখ ১২ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকার ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে যা দেশের মোট জিডিপির ৪ দশমিক ০৩ শতাংশ।’
এ প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর মধ্যে রয়েছে-
. রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিশেষ তহবিল হিসেবে ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ;
. ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা হিসেবে ৩৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান;
. ক্ষুদ্র (কুটির শিল্পসহ) ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা হিসেবে ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান;
. বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবর্তিত ইডিএফ-এর সুবিধা বাড়ানো বাবদ ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ;
. চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের বিশেষ সম্মানী হিসেবে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান;
. করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত অথবা মৃত্যুর ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৭৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ;
. বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ বাবদ ২ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা বরাদ্দ;
. ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি বাবদ ২৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ;
. লক্ষ্যভিত্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ বাবদ ১ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দ;
. সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বৃদ্ধি বাবদ বরাদ্দ ৮১৫ কোটি টাকা;
. গৃহহীন মানুষের জন্য গৃহ নির্মাণ বাবদ বরাদ্দ ২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা;
. বোরো ধান/চাল ক্রয় কার্যক্রম বাবদ বরাদ্দ ৮৬০ কোটি টাকা;
. কৃষি যান্ত্রিকীকরণ কার্যক্রম বাবদ ৩২ হাজার ২২০ কোটি টাকা,
. কৃষি ভর্তুকি বাবদ ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা;
. কৃষি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম বাবদ বরাদ্দ ৫ হাজার কোটি টাকা;
. নিম্ন আয়ের পেশাজীবী কৃষক/ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য পুনঃঅর্থায়ন স্কিম বাবদ বরাদ্দ ৩ হাজার কোটি টাকা;
. কর্মসৃজন কার্যক্রম হিসেবে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক এবং পিকেএসএফ-এর মাধ্যমে ২ হাজার কোটি টাকা;
. বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর এপ্রিল-মে ২০২০ মাসে স্থগিত করা ঋণের আংশিক সুদ মওকুফ বাবদ সরকারের ভর্তুকি হিসেবে ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ;
. ক্রেডিট রিস্ক শেয়ারিং স্কিম (সিআরএস) ফর এসএমই সেক্টরে ৬ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা;
. রফতানিমুখী তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য ও জুতা শিল্পের দুঃস্থ শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম প্রবর্তন বাবদ ১,১৩২ কোটি টাকা।