২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সাতক্ষীরা শহরের পাঁচ স্থানে সিরিজ বোমা হামলার মামলায় আট আসামির ১৩ বছর এবং ছয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। এ মামলায় একজনকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
বুধবার দুপুরে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মো. শরিফুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলা পরিচালনা করেন জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুল লতিফ। তাকে সহায়তা করেন অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুস সামাদ। দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর পর প্রতীক্ষিত এ মামলার রায় ঘোষণা করা হলো।
এ সময় তারা বলেন, সাক্ষীদের সাক্ষ্যপ্রমাণ এবং আলামত জব্দের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে যে, এ মামলার সবাই দোষী।
রায়ে তারা সন্তোষ প্রকাশ করে আরও বলেন, এই বিচারের মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই রায়ের কারণে ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো অপরাধের সঙ্গে কেউ জড়িত হবেন না বলে প্রত্যাশা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।
মামলায় আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট জিএম আবুবকর সিদ্দিক। তিনি আইনের বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে ৩, ৪ ও ৬ ধারা প্রযোজ্য নয়। আমরা ন্যায়বিচার পাইনি।
মামলায় বাদীসহ ১৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে পাঁচটি মামলার ১৬ আসামির সবাইকে খালাস এবং একটি মামলায় ২৫ আসামির মধ্যে একজনকে খালাস দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সাতক্ষীরা শহরের শহীদ রাজ্জাক পার্ক, কালেকটরেট চত্বর, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত চত্বর, হাসপাতাল মোড় ও বাস টার্মিনালসহ পাঁচটি পয়েন্টে একযোগে বোমা বিস্ফোরণ এবং জামায়াতুল মুজাহিদিন জেএমবির লিফলেট ছড়ানো হয়।
সকালে এ ঘটনার পর বিকালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত চত্বরে বোমা হামলাকারী শহরতলির বাঁকাল গ্রামের নাসিরউদ্দিন দফাদার প্রত্যক্ষদর্শীর দেখিয়ে দেওয়া মতে গ্রেফতার হন। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ভারতীয় নাগরিক গিয়াসউদ্দিনসহ আরও অনেক আসামি একে একে গ্রেফতার হন।
পুলিশ শহরের রসুলপুরে জেএমবির ঘাঁটিতে তল্লাশি চালিয়ে বিপুল পরিমাণ বোমার সরঞ্জাম জব্দ করে। গ্রেফতার হওয়া ১৩ আসামিকে ঢাকায় জেআইসিতে (জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঠানো হয়। এ সংক্রান্ত ছয়টি মামলার প্রতিটিতে সিআইডি পুলিশ ১৯ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় ২০০৬ সালের ১৩ মার্চ।
এ মামলায় আসামিদের মধ্যে রয়েছেন মনিরুজ্জান মুন্না, আনিসুর রহমান খোকন, মনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল, মো. গিয়াসউদ্দিন, বিল্লাল হোসেন, রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ, মসিউজ্জামান ওরফে মুকুল ডাক্তার, শামীম হোসেন গালিব ওরফে সাইফুল্লাহ, আবদুল আহাদ, আশরাফ মাস্টার, আলমগীর হোসেন ওরফে আশা, মামুনুর রশীদ, ওবায়দুল ইসলাম, আসাদুল ইসলাম হাজারি, মাহবুবুর রহমান লিটন, মো. আসাদুজ্জান, মমতাজউদ্দিন, নুর আলি মেম্বর, ফখরুদ্দিন গাজী, আবুল খায়ের ও নাইমুদ্দিন। এর মধ্যে আবুল খায়েরকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।
পলাতক রয়েছেন কয়েক আসামি। এর আগে ২০১৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর কারাগারে আটক অবস্থায় মারা যান আসামি নাসিরুদ্দিন দফাদার।