সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যার ৯ বছর পূর্ণ হলো আজ ১১ ফেব্রুয়ারি। এ হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ৭৮ বারেও দাখিল করতে পারেনি র্যাব।
সর্বশেষ গত ৩ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু র্যাব প্রতিবেদন দাখিল করেনি। এজন্য আগামী ১১ মার্চ ফের প্রতিবেদন দাখিলের দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত।
র্যব মামলাটিকে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হিসেবে দেখছে। সবকিছু পর্যালোচনা করে যথাসময়ে তারা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন বলে জানিয়েছেন র্যাব কর্মকর্তারা।
মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনিকে হত্যা করা হয় ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। এরপর নিহত রুনির ভাই নওশের আলম রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
মামলাটির প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন ওই থানার এক উপ-পরিদর্শক (এসআই)। চারদিন পর চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। দুই মাসেরও বেশি সময় তদন্ত করে রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হয় ডিবি। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে একই বছরের ১৮ এপ্রিল হত্যা মামলাটির তদন্তভার র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সাগর-রুনি হত্যা মামলার ৮ আসামির দুই জন বাড়ির দারোয়ান পলাশ রুদ্র পাল ও কথিত বন্ধু তানভীর রহমান জামিনে আছেন। অপর ছয় আসামি মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু, বকুল মিয়া, কামরুল হাসান অরুন, রফিকুল ইসলাম, এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবিল ও আবু সাঈদ কারাগারে আটক আছেন। আসামিদের মধ্যে তানভীর জামিনে আছেন। এ মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার ৮ জনের কেউই এখন পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেনি।
২০১৫ সালের জানুয়ারিতে সাগর-রুনির ভাড়া বাসার নিরাপত্তা প্রহরী এনামুল হক ও পলাশ রুদ্র পাল ১৬১ ধারায় জবানবন্দি দেয়। ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মো. সাইদ, মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ ও নিহত দম্পতির বন্ধু তানভীর রহমান এ পাঁচ জনকে মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক নারায়ণচন্দ্র হত্যার ঘটনায় র্যাব ও ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। এ পর্যন্ত ১৫৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
এদিকে র্যাব বলছে, মামলাটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। সবকিছু পর্যালোচনা করে সঠিক নিয়মে এবং যথাযথ সময়ে র্যাব তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে।
বুধবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকারে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ এই কথা বলেন।
র্যাবের কর্মকর্তা বলেন, ‘মামলাটিতে পেশাদারিত্ব, কর্মদক্ষতার প্রমাণ হিসেবেই র্যাব তাদের দায়িত্ব পালন করছে। তদন্ত কর্মকর্তা অত্যন্ত বিজ্ঞ এবং চৌকস। তার বিজ্ঞতা এবং সবকিছু পর্যালোচনা করে এ মামলা সঠিক নিয়মে যথাযথ সময়ে র্যাব প্রতিবেদন দাখিল করতে পারবে।’
র্যাব মুখপাত্র লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এই ঘটনায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় রুনির ছোটভাই একটি মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে মামলাটি তদন্ত করছে র্যাব। এখন পর্যন্ত মামলায় ১৬০ জন আদালতে সাক্ষী দিয়েছেন। মামলায় মোট আটজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। যারমধ্যে দুজন জামিনে মুক্ত আছেন এবং ছয়জন জেলহাজতে আছেন। এটা একটি চাঞ্চল্যকর মামলা।