‘কুয়েত অফিসিয়ালি জানালে পাপুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা’

নিজস্ব প্রতিবেদক

কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল
কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল। ফাইল ছবি

মানবপাচারের দায়ে কুয়েতে দণ্ডিত লক্ষ্মীপুরের সংসদ সদস্য শহিদ ইসলাম পাপুলের শাস্তির বিষয়টি সম্পর্কে দেশটি এখনো বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক কিছু জানায়নি। আনুষ্ঠানিকভাবে জানালে সরকার এ ব্যাপারে আইনত ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন। এ ব্যাপারে কুয়েতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে খোঁজখবর নিতে বলা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।

শনিবার (৩০ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় প্রথম বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমেটিক টেনিস টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মন্ত্রী এই কথা বলেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশি একজন সাংসদের কুয়েতে কারাদণ্ড হওয়াকে অত্যন্ত দুঃখজনক ও লজ্জাকর বলে অভিহিত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আপনারা জানেন উনি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন না, উনি স্বতন্ত্র ছিলেন। এটা খুবই দুঃখজনক, অবশ্যই এটা দুঃখজনক, লজ্জাজনক।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রায়ের বিষয়ে কুয়েত সরকার এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। উনার বিচার হয়েছে সেখানে, যেটা আমরা পত্রপত্রিকার মারফত শুনেছি। ওদেশের সরকার উনার সম্পর্কে আমাদেরকে কিছু বলেনি। প্রথম দিকে জানতে চেয়েছিলাম, তারা তখন রেসপন্ডও করেনি। আর এখন পেপারে দেখলাম উনার শাস্তি হয়েছে, উনি জেলে আছেন অনেক দিন ধরে। আমরা সরকারিভাবে জানার জন্য আমাদের রাষ্ট্রদূতকে বলেছি।

পাপুলের সংসদ সদস্য পদ থাকবে কি না এ ব্যাপারে প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বিষয়টা তারা আমাদের সরকারিভাবে জানাক, জানালে পরে আমরা সংসদকে জানাব। তখন বিধি মোতাবেক উনার সম্পর্কে কী করা হবে, দেখব।

গত বৃহস্পতিবার অর্থ ও মানবপাচারের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কুয়েতের কারাগারে থাকা কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলকে চার বছরের কারাদণ্ড দেয় দেশটির একটি আদালত। কুয়েতের ফৌজদারি আদালতের বিচারক আবদুল্লাহ আল ওসমান এই রায় ঘোষণা করেন।

পাপুলের কাজে সহায়তা করায় কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা মাজেন আল জাররাহসহ দুই কর্মকর্তাকেও চার বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একইসঙ্গে পাপুলসহ দণ্ডিত তিনজনকে ১৯ লাখ কুয়েতি দিনার অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে।

গত বছরের ৬ জুন রাতে কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য পাপুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির অন্যতম মালিক পাপুলের কুয়েতে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি রয়েছে। পাঁচ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ আনে কুয়েতি প্রসিকিউশন। তাকে ১৭ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে কুয়েতের পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কুয়েতের আদালত তাকে দেশটির কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখার সিদ্ধান্ত দেয়। এছাড়া সেসময় পাপুলের মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির অ্যাকাউন্টে পাঁচ মিলিয়ন কুয়েতি দিনার বা বাংলাদেশি টাকায় ১৩৭ কোটি ৮৮ লাখ ৮৩ টাকা জব্দ করা হয়।

এরপর গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর পাপুলের বিচার শুরু করে কুয়েতের আদালত। শুনানির পর বিচারক ২০২১ সালের ২৮ জানুযারি রায়ের দিন রাখে। সে অনুযায়ী ২৮ জানুয়ারির রায়ে তার চার বছরের কারাদণ্ড হয়। এটা বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের কোনো আইনপ্রণেতার শাস্তির প্রথম কোনো ঘটনা।

শেয়ার করুন