‘টিকা নেয়াটা যার যার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা’

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালিক
ফাইল ছবি

‘টিকা নেয়াটা যার যার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা। জোর করে আমরা কাউকে টিকা দেব না।’-বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

আজ মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগের বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) করোনার টিকা সংরক্ষণাগার ও প্রস্তুতি দেখতে এসে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।

universel cardiac hospital

তিনি বলেন, আমরা আহ্বান জানাব টিকা নেয়ার জন্য। কারণ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকা কার্যকর ব্যবস্থা। টিকার জন্য তো আমরা উদগ্রীব ছিলাম। কাজেই আমি আহ্বান করবো, আপনারা যারা আগ্রহী তারা টিকা নিতে আসবেন।

কারা টিকা নিতে পারবে কারা নিতে পারবে না সে প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আইসিটি মন্ত্রণালয় থেকে অ্যাপস তৈরি করা হয়েছে। অ্যাপসের মাধ্যমে কারা টিকা নিতে পারবে আর কারা টিকা নিতে পারবে না তা জানা যাবে। যাদের আমরা টিকা দিতে চাচ্ছি অর্থাৎ বয়স যদি আমরা হিসাব করি, ৫৫ বছর বয়সের ওপর যারা আছেন তারা নিবন্ধন করতে পারবেন। যারা ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ বাহিনীর সদস্য ও গণমাধ্যমকর্মী তারাও নিবন্ধন করতে পারবেন। গর্ভবতী মা ও অনেক অসুস্থ ব্যক্তি সেখানে নিবন্ধন করতে পারবেন না।

অ্যাপস সম্পর্কে জানতে চাইলে জাহিদ মালেক বলেন, যদিও অ্যাপসের টেকনিক্যাল বিষয়ে আমার পুরোপুরি এখনো জানা নেই। যতটুকু জানি, যারা অ্যাপসের গাইডলাইন মেনে টিকা নিতে নিবন্ধন করবে বা নিবন্ধন করতে সক্ষম হবে তারা সবাই টিকা পাবে।

এছাড়া তিনি এ বিষয়ে বিরূপ প্রচার-প্রচারণা না করে সবাইকে টিকা নেয়ার অনুরোধ জানান।

এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কনককান্তি বড়ুয়া ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খোরশেদ আলম এবং বিএসএমএমইউ হাসপাতাল পরিচালক উপস্থিত ছিলেন।

ঢামেক হাসপাতাল ভ্যাকসিন কেন্দ্রে স্বাস্থ্যমন্ত্রী

এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভ্যাকসিন কেন্দ্র পরিদর্শন করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খুব সুন্দর ব্যবস্থা নিয়েছে। যারা ভ্যাকসিন নিতে আসবেন তাদের জন্য বসার জায়গার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রথমে ওয়েটিং এরিয়ায় বসে নিবন্ধন করবেন তারপর তাদের ভ্যাকসিনেশনের জন্য নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে পুরুষদের জন্য আলাদা এবং নারীদের জন্য আলাদা কক্ষের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ভ্যাকসিন নেয়ার পর যদি কোনো সমস্যা দেখা দেয় সে জন্য চিকিৎসার সব ব্যবস্থা করা আছে, পাশাপাশি বেডও রয়েছে। কেউ ভ্যাকসিন নেয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে চলে যাবে না কিছুক্ষণ অপেক্ষা করবে এবং ডাক্তার-নার্সদের অবজারভেশনে থাকবে, তারা লক্ষ রাখবেন। যখন মোটামুটি ভালো ফিল করবে তখন সে চলে যেতে পারবে। এটা একদিনের কার্যক্রম না, দীর্ঘদিন চলবে এবং এখানে ব্যবস্থাও সেভাবে করা হয়েছে।

ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রাম হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করবে না জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এখানে স্বাভাবিক যে চিকিৎসা হয় তার কোনো ব্যাঘাত ঘটাবে না। এটা একেবারে আলাদা জায়গা। হাসপাতালের আন্ডারগ্রাউন্ডে বা বেজমেন্টে ভ্যাকসিনেশনের জায়গা করা হয়েছে, এতে অন্য রোগীদের কারও কোনো অসুবিধা হবে না। এটা সবচেয়ে বড় হাসপাতাল, চিকিৎসাও বেশি। আমরা মনে করি, এখানে ভ্যাকসিন নেয়ার লোকও অনেক বেশি থাকবে তার জন্য সব প্রস্তুতি নেয়া আছে।

ভ্যাকসিনের ব্যাপারে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশবাসী ভ্যাকসিন চাচ্ছিল। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণ করেছেন, প্রতিরোধ করেছেন। এখন পৃথিবীর মধ্যে তুলনা করলে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি অনেক ভালো আছে। আপনারা জানেন সংক্রমণের হার আরও নিচে নেমে এসেছে এবং মৃত্যুর হারও অন্য দেশের তুলনায় অনেক কম আছে অন্য দেশের তুলনায়। আমেরিকায় প্রত্যেক দিন চার হাজার মানুষ মারা যায়। অর্থাৎ দুদিনে আট হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে, বাংলাদেশে সেখানে ৯ মাসে আট হাজার মানুষ মারা গেছে। তার জন্য আমরা আফসোস করি। তুলনা করলে মনে করি আমরা ভালো করেছি।

ভ্যাকসিনের আশায় ছিল পুরো দেশবাসী, আমরাও সেই চেষ্টা করেছি। সেই লক্ষ্যে সবার কাজ করেছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও কাজ করেছেন। আমরা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে ২০ লাখ ভ্যাকসিন উপহার পেয়েছি আর ৫০ লাখ ক্রয় করা ভ্যাকসিন চলে আসছে। মোট ৭০ লাখ ভ্যাকসিন আমাদের হাতে আছে এবং সেই ৭০ লাখ ভ্যাকসিন আমরা ৩৫ লাখ মানুষকে দিতে পারব। এই ভ্যাকসিনটি খুব নিরাপদ ভ্যাকসিন, খুব ভালো ভ্যাকসিন।

শেয়ার করুন