দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে করোনাভাইরাসের লাখ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাঠাবে ভারত। তাদের এই সিদ্ধান্তে যারপরনাই খুশি প্রতিবেশীরা। এর মাধ্যমে ভ্যাকসিন কূটনীতিতে অন্তত এ অঞ্চলে চীনকে কোণঠাসা করে ফেলেছে ভারতীয়রা। খবর রয়টার্সের।
বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাকসিন উৎপাদকের ক্ষমতা বন্ধুত্ব গড়তে ব্যবহার করছে ভারত। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান ও মালদ্বীপে বিনাখরচেই পৌঁছাতে শুরু করেছে তাদের সিরাম ইনস্টিটিউটের উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা ভ্যাকসিন। শিগগিরই যাবে মিয়ানমার, সিশেলসের মতো দেশগুলোতেও।
নেপালের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হৃদয়েশ ত্রিপাঠি বলেন, অনুরোধে ভ্যাকসিন সরবরাহ করে ভারত সরকার তাদের সদিচ্ছা দেখিয়েছে। এটি একদম জনগণের স্তরে, যারা করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ভারত এমন সময় নেপালের প্রতি সৌহার্দ্য দেখাল, যার কিছুদিন আগেই সীমান্ত বিরোধের জেরে উত্তপ্ত ছিল দুই দেশের সম্পর্ক। এতে প্রভাব ফেলছিল হিমালয় পাদদেশে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবও।
চীনও নেপালকে করোনা মহামারি মোকাবিলায় সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে। তারা সিনোফার্মের ভ্যাকসিন দিতে চাইলেও এখনো সেটি ব্যবহারের অনুমোদন দেয়নি নেপাল সরকার।
নেপালের ওষুধ প্রশাসনের মুখপাত্র সন্তোষ কে সি বলেছেন, আমরা অনুমোদন দেয়ার আগে তাদের (সিনোফার্ম) আরও নথিপত্র ও তথ্য জমা দিতে বলেছি।
চীন-ভারত প্রতিযোগিতা বাংলাদেশেও
চীনের সিনোভ্যাক বায়োটেকের কাছ থেকে ১ লাখ ১০ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু এই কার্যক্রমে ঢাকা যৌথ বিনিয়োগের শর্তে রাজি না হওয়ায় ভেস্তে যায় সেই পরিকল্পনা।
এর বদলে বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে জরুরি ভিত্তিতে ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহ দেখায় এবং বৃহস্পতিবারই দেশটির দেয়া উপহার হিসেবে ২০ লাখ ডোজের প্রথম চালান ঢাকায় এসে পৌঁছেছে।
বাংলাদেশের এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ভারত অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন তৈরি করছে, সব পার্থক্য এখানেই। এটি সাধারণ রেফ্রিজারেটরের তাপমাত্রায় সংরক্ষণ এবং পরিবহন করা যায়, যে সুবিধা বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে রয়েছে।
তবে ভ্যাকসিন হাতে না পেলেও পাঁচ লাখ ডোজ পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়ে বৃহস্পতিবার চীনকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে ভারতের ‘চিরশত্রু’ পাকিস্তান। চলতি মাস শেষ হওয়ার আগেই বিনামূল্যে পাকিস্তানে এসব ভ্যাকসিন পাঠানোর কথা রয়েছে বেইজিংয়ের।
বহুবছর ধরেই শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মালদ্বীপের মতো দেশগুলোতে চীনা বিনিয়োগের সঙ্গে তাল মেলানোর চেষ্টা করছে ভারত। ইতোমধ্যে ওইসব দেশে বন্দর, সড়ক, বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো প্রকল্পে বিপুল অর্থ ব্যয় করেছে চীনারা।
তবে এ অঞ্চলের পর্যটননির্ভর অর্থনীতির দেশগুলোতে ভ্যাকসিনের চাহিদাই ভারত সরকারকে প্রভাব বিস্তারের সুবর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছে বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা।
সূত্রের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, আগামী তিন-চার সপ্তাহের মধ্যে ভারত প্রথমধাপের সহায়তা হিসেবে এক থেকে দুই কোটি ডোজ পাঠাবে প্রতিবেশী দেশগুলোতে। এসব দেশে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ, ভ্যাকসিন প্রদানে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের মতো কাজেও সাহায্য করছে ভারতীয়রা।
রাজিব ভাটিয়া নামে ভারতের এক সাবেক রাষ্ট্রদূত বলেন, এখানে সুপরিকল্পিত একগুচ্ছ কার্যকলাপ দেখতে পাবেন। এটি আমাদের ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতির যথার্থতা নিশ্চিত করে। এটি আমাদের উদ্ভাসিত হওয়ার সময়।