পার্বত্য চট্টগ্রামকে পর্যটনের জন্য স্পেশাল জোন হিসেবে বিবেচনার পরামর্শ দিলেন মোকতাদির চৌধুরী

মোহাম্মদ সজিবুল হুদা

মোকতাদির চৌধুরী

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেছেন, বিশ্বের বৃহৎ সমুদ্র সৈকত আমাদের আছে, বিশ্বের বৃহৎ ম্যানগ্রোভ আমাদের আছে, কিন্তু এগুলোকে আমরা এখনও যথাযথভাবে এক্সপ্লোর করতে পারছি না। তবে গত কয়েক বছর যাবৎ পর্যটন খাতে আমাদের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আমাদের সমগ্র সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রাম পর্যটন অঞ্চল হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামকে পর্যটনের জন্য স্পেশাল জোন হিসেবে বিবেচনা করে পরিকল্পনা করলে আমরা এ শিল্পে অনেক এগুতে পারব।

শুক্রবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ভবনের অডিটোরিয়ামে বিটিইএ-এর প্রথম বার্ষিকী ও ন্যাশনাল ট্যুরিজম বিজনেস অ্যাওয়ার্ড ২০২০ প্রদান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মোকতাদির চৌধুরী বলেন, পঞ্চাশ বছর হয়েছে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে পর্যটন নীতিমালা প্রণয়ন করে পর্যটন করপোরেশন গঠন করে গেলেন, তারপর থেকে এচিভমেন্টটা কী? আমাদের এচিভমেন্টটা আমি যদি বলি, ১৯৯৬ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো সরকার গঠনের পর তিনি পর্যটন শিল্পের বিকাশের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন, তখন তাঁর সঙ্গে আমার কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছিল কিন্তু আমাদের পর্যটনের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের মন ও মানসিকতা আমাদেরকে পর্যটনমুখী করে নাই। আর এজন্য আমরা পর্যটনকে ইনকামের একটি বৃহৎ জায়গা হিসেবে বিবেচিত করতে পারিনি।

তিনি বলেন, তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর থেকে পর্যটনের সাথে সম্পৃক্ত মানুষদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছে। দেশে পর্যটনের বিকাশ ঘটানোর লক্ষ্যে তিনি ২০১২ সালে পর্যটনকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করেছেন।

ছবিঃ মত ও পথ

মোকতাদির চৌধুরী বলেন, পর্যটন শিল্পের বিকাশের স্বার্থে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ওআইসির এক সভায় আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব রেখেছি নন মুসলিম ফরেনারদের জন্য একটি সেপারেট পর্যটন জোন করার জন্য, এটি করা গেলে আমরা ট্যুরিজমকে ভালো অবস্থায় নিয়ে যেতে পারব। সেদিন প্রধানমন্ত্রী নীতিগতভাবে আমরা প্রস্তাবটির প্রতি সম্মতি দিয়েছিলেন, আমি আশা করব পর্যটন নিয়ে সরকার যে মহাপরিকল্পনা করার কথা ভাবছে সেখানে এই প্রস্তাবটি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ফেব্রুয়ারি মাস বিজয় ও গভীর বেদনার মাস। ১৯৫২ সালের এ মাসের ২১ তারিখে আমাদের পূর্বসূরি যারা মায়ের ভাষা বাংলার জন্য আত্মাহুতি দিয়েছিলেন তাদের প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাই। আমরা সকলেই জানি ডিসেম্বর আমাদের বিজয়ের মাস, কিন্তু ফেব্রুয়ারিও আমাদের বিজয়ের মাস। কারণ ফেব্রুয়ারি আমাদেরকে বিজয়ের দিকনির্দেশনা দিয়েছে। আমরা যে ভাষায় কথা বলছি, আমাদের মায়ের ভাষা, সেই ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর জন্যে একটি স্বতন্ত্র, স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের দিকনির্দেশনা এ মাস থেকে আমরা পেয়েছি। আমরা যে একটা স্বাতন্ত্র্য জাতি সেটাও এ মাসেই আমাদের উপলব্ধিতে প্রথম এসেছে। ১৯৪৭ সালে এটি আমাদের মধ্যে ছিল না।

মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ১৯৪৭ সালে একটি ভ্রান্ত জাতীয়তাবাদের ধারণা আমাদের পূর্বসূরিদের মস্তিষ্কে ঢুকে গিয়েছিল। এমনকি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তিনিও ঐ ভ্রান্ত জাতীয়তাবাদের পিছনে চলে গিয়েছিলেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁরা লড়াই করেছিলেন। কিন্তু পাকিস্তান যে একটি কৃত্রিম রাষ্ট্র, এ রাষ্ট্রের যে কোনো ভিত্তি নেই এ কথাটি আমরা প্রথম উপলব্ধি করতে পারি ১৯৪৮ সালে এবং তারই পথ ধরে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রফিক, জব্বার, সালাম, বরকতরা আত্মাহুতি দিয়ে আমাদের বুঝিয়ে দিলেন, যারা বাংলা ভাষায় কথা বলো তোমারা জেনে রেখো- তোমাদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য আছে। সুতরাং এই ঐতিহ্য রক্ষা করার জন্যে, এই স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করার জন্য তোমাদেরকে সংগ্রাম ও আন্দোলনের পথে এগুতে হবে।

তিনি বলেন, ম্যাকিয়াভেলি দি প্রিন্সে বলেছেন, ‘কোনো জাতিকে যদি তুমি চিরতরে পদানত করতে চাও তাহলে তাঁর সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে দাও’। ১৯৪৮ সালে আমাদের সংস্কৃতিকে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ও তাঁর দোসররা ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল। জিন্নাহ সমগ্র পাকিস্তানের ৫৬ শতাংশ মানুষের ভাষা বাংলাকে গুরুত্ব না দিয়ে ২ শতাংশ মানুষের ভাষা উর্দুকে সেদিন রাষ্ট্রভাষা করতে চেয়েছিলেন।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম এক্সপ্লোরার এসোসিয়েশনের সভাপতি শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্ত্বে ও ফারজানা করিমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান রামচন্দ্র দাশ, সিইও জাবেদ আহমেদ, কসোভোর রাষ্ট্রদূত গুনের উরেয়া।

শেয়ার করুন