‘সাগর-রুনি মামলাটি চ্যালেঞ্জিং, যথাসময়ে প্রতিবেদন’

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন নাহার রুনি।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন নাহার রুনি। ফাইল ছবি

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার ৯ বছর পূর্তি হচ্ছে আগামীকাল বৃহস্পতিবার। এত বছরেও আলোচিত এই মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হয়নি আদালতে। বারবার পেছানো হচ্ছে তারিখ। উচ্চ আদালতের নির্দেশে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া এলিট ফোর্স র‌্যাব জানিয়েছে, মামলাটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। সবকিছু পর্যালোচনা করে সঠিক নিয়মে এবং যথাযথ সময়ে র‌্যাব তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে।

আজ বুধবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকারে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ এই কথা বলেন।

universel cardiac hospital

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, মামলাটিতে পেশাদারিত্ব, কর্মদক্ষতার প্রমাণ হিসেবেই র‌্যাব তাদের দায়িত্ব পালন করছে। তদন্ত কর্মকর্তা অত্যন্ত বিজ্ঞ এবং চৌকস। তার বিজ্ঞতা এবং সবকিছু পর্যালোচনা করে এ মামলা সঠিক নিয়মে যথাযথ সময়ে র‌্যাব প্রতিবেদন দাখিল করতে পারবে।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনিকে হত্যা করা হয়। প্রথমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন ওই থানার এক উপ-পরিদর্শক (এসআই)। চার দিন পর চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। দুই মাসেরও বেশি সময় তদন্ত করে রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হয় ডিবি। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে একই বছরের ১৮ এপ্রিল হত্যা মামলাটির তদন্তভার র‌্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেই থেকে মামলাটি তদন্ত করছে র‌্যাব।

র‌্যাব মুখপাত্র লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এই ঘটনায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় রুনির ছোটভাই একটি মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে মামলাটি তদন্ত করছে র‌্যাব। এখন পর্যন্ত মামলায় ১৬০ জন আদালতে সাক্ষী দিয়েছেন। মামলায় মোট আটজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। যারমধ্যে দুজন জামিনে মুক্ত আছেন এবং ছয়জন জেলহাজতে আছেন। এটা একটি চাঞ্চল্যকর মামলা।

আশিক বিল্লাহ বলেন, মামলায় গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক আছে। কারণ, দুজনই ছিলেন সাংবাদিক৷ মামলাটির ভয়াবহতা ও স্পর্শকাতর হওয়ায় র‌্যাব অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে৷

তিনি জানান, কৌশলগত কারণে বিভিন্ন বার আদালত থেকে সময় নেয়া হয়েছে। মামলায় যে ধরনের ফরেনসিক পাওয়া গিয়েছিল তদন্ত কর্মকর্তা ডিএন পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছিল। যার ‘ফলাফল’ তদন্ত কর্মকর্তার কাছে এসে পৌঁছেছে। পরবর্তী সময়ে এই মামলার অন্যতম আরেকজন ব্যক্তি তানভীর রহমান মিসকেস দায়ের করেন। যার ফলে সেটি বর্তমানে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে বিচারাধীন।

আশিক বিল্লাহ বলেন, হত্যার বেশ কিছুদিন পর র‌্যাব মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায়। এরপর থেকে র‌্যাব তাদের তদন্ত পরিচালনা করছে। তদন্তধীন মামলা হওয়া এ বিষয়ে বেশি কিছু বলা সমীচীন হবে না। তবে র‌্যাব সবাকে আশ্বস্ত করতে চায়, মামলাটি যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বর্তমানে চলমান রয়েছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব মুখপাত্র বলেন, র‌্যাব যে সময়ে তদন্তভার পেয়েছিল, ইতিমধ্যে মামলার যে আলামত, তথ্য-উপাত্ত সমৃদ্ধ করে তদন্ত পরিচালনা করছে। মামলায় বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ এবং বেশ কিছু স্পর্শকাতরতা রয়েছে। যার ফলে গুরুত্বের সঙ্গে এটা পরিচালনা করা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ সবাই মামলাটি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তদন্ত কর্মকর্তা যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় তার পরবর্তী পদক্ষেপ আদালতে উপস্থাপন করবে। গতকাল তদন্ত কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডস্থল পরিদর্শন করেছেন।

সেটা কেন এ ব্যাপারে জানতে চাইলে র‌্যাব মুখপাত্র বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরির্দশনকে পুলিশের ভাষায় পিও বলা হয়। এটা তার রুটিন কাজ। ঘটনার পর এবং বর্তমান পরিস্থিতি এই দুটো পরিস্থিতি অবলোকন করতে তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছেন।

ফরেনসিক রিপোর্টে কয়জনের ডিএন রিপোর্ট এসেছে জানতে চাইলে লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, সর্বমোট ২৫ জনের ডিএন পরীক্ষা করার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছিল। ইতিমধ্যে এসংক্রান্ত প্রতিবেদন তদন্ত কর্মকর্তার কাছে পৌঁছেছে।

কোনো কারণে কি র‌্যাব এটা নিয়ে এগোতে পারছে না-এমন প্রশ্নের উত্তরে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, র‌্যাব অত্যন্ত বিনয় এবং নির্ভরতার সাথে জানাতে চায়- চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করাই র‌্যাবের দায়িত্ব। যেহেতু এটি একটি চ্যালেঞ্জকর মামলা, এই মামলাটি র‌্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সুতরাং মামলাটিকে নিজেদের পেশাদারিত্ব, কর্মদক্ষতার প্রমাণ হিসেবেই র‌্যাব তাদের দায়িত্ব পালন করছে।

সাগর-রুনির ডিএনএসহ ২৫ জনের মধ্যে বাকি ২৩ জনের ডিএনএ শনাক্ত করা হয়েছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই মামলার ডিএনএ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ ব্যাপারে তদন্তকারী কর্মকর্তা চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করবেন। মামলাটি যেহেতু তদন্তাধীন বিষয় এ বিষয়ে এতটুকুই বলা সম্ভব।

তদন্ত প্রতিবেদন কবে নাগাদ দেয়া সম্ভব হতে পারে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, পরবর্তী প্রতিবেদন জমা দেয়ার তারিখ ১ মার্চ। তদন্তকারী কর্মকর্তা এ বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে কাজ করছেন এবং এ বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে র‌্যাব মহাপরিচালকের তত্ত্বাবধানসহ তার নির্দেশনায় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা যিনি আছেন তিনি অত্যন্ত চৌকস। ঘটনাস্থলের আগের যে ধরনের পরিস্থিতি ও বাস্তবতার মধ্যে আমরা দায়িত্ব শুরু করেছি সেই অবস্থান থেকে বর্তমান অবস্থানে আসা এটি তদন্তকারী কর্মকর্তার বিজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ। সুতরাং র‌্যাব আস্থার সঙ্গে জানাতে চায় মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে এবং যথানিয়মে তদন্তটির প্রতিবাদ বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করা হবে।

আশিক বিল্লাহ বলেন, ২৫ জনের ডিএনএ’র পাশাপাশি ঘটনাস্থল থেকে রক্ত, রক্তমাখা জামা-কাপড়সহ সবধরনের আলামত আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছি। সর্বাধুনিকভাবে একটি প্রযুক্তি আছে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে অভিযুক্ত আসামির একটি অবয়ব তৈরি করা যায়। এ বিষয়টি নিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা কাজ করছেন।

শেয়ার করুন