অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৩ জনকে আটক করেছে র্যাব। তাদের থেকে উদ্ধার করা প্রায় পাঁচ কোটি টাকার অবৈধ ভিওআইপি সরঞ্জাম। এই চক্র বছরে ১০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা সরকারকে রাজস্ব বঞ্চিত করেছে।
বুধবার দুপুর দুইটা থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টা পর্যন্ত রাজধানীর নিউমার্কেট, তুরাগ ও শাহ আলী থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। তারা হলেন- ব্যবসার মূলহোতা মো. কাজী এম এম মাহামুদ ছোটন, রাকিব হাসান ও বাবর উদ্দিন।
আজ বিকালে কারওয়ার কারওয়ান বাজান র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১০ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মাহফুজুর রহমান।
তিনি জানান, চক্রটি অবৈধ টেলিযোগাযোগ স্থাপনার মাধ্যমে প্রতিদিন আনুমানিক প্রায় ৬ লাখ আন্তর্জাতিক কল মিনিট অবৈধভাবে বাংলাদেশে টার্মিনেট করছে। সংঘবদ্ধ চক্রটির অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার কারণে সরকার দৈনিক প্রায় তিন লাখ টাকা (বর্তমান আন্তর্জাতিক কল টার্মিনেশন রেট অনুযায়ী) এবং বছরে প্রায় ১০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা সরকারের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
অতিরিক্ত ডিআইজি মাহফুজুর রহমান বলেন, গত ৩ ফেব্রুয়ারি গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাবের আভিযানিক দলটি জানতে পারে, রাজধানী ঢাকার নিউ মার্কেট থানাধীন কাটান এলিফ্যান্ট রোডের ২৭৮/৩ সরদার ভিলার ২য় তলার তালহা এন্টারপ্রাইজ নামক প্রতিষ্ঠানে অবৈধ ভিওআইপির যন্ত্রংশ বিক্রয় করছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে বিটিআরসির কর্মকর্তাদের সহযোগীতায় চারটি সিম বক্স ডিভাইস (যার গায়ে Amplifier Digital Sound System লেখা আছে) ও দুইটি মোবাইল ফোনসহ রাকিব হাসান ও বাবর উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর তুরাগ থানার রমজান মার্কেট ভাবনারটেক জনৈক শামসুল আলমের বাড়ির একটি তালাবদ্ধ কক্ষ (যা চলমান ভিওআইপি কন্ট্রোলরুম) হতে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার চক্রের মূলহোতা কাজী এম এম মাহামুদ ছোটনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে ভিওআইপি ব্যবসায় ব্যবহৃত ১৯টি সিম বক্স ডিভাইস, ৪১৬টি জিএসএম এন্টেনা, ৩৪শ’ পিস টেলিটক সিম, সাতটি মিনি কম্পিউটার, তিনটি ওয়ারলেস রাউটার, পাঁচটি বাংলা লায়ন মডেম ও রাউটার, তিনটি ল্যাপটপসহ চারটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
র্যাব-১০ এর সিও বলেন, বিটিআরসি কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্যমতে অবৈধ টেলিযোগাযোগ স্থাপনার মাধ্যমে চক্রটি প্রতিদিন আনুমানিক প্রায় ৬ লাখ আন্তর্জাতিক কল মিনিট অবৈধভাবে দেশে টার্মিনেট করছিল। এতে তারা সরকারকে দৈনিক প্রায় তিন লাখ টাকা এবং বছরে প্রায় ১০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা রাজস্ব বঞ্চিত করেছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তাররা অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার ও ভিওআইপির যন্ত্রংশ ক্রয়-বিক্রয়কারী। তারা দীর্ঘ এক বছর ধরে সরকারকে কর ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে ভিওআইপি এর ব্যবসায়ী চালিয়ে আসছিল।
একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১৫টি সিম নিবন্ধন করে ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু চক্রটি কিভাবে সরকারি প্রতিষ্ঠান টেলিটকের তিন হাজার ৪০০ সিম ক্রয় ও ব্যবহার করে আসছিল জানতে চাইলে র্যাব-১০ প্রধান বলেন, বিষয়টি র্যাব ও বিটিআরসি’র নজরে এসেছে। এটা নিয়ে গভীর তদন্ত করা হবে।
এই চক্রের সাথে আরও কেউ জড়িত কিনা এবং ভিওআইপি কল কোনো অপরাধ কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করে আসছিল কিনা জানতে চাইলে অতিরিক্ত ডিআইজি মাহফুজুর রহমান বলেন, অবৈধভাবে যেহেতু তারা ভিওআইপি ব্যবসা ও সরকারকে কর ফাঁকি দিয়ে আসছিলেন। তাদের এই ভিওআইপি কলে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করা হচ্ছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে।