মিরাজ ও মোস্তাফিজের ঝলকে চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিনটি নিজেদের করে নিলো বাংলাদেশ। দিনের শুরুতে লিটন দাস আউট হওয়ার পর ব্যাটিংয়ে নেমে প্রায় পৌনে চার ঘণ্টা উইকেটে কাটান মিরাজ, তুলে নেন নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। তার ১০৩ রানের ইনিংসে ভর করে বাংলাদেশ পায় ৪৩০ রানের সংগ্রহ। পরে দিনের খেলা শেষ হওয়ার আগে ক্যারিবীয়দের দুই ব্যাটসম্যানকে তুলে নিয়েছে টাইগাররা। দুইটি উইকেটই গেছে মোস্তাফিজের ঝুলিতে।
বাংলাদেশের বড় সংগ্রহের জবাবে দিনের তৃতীয় সেশনের পুরো ২৯ ওভার ব্যাট করে ২ উইকেট হারিয়ে ৭৫ রান করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নিজেদের ইনিংসের পঞ্চম ওভারে ওপেনার জন ক্যাম্পবেলের উইকেট হারায় ক্যারিবীয়রা। লেগ বিফোরের আবেদনে আম্পায়ার অবশ্য নটআউট দিয়েছিলেন। তবে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন মোস্তাফিজ, রিভিউ নিয়ে পেয়ে যান ১৫ বলে ৩ রান করা ক্যাম্পবেলের উইকেট।
সেই ওভারের পরের বলেও হয় লেগ বিফোরের আবেদন, আম্পায়ারও সাড়া দেন। তবে এবার রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান অভিষিক্ত শেন মোজলি। পরে অবশ্য মোস্তাফিজের বলেই আউট হন মোজলি। ইনিংসের ১১তম ওভারের শেষ বলে নিখুঁত এক ইয়র্কারে মোজলির বুটে আঘাত করেন মোস্তাফিজ, আউট দেন আম্পায়ার। এবার আর রিভিউ নিয়ে বাঁচতে পারেননি ২৩ বলে খেলে ২ রান করা মোজলি।
নতুন বল হাতে প্রথম স্পেলে মুভমেন্টের সঙ্গে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে নিজের সেরা ছন্দের এক ঝলকই দেখান মোস্তাফিজ। তবে তার এনে দেয়া দুর্দান্ত শুরুটা কাজে লাগাতে পারেননি সাকিব আল হাসান, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলামরা। বাংলাদেশের স্পিনারদের বিপক্ষে তেমন সমস্যা হয়নি ক্যারিবীয় অধিনায়ক ক্রেইগ ব্রাথওয়েট ও অভিষিক্ত এনক্রুমাহ বোনারের।
দিন শেষে অবিচ্ছিন্ন তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৫১ রান যোগ করে ফেলেছেন বোনার ও ব্রাথওয়েট। হেলমেটের নিচে সানগ্লাস পরে করা ব্যাটিংয়ে ফিফটির কাছে পৌঁছে গেছেন ক্যারিবীয় ব্রাথওয়েট। ম্যাচের তৃতীয় দিন (শুক্রবার) সকালে তিনি খেলতে নামবেন ৭ চারের মারে করা ৪৯ রান নিয়ে, বোনার অপরাজিত রয়েছেন ১৭ রানে।
এর আগে আজকের দিনের শুরুর দিকে ব্যাট করতে নেমে মেহেদি মিরাজ করেন অনবদ্য সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত ১০৩ রান করে তিনি আউট হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইনিংসের যবনিকাপাত ঘটে বাংলাদেশের। মিরাজ ছাড়াও হাফ সেঞ্চুরি করেন সাকিব আল হাসান এবং সাদমান ইসলাম। সাকিব আউট হন ৬৮ রান করে এবং সাদমান করেন ৫৯ রান।
২০১৮ সালের নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরাজ খেলেছিলেন অপরাজিত ৬৮ রানের ইনিংস। ওটাই ছিল তার ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস। আট নম্বরে ব্যাট করতে নেমে সেঞ্চুরি করার স্বপ্ন দেখাটাই যেন বাতুলতা। কিন্তু এবার আট নম্বরে নামলেও সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন মিরাজ। সুযোগ পেয়েছেন মূলতঃ সাকিব আল হাসান এবং নাঈম হাসানের সঙ্গে ভালো দুটি জুটি গড়তে পারার কারণে। তাইজুল ইসলামও বেশ ভালো একটা সঙ্গ দিয়েছিলেন তাকে।
দিনের শুরুতে লিটন দাস আউট হয়ে যাওয়ার পরই মাঠে নামেন মিরাজ। ৬৭ রানের জুটি গড়েন তিনি সাকিবের সঙ্গে। এরপর তাইজুল ইসলামকে নিয়ে গড়েন ৪৬ রানের জুটি। তাইজুল আউট হন ১৮ রান করে। নাঈম হাসানকে নিয়েও অনেক দুরের পথ পাড়ি দেন মিরাজ। গড়েন ৫৭ রানের জুটি।
২৪ রান করে নাঈম আউট হয়ে যাওয়ার পর মিরাজের সেঞ্চুরি হবে কি না তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত মোস্তাফিজকে সঙ্গে নিয়ে তিন অংকের ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছে যান মিরাজ। ১০৩ রান করার পর রাকিম কর্নওয়ালের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে বিদায় নেন মিরাজ। ততক্ষণে বাংলাদেশের রান পৌঁছে গেলো ৪৩০-এ। মোস্তাফিজ অপরাজিত ছিলেন ৩ রানে।
বাংলাদেশ ইনিংসের ৯৩তম ওভারের দ্বিতীয় বলে উইকেটে গিয়ে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে মিরাজ আউট হন ১৫১তম ওভারের দ্বিতীয় বলে। মাঝের ৫৮ ওভারে বাংলাদেশ দল পেয়েছে ১৮২ রান, যেখানে মিরাজের একার অবদান ১০৩ রান।
বাংলাদেশের পক্ষে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে আট নম্বর বা তার নিচে নেমে টেস্ট সেঞ্চুরি করলেন মিরাজ। তার আগে মোহাম্মদ রফিক, খালেদ মাসুদ পাইলট, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, আবুল হাসান রাজু ও সোহাগ গাজীদের রয়েছে এ কীর্তি। তাদের পাশে নিজের নাম বসিয়ে দলীয় সংগ্রহটাও ৪৩০ রানে নিয়ে গেছেন ২৩ বছর বয়সী এ স্পিনিং অলরাউন্ডার।
প্রায় পৌনে ৪ ঘণ্টা উইকেটে থেকে ১৬৮ বল মোকাবিলা করে ১০৩ রানের ইনিংসটি খেলেছেন মিরাজ। যেখানে ছিল ১৩টি চারের মার, ছিল না কোনো ছক্কা। শেষপর্যন্ত অবশ্য আউট হয়েছেন ছক্কা হাঁকাতে গিয়েই। রাহকিম কর্নওয়ালের বলে ধরা পড়েছেন লংঅনে দাঁড়ানো কাভেম হজের হাতে।