চট্টলার নতুন মেয়র রেজাউল করিম

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

রেজাউল করিম চৌধুরী
রেজাউল করিম চৌধুরী

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী। নৌকা প্রতীকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়ে আগামী পাঁচ বছরের জন্য চট্টগ্রামের নগরপিতার দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিচ্ছন্ন এ রাজনৈতিক নেতা।

রেজাউল করিম ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৮৪ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেন পেয়েছেন ৫২ হাজার ৪২৯ ভোট। নির্বাচন ভোট পড়েছে ২২ শতাংশ।

বুধবার রাত পৌনে ১টায় রেজাউল করিমকে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান। তিনি নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে স্থাপিত নির্বাচন কমিশনের অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে ফল ঘোষণা করছিলেন। এ সময় সেখানে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী ও সমর্থকরা বিজয় উল্লাসে ফেটে পড়েন।

তবে সেখানে বিএনপির মেয়র প্রার্থী বা তার সমর্থক কাউকে দেখা যায় নি।

রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, চট্টগ্রাম সিটির ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন ভোটারের মধ্যে নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৫৪৩ জন। বৈধ ভোটের সংখ্যা ৪ লাখ ৩৫ হাজার ৪৯০। বাতিল হয়েছে ১ হাজার ৫৩ ভোট। ভোটের শতকরা হার ২২ দশমিক ৫২ শতাংশ।

নির্বাচনের মোট ৭৩৫টি কেন্দ্রের মধ্যে স্থগিত থাকা দু’টি কেন্দ্র বাদে ৭৩৩টি কেন্দ্রের ফলে রেজাউল করিম চৌধুরী নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন পেয়েছেন ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট। দু’জনের ভোটের ব্যবধান ৩ লাখ ১৬ হাজার ৭৫৯।

মেয়র পদে অন্য প্রার্থীদের মধ্যে মোমবাতি প্রতীক নিয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এমএ মতিন পেয়েছেন ২ হাজার ১২৬ ভোট, আম প্রতীক নিয়ে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আবুল মনজুর পেয়েছেন ৪ হাজার ৬৫৩ ভোট, হাতপাখা প্রতীক নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. জান্নাতুল ইসলাম পেয়েছেন ৪ হাজার ৯৮০ভোট, চেয়ার প্রতীক নিয়ে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ পেয়েছেন ১ হাজার ১০৯ ভোট ও হাতি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে খোকন চৌধুরী পেয়েছেন ৮৮৫ ভোট।

এবারের নির্বাচনে ২টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে নির্বাচন হয়নি। এরমধ্যে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী তারেক সোলেমান সেলিমের মৃত্যুতে ওই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন স্থগিত করে নতুন তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। এ ওয়ার্ডে ভোট হবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি। এ ছাড়া ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন কাউন্সিলর পদপ্রার্থী মো. হারুনুর রশিদ।

এর আগে ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল চসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দীন পেয়েছিলেন ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক মেয়র এম মনজুর পান ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৩৭ ভোট। চসিকের পঞ্চম নির্বাচিত পরিষদের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের মেয়াদ গত ৫ আগস্ট শেষ হয়। বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন চসিকের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ফল ঘোষণার সময় জিমনেশমিয়ামে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও রেজাউল করিম চৌধুরী আসেননি। তার প্রধান নির্বাচনি এজেন্ট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল এসময় উপস্থিত ছিলেন।

সজ্জন রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত রেজাউল করিম করিম চৌধুরী একাত্তরের রণাঙ্গনের বীর সেনানী। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নৌকা প্রতীকে এই প্রথম নির্বাচনে লড়ছেন তিনি। চট্টগ্রাম নগরীর ভূমিপুত্র রেজাউল করিম। নগরীর ঐতিহ্যবাহী বহদ্দার বাড়ির সন্তান তিনি। ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা রেজাউল নগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ্য যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিমের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের শুরু ষাটের দশকে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে। ১৯৭২ সালে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি হন তিনি। এরপর চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক, উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উত্তর জেলার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

পঁচাত্তরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর উত্তর জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। যুবলীগের সদস্যও ছিলেন। আশির দশকে আওয়ামী লীগ ছেড়ে ভিড়েছিলেন মরহুম আব্দুর রাজ্জাকের বাকশালের সঙ্গে। পরে আবার আওয়ামী লীগে ফিরে সাংগঠনিক দক্ষতায় মূলধারায় জায়গা করে নেন। চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকও ছিলেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যার পর পত্রিকা বের করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তিকে উজ্জীবিত করতে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে উপজীব্য করে বইও লিখেছেন। চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদের মহাসচিব ও কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন রেজাউল করিম।

শেয়ার করুন