ভারতে বিতর্কিত কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে বড় বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন দেশটির আন্দোলনরত কৃষকরা। আগামীকাল মঙ্গলবার প্রজাতন্ত্র দিবসে (২৬ জানুয়ারি) ‘কৃষাণ গণতন্ত্র প্যারেড’ নামে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হবে।
এতে অংশ নেবে প্রায় দুই লাখ ট্রাক্টর (যান্ত্রিক লাঙ্গল)। ইতোমধ্যে এই বিক্ষোভের জন্য দিল্লির পুলিশের অনুমতিও মিলেছে। এদিকে প্রজাতন্ত্র দিবস সামনে করে ইতোমধ্যে জড়ো হতে শুরু করেছেন কৃষকরা।
শনিবার মধ্যপ্রদেশে কৃষকদের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল করে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। তবে ব্যাপক লাঠিচার্জ-জলকামান ব্যবহার করে বিক্ষোভটি ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। খবর দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও ন্যাশনাল হেরাল্ড।
আন্দোলনকারী কৃষকদের সমর্থনে ভারতের মধ্যপ্রদেশে দুই সপ্তাহব্যাপী প্রতিবাদ কর্মসূচির ঘোষণা করেছে কংগ্রেস। এরই অংশ হিসাবে শনিবার রাজধানী ভোপালে হাজারো সমর্থকদের নিয়ে মিছিলে নামে কংগ্রেস। তাতে নেতৃত্ব দেন রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথ।
এলোপাতাড়ি লাঠিচার্জ, মুহুর্মুহু জলকামানের সঙ্গে কাঁদানে গ্যাস। কংগ্রেসের কৃষি আইনবিরোধী মিছিল ঘিরে ব্যাপক লাঠিচার্জ। পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হয় বহু কংগ্রেস সমর্থক।
ধস্তাধস্তিতে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মীও। শান্তিপূর্ণ মিছিলে দলের সমর্থকদের প্রতি পুলিশের এই আচরণের নিন্দা জানিয়েছে কংগ্রেস।
বিতর্কিত তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে গত প্রায় দেড় মাস ধরে রাজধানী নয়াদিল্লিসহ প্রায় সারা দেশেই বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন দেশটির কৃষকরা। এর সঙ্গে যোগ দিয়েছে অন্তত ৪০টি কৃষি সংগঠন। আইন প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন থেকে সরে আসবে না বলে স্পষ্ট জানিয়েছে তারা।
সংকট সমাধানে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের সঙ্গে মোট ১১ বার বৈঠকে বসেছেন কৃষক সংগঠনগুলোর নেতারা। তারপরও কোনো মীমাংসায় পৌঁছাতে পারেনি দুপক্ষ। উপায়ান্তর না দেখে গত সপ্তাহে এই আইনগুলোর ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিমকোর্ট।
এ ছাড়া বিষয়টির সুরাহা করতে একটি কমিটি গঠন করেছে তারা। কমিটিকে আলোচনা করে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সরকারের সঙ্গে কৃষক নেতাদের সর্বশেষ বৈঠক বসে বৃহস্পতিবার। এদিন সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়, আগামী দেড় বছরের জন্য আইনগুলো স্থগিত রাখতেও তারা প্রস্তুত।
এ সময়ের মধ্যে দুপক্ষের একটি কমিটি গঠন করে আইনের আপত্তিকর বিষয় ও ফসলের দামের আইনি গ্যারান্টি নিয়ে আলোচনা হবে। কিন্তু এদিন রাতেই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেয় কৃষক সংগঠনগুলো। ফলে মোদি সরকারের মন্ত্রীদের আলোচনা কার্যত কানাগলিতে ঢুকে পড়ে।
এক বিবৃতিতে নেতারা জানান, আইনগুলো বাতিল না করা পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরবেন না। সেইসঙ্গে দাবি আদায় হলে প্রজাতন্ত্র দিবসে ট্রাক্টর মিছিলের হুমকি দেন।
কৃষক নেতাদের এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় শনিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা দিল্লির বিজ্ঞান ভবনের এক বৈঠকে জানিয়ে দেন, সরকারের পক্ষেও এর থেকে নমনীয় হওয়া সম্ভব নয়।
সরকার আগেই জানিয়ে দিয়েছে, তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার হবে না। এ বিষয়ে সরকারের দিক থেকে যতখানি সম্ভব বেশি প্রস্তাব দেওয়ার ছিল, তা সরকার দিয়ে দিয়েছে। ফলে ফের আন্দোলনের পথেই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন কৃষকরা।
শনিবার প্রতিবাদী কৃষক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়, দিল্লি পুলিশ তাদের ট্রাক্টর মিছিলের অনুমতি দিয়েছে। নেতারা আরও জানান, সরকারের যাবতীয় বাধা অতিক্রম করে তারা প্রায় ১০০ কিমি দীর্ঘ ট্রাক্টর মিছিলের আয়োজনে আরও কিছুটা এগিয়ে এগিয়েছেন।
এদিন দিল্লি পুলিশের সঙ্গে এক বৈঠকের পর ‘স্বরাজ ইন্ডিয়া’র নেতা যোগেন্দ্র যাদব জানান, প্রজাতন্ত্র দিবসে কৃষক গণতন্ত্র যাত্রায় শামিল হবেন বিক্ষোভরত চাষিরা। এই কৃষক নেতা আরও জানান, গাজীপুর, সিংঘু, তিকরি, শাহজানপুরসহ দিল্লির
বিভিন্ন সীমান্তের ব্যারিকেড সরিয়ে দেওয়া হবে এবং কৃষকরা দিল্লিতে প্রবেশ করবেন। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন সশস্ত্র বাহিনীর কুচকাওয়াজে যোগ দেবেন, তখন হরিয়ানা, পাঞ্জাব ও পশ্চিম উত্তরপ্রদেশসহ প্রতিবেশী রাজ্যের কয়েক লাখ কৃষক মিছিলে অংশ নেবেন।
ইতোমধ্যেই এই বিক্ষোভ র্যালিতে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাক্টর নিয়ে রওয়ানা দিয়েছেন কৃষকরা। ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়ন (একতা-উগ্রাহন)-এর জেনারেল সেক্রেটারি শুকদেব সিং শনিবার জানিয়েছিলেন, পাঞ্জাবের খানৌরি
এবং হরিয়ানার ডাবওয়ালি থেকে ৩০ হাজারেরও বেশি ট্রাক্টর ও ট্রলি দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে।