উচ্চ মাধ্যমিকে শতভাগ শিক্ষার্থী পাশ করলেও বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২ লাখের বেশি আসন খালি থাকবে।
এইচএসসি পাসের পর অন্তত ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী কর্মজীবনে প্রবেশ এবং উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত আসন থাকার কারণেই এমনটা হবে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
২০১৯ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাশ করেছিল ৯ লাখ ৮৮ হাজার ১৭২ শিক্ষার্থী। ওই বছর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও স্নাতক কলেজসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছিল ৭ লাখ ৮২ হাজার ৬১৬ জন। এদের মধ্যে অন্তত ১ লাখ শিক্ষার্থী আগের বছর এইচএসসি পাশ করা।
অন্যদিকে, ২০১৯ সালে বিভিন্ন ধরনের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসন ছিল ৯ লাখ ২৬ হাজার ৬১টি। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যার চেয়েও ১ হাজার ৪১৩ জন বেশি ভর্তি করা হয়েছিল। এরপরও ২ লাখ ২৬ হাজার ৫৫৪টি আসন খালি ছিল।
বিগত বছরগুলোর ভর্তির প্রবণতা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বলছে, যদি ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থীও ভর্তি হয় তাহলে ১০ লাখ ১১ হাজারের মতো শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারে। আর বর্তমানে উচ্চশিক্ষায় আসন আছে ১৩ লাখ ২০ হাজার। সেই হিসাবে ভর্তিতে সংকট দূরের কথা, ২ লাখের বেশি আসন শূন্যই থাকবে।
এ প্রসঙ্গে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, চলতি বছর উচ্চশিক্ষায় ভর্তিতে আসনের ক্ষেত্রে কোনো সংকট হবে না। প্রথমত, সব শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষায় আসে না। গত বছরও আগের পাশ করা এবং নতুন পাশ করা মিলিয়ে মোট আসনের ৭৪ শতাংশে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। সেটা ৭ লাখ ৮৩ হাজারের মতো। আবার এদের মধ্যে আগের বছর পাশ করা অনেকে আছে। যেটা ৪ শতাংশের কম হবে না। দ্বিতীয়ত, নিয়মিতদের মধ্যে ঝরে যাওয়ার পর যেসব শিক্ষার্থী ভর্তি হবে, তাদের প্রায় সবাই উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবে। আর পাশ করা সবাই যদি ভর্তি হতে চায়, তবুও সংকট হবে না। কেননা, পাশ করা শিক্ষার্থীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিদেশে পড়তে যায়।
তিনি বলেন, সংকট হবে পছন্দের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও বিষয়ে ভর্তি হতে। এ ক্ষেত্রে তীব্র প্রতিযোগিতা হবে। আর পছন্দের প্রতিষ্ঠান ও বিষয়ে ভর্তির সংকট সর্বত্র আছে। এটা সারা বিশ্বেরই চিত্র। এটা সমাধানযোগ্য নয়, কখনোই সমাধান হবেও না। ইউজিসি তথ্য অনুসারে, উচ্চশিক্ষায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬০ হাজার আসন আছে। এছাড়া ৯৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ লাখ ৩ হাজার ৬৭৫, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিভিন্ন কলেজে ডিগ্রি পাশ ও স্নাতকে ৮ লাখ ৭২ লাখ ৮১৫, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ফাজিল ও অনার্স মাদ্রাসায় ৬০ হাজার আসন আছে প্রথমবর্ষে। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭৭ হাজার ৭৫৬ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় গত বছর। দুটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৪০, সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ১০ হাজার ৪০৪, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজে ২৩ হাজার ৩৩০ আসন আছে। ৪টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ৭২০, ছয়টি টেক্সটাইল কলেজে ৭২০, সরকারি ও বেসরকারি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি প্রতিষ্ঠানে ৫ হাজার ৬শ’, ১৪টি মেরিন অ্যান্ড অ্যারোনটিকাল কলেজে ৬৫৪, ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাড়ে ৩ হাজার এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ২৯০টি আসন আছে।
ইউজিসি সদস্য ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে দেশের ২০টি সাধারণ ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৬টি কৃষি প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ সপ্তাহে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে। ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাশ করা ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭ শিক্ষার্র্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬১৪ জন। জিপিএ-৪ থেকে জিপিএ-৫ এর নিচে পেয়েছে ৪ লাখ ৯৯ হাজার ৭৪০ জন, জিপিএ-৩.৫ থেকে জিপিএ-৪ এর নিচে ৩ লাখ ৪ হাজার ১৪৪ জন এবং জিপিএ-৩ থেকে জিপিএ-৩.৫ এর নিচে ২ লাখ ১৭ হাজার ৯৬৩ জন। সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (জিএসটি) গ্রুপের ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদনে ন্যূনতম যোগ্যতা ধরা হয়েছে এসএসসি বা এইচএসসির যে কোনো একটিতে ন্যূনতম জিপিএ ৩ এবং উভয়টি মিলিয়ে সাড়ে ৬ পেতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটসহ বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা আরও বেশি। সেই হিসাবে ১৩ লাখের বেশি পাশ করলেও মূলত ভর্তির জন্য লড়াইতে নামতে পারবে সর্বোচ্চ জিপিএ ৩ পাওয়া শিক্ষার্থীরা। এ ধরনের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৬১ হাজারের মতো। এ কারণে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, ভালোমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে লড়াইটা হবে তীব্র। তবে সুবিধা পাবে ছাত্র খরায় ভোগা নিম্নমানের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলো। তবে এসব প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষা নেয়ার চেয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করা উত্তম বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।