গণতন্ত্রের আশ্রয়কেন্দ্র মিয়ানমারের পার্লামেন্ট এখন রীতিমতো বন্দিশালা। চারপাশে কড়া সেনা-প্রহরা। ভারী সাঁজোয়া যান আর মুহূর্তে মুর্হূতে সেনা টহল। একই দৃশ্য ভেতরেও। পার্লামেন্ট চত্বর থেকে আবাসিক এলাকা- সবখানেই গিজগিজ করছে পুলিশ।
আর এর ভেতরেই স্বাধীনভাবে বন্দি দিন কাটাচ্ছেন দেশটির প্রায় ৪শ’ আইনপ্রণেতা। সংসদের প্রথম অধিবেশন বসার আগে গত সোমবার সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে গ্রেফতার করা মন্ত্রী-এমপিদের গতকাল মঙ্গলবার অনেকটা উন্মুক্ত একটি কারাগারে রেখেছে সামরিক জান্তা।
প্রশাসনিক রাজধানী নেপিদোর একটি পার্লামেন্ট ভবনের একটি আবাসিক কমপ্লেক্সে তাদের গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। একজন আইনপ্রণেতা জানিয়েছেন, তিনিসহ ৪০০ পার্লামেন্ট সদস্য পরস্পরের সঙ্গে কথা বলেছেন। অভ্যুত্থানের পর সামরিক বাহিনী আটক ও ধরপাকড় অব্যাহত রেখেছে। আলজাজিরা, এপি।
নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে সু চিসহ তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করা হয়। দলটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে সামরিক বাহিনীকে গত নভেম্বরের নির্বাচনের ফলাফলকে সম্মান জানাতে এবং আটককৃত সবাইকে মুক্তি দিতে আহ্বান করা হয়। এনএলডির ফেসবুক পাতায় প্রকাশিত বিবৃতিটিতে বলা হয়, ‘সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল সংবিধানের পরিপন্থি। এতে জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতাকে অবহেলা করা হয়।’
পার্লামেন্ট ভবনে উন্মুক্ত কারাগারে আটক এমপিরা পরস্পরের পাশাপাশি ফোনে তাদের নির্বাচনি এলাকার মানুষের সঙ্গেও কথা বলতে পারছেন। তবে তাদের ওই কমপ্লেক্স থেকে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। কমপ্লেক্সের ভেতরে-বাইরে সেনা-পুলিশের কড়া পাহারায়।
সু চির দল এনএলডির পাশাপাশি অন্যান্য ছোট দলের এমপিদের মধ্যে উদ্বেগ বিরাজ করছে। শুধু পার্লামেন্টেই নয়, পুরো মিয়ানমারেই আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। মঙ্গলবার আরও বেপোরোয়া হয়ে উঠেছে জান্তা বাহিনী। রাজধানীসহ দেশটির প্রতিটি শহরের অলিগলিতে কিছুক্ষণ পরপরই টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনীর বিশাল বহর।
হেলিকপ্টারে নজরদারি চালাচ্ছে পুরো রাজধানীতে। একই চিত্র রাজধানীর বাইরেও। বাড়ি বাড়ি ঢুকে ধরপাকড়ের শুরু করেছে। চলচ্চিত্র নির্মাতা মিন এইসটিন কো কো গি’কে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্তত ১৬ জন সমাজকর্মী ও ৪২ জন সরকারি কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের পরিচয় শনাক্ত করার চেষ্টা করছে বন্দিদের অধিকার নিয়ে কাজ করা একটি সংস্থা।
সু চির ডাকে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে না আসে, সেজন্যই এমন ভয়ংকর পরিবেশ সৃষ্টি করছে জান্তারা। ভয়ে-আতঙ্কে জনগণ আগের মতোই সামরিক শাসনকে মেনে নেয়-সেই কৌশল বাস্তবায়নে মরিয়া হয়ে উঠেছে সেনাবাহিনী।
দেশটির সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ শহর ইয়াঙ্গুন থেকে বিবিসির সংবাদদাতারা জানান, বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং শহরটির আশপাশের এলাকাগুলোর সঙ্গে সড়ক যোগাযোগও বন্ধ রয়েছে। শুধু সেনাবাহিনীর মালিকানাধীন মায়াবতী টিভি চালু আছে। আর সব টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধ রয়েছে।
এদিকে মন্ত্রী-এমপিদের পার্লামেন্ট এলাকায় আটকে রাখা হলেও রাষ্ট্রীয় কাউন্সেলর অং সান সু চিকে কোথায় রাখা হয়েছে তা কেউ জানে না।
আটকের ২৪ ঘণ্টর বেশি সময় পার হলেও সামরিক জান্তা সু চির অবস্থান স্পষ্ট করেনি। গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী সু চির জন্য আটক-গ্রেফতার নতুন কোনো বিষয় নয়। এর আগে অন্তত ১৫ বছর গৃহবন্দি ছিলেন তিনি।
তবে আগের বারের সঙ্গে এবারের পার্থক্য হলো-এবার সু চিকে কোথায় আটক রাখা হয়েছে সেটি গোপন আছে। আগের বার তাকে লেক পাড়ের একটি বাড়িতে গৃহবন্দি করার কথা ঘোষণা করেছিল জান্তা সরকার।
সু চির স্পষ্ট না করার কারণ আগের বারের চেয়ে এবার তাকে বেশি ভয় সামরিক বাহিনীর। তিনি এখন বিপুল ম্যান্ডেট পাওয়া জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি।
এমন ম্যান্ডেটের কারণে সংবিধান সংশোধনসহ সামরিক বাহিনীর প্রভাব হ্রাসে ভূমিকা নিতে পারেন-এমন আশঙ্কাতেই অভ্যুত্থান ঘাটিয়ে সু চিকে সরানো হয়েছে। এক ফেসবুক পোস্টে দাবি করা হয়, সু চি তার সরকারি বাসভবনে রয়েছেন। তবে এর সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি।