মিথ্যাচার, দ্বি-চারিতা, হঠকারিতা এবং ক্ষমতার দর্পের নগ্ন প্রভাব, মাঠ পর্যায়ের পোড়খাওয়া রাজনীতিনীকদেরকে প্রতিনিয়তই কোণঠাসা করছে। প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নীতি নির্ধারণী ফোরাম থেকে তৃণমূলকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হলেও কার্যক্ষেত্রে পুরোটাই যে প্রহসন সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোটভাই আবদুল কাদের মির্জার বক্তব্যে সেই চিত্র স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠেছে। সত্যবচনের নামে নোয়াখালীর স্থানীয় রাজনীতিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের দুষ্টের পোষন এবং শিষ্টের দমন সম্পর্কে তিনি যেসব বক্তব্য রেখেছেন তা অনেকাংশেই যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য। এক্ষেত্রে প্রশ্ন হচ্ছে, আওয়ামী লীগের মতো সুপ্রাচীন একটি রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব কতটুকু? শুধুই কী কেন্দ্রে বসে প্রতিদিন বিবৃতি দেওয়ার মধ্যেই দায়িত্ব সীমাবদ্ধ, নাকি মাঠ পর্যায়ের সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভূমিকা পালনেরও বিষয় আছে?
বাস্তবতা পর্যালোচনায় বলা যায়, তৃণমূল নয়, বরং উপর থেকে চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই মাঠ পর্যায়ে পরিচালিত হচ্ছে রাজনীতির কর্মকান্ড। ফলশ্রুতিতে দলের ভেতরে সৃষ্টি হচ্ছে অন্তর্দলীয় কোন্দল। এক্ষেত্রে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রকট রূপ নিচ্ছে অন্তর্দলীয় কলহ। কাদের মির্জার বক্তব্যে যে চিত্র ফুটে ওঠেছে তা কেবল নোয়াখালীর চিত্র নয়; বরং সারাদেশেই এমন বাস্তবতা বিরাজমান।
আমরা মনে করি, অপ্রত্যাশিত এধরনের পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ব্যক্তি হিসেবে সাধারণ সম্পাদককে আরও বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন। কেননা যেকোনো রাজনৈতিক দলের নিউক্লিয়াস বলা হয় তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের। মূলত তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও দলের প্রতি ভালোবাসাই দলকে বড় ধরনের সাফল্য এনে দেয়। তাই টানা এক যুগ ক্ষমতায থাকার কারণে আওয়ামী লীগের পক্ষে তৃণমূলকে উপেক্ষা করার কোনোই অবকাশ নেই। দলের কল্যাণে অবশ্যই তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ রক্ষার পাশাপাশি তাদের মতামতকেও গুরুত্বের সহকারে বিবেচনায় নেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে তৃণমূলের সাথে সেতুবন্ধন তৈরি করতে প্রযোজনে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্ব প্রাপ্তদের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিশেষ তাগিদ দিতে হবে। আর এই কাজটিও দলের সাধারণ সম্পাদককেই সঠিকভাবে তদারকি করা জরুরি।