ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের বড় সংগ্রহ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

সাকিব আল হাসান

চট্টগ্রামে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তুলোধুনো করেছেন তামিম বাহিনী। ইংসের শুরুতে দ্রুত দুই উইকেট হারানোর পর হাল ধরেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান। দুজনের ব্যাট থেকেই আসে পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস। আর শেষদিকে গিয়ে ফিনিশিংয়ের দায়িত্বটা নেন অন্য দুই অভিজ্ঞ তারকা মুশফিকুর রহীম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

সিনিয়র চার তারকা পরিস্থিতি বুঝে কখনও ধীর, কখনও গতির সঞ্চার করেছিলেন বাংলাদেশ ইনিংসে। তাতেই সাগরিকার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টাইগাররা পেয়েছে ৬ উইকেটে ২৯৭ রানের বড় সংগ্রহ। এই মাঠে এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ।

হোয়াইটওয়াশ এড়িয়ে ওয়ানডে সুপার লিগে পয়েন্টের খাতা খুলতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে লক্ষ্য ২৯৮ রানের। আগের দুই ম্যাচে যথাক্রমে ১২২ ও ১৪৮ রানে অলআউট হওয়া ক্যারিবীয়দের জন্য ২৯৮ রান রীতিমতো পাহাড়সম লক্ষ্য। তাদের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে সাগরিকায় হওয়া সবশেষ ওয়ানডে ম্যাচটি। যেখানে আগে ব্যাট করে ২৮৬ রান করেছিল জিম্বাবুয়ে। যা মাত্র ৪২.১ ওভারেই তাড়া করে ফেলেছিল বাংলাদেশ দল।

তবে বছর তিনেক আগে হওয়া সেই ম্যাচের উইকেট ও কন্ডিশনের সঙ্গে আজকের পার্থক্য অনেক। যা বোঝা গেছে বাংলাদেশ ইনিংসের শুরুর দিকে। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে প্রথম পাওয়ার প্লে’টা ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছে টাইগাররা। প্রথম ১০ ওভারে ২ উইকেট হারালেও, স্কোরবোর্ড যোগ হয় ৫৩ রান। তবে এরপর কমতে থাকে রানের গতি। পরের ২০ ওভারে আসে মাত্র ৮৪ রান।

আগের দুই ম্যাচের মতোই হতাশ করেন দুই তরুণ লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্ত। ইনিংসের প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফিরে যান লিটন। দ্বিতীয় উইকেটে অধিনায়ক তামিম ইকবালের সঙ্গে ৩৭ রান যোগ করে কাইল মায়ারসের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে ধরা পড়েন ৩০ বলে ২০ রান করা শান্ত।

দুই তরুণ ব্যর্থ হলেও, পরে চার অভিজ্ঞই তুলে নিয়েছেন নিজেদের ব্যক্তিগত ফিফটি। ইনিংসের শুরুতে বেশ সাবলীল ছিলেন তামিম। একপর্যায়ে তিনি মাত্র ২৭ বলে করেন ২৮ রান। এরপর যেন বন্দী হয়ে যান খোলসে। পঞ্চাশে যেতে খেলে ফেলেন ৭০টি বল। যেখানে ছিল মাত্র ২টি চারের মার। তবে ফিফটি পূরণের ঠিক পরের বলেই নিজের ট্রেডমার্ক ইনসাইড আউট শটে হাঁকান ইনিংসের প্রথম ছক্কা। যদিও ইনিংসটি বেশি বড় করতে পারেননি টাইগার অধিনায়ক।

তৃতীয় উইকেটে তামিম ও সাকিব মিলে যোগ করেন ৯৩ রান। কিন্তু এতে খেলে ফেলেন ১১৬টি বল। দুজনের কেউই ইনিংসের মাঝপথে সাবলীল ব্যাটিং করতে পারেননি। সিঙ্গেলস-ডাবলস বের করতে রীতিমতো লড়াই করতে হয়েছে দুজনকেই। জুটি বেঁধে ২ হাজার রানের মাইলফলক পূরণ করেছেন সাকিব ও তামিম। তাদের জুটি ভাঙে দলীয় ১৩১ রানে গিয়ে, তামিম ব্যক্তিগত ৬৪ রানে সাজঘরে ফিরে গেলে। ক্যারিয়ারের ৪৯তম ফিফটিতে খেলা ৮০ বলের ইনিংসে ৩ চারের সঙ্গে ১ ছক্কা হাঁকান তিনি।

তামিম ফিরে যাওয়ার পর ৪৮তম ওয়ানডে ফিফটি তুলে নেন সাকিব। তিনি ৩ চারের মারে ফিফটি পূরণ করতে খেলেন ৭৮ বল। ৮১ বল খেলে সাকিব আউট হন ৫১ রান করে। সাকিবের বিদায়ের পর রানের গতি বাড়ানোর মিশনে নামেন ব্যক্তিগত সম্পর্কে ‘ভায়রা ভাই’ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহীম। যা বেশ সফলভাবেই করেন এ দুজন। তাদের জুটিতে আসে ৭২ রান, মাত্র ৫৮ বলে।

মূলত মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর জুটিতে ভর করেই আসে ২৯৭ রানের বড় সংগ্রহ। সাকিব-তামিম যেখানে করেন ধীরগতির ফিফটি, সেখানে বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তুলেছেন মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিক। ক্যারিয়ারের ৩৯তম ফিফটি করতে মুশফিক খেলেন ৪৭ বল। মাহমুদউল্লাহর ১৭তম ফিফটি আসে মাত্র ৪০ বলে। দারুণ এক ছয়ের মারে পঞ্চাশ পূরণ করেন মাহমুদউল্লাহ। তাদের ব্যাটেই শেষ ১০ ওভারে ১০০ রান পায় বাংলাদেশ।

পুরো ৫০ ওভার শেষ করে আসতে পারেননি মুশফিক। তিনি সাজঘরে ফেরেন ৪৭তম ওভারে, খেলেন ৫৫ বলে ৬৪ রানের ইনিংস। যেখানে ছিল ৪ চারের সঙ্গে ২টি ছয়ের মার। তবে শেষপর্যন্ত খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ। ৪৪ বলের ইনিংসে সমান ৩টি করে চার-ছয়ের মারে ৬৪ রান করেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান। এছাড়া সৌম্য সরকার ৮ বলে ৭ ও সাইফউদ্দিন ২ বলে করেন ৫ রান।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে ২টি করে উইকেট নেন রেয়মন রেইফার ও আলঝারি জোসেফ।

শেয়ার করুন