শুভসূচনার মাধ্যমে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করার পর ব্যাট হাতে ব্যর্থ বাংলাদেশ দলের মিডল অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা। শেষদিকে মিরাজের ব্যাটে আবারও জয়ের আশা জাগলেও শেষ পর্যন্ত হার মেনে নিয়েই মাঠ ছেড়েছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। দুই ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে মুমিনুল হকদের বিপক্ষে ১৭ রানের জয় পেয়েছে সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ফলে ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ জিতে সফরটা শেষ করল ব্র্যাথওয়েট বাহিনী।
ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ৫৯ রানে ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের বলে স্লিপে কর্নওয়ালের হাতে ক্যাচ হয়েছেন সৌম্য সরকার। তিনি করেছেন ১৩ রান। এরপর দলীয় ৭০ রানে ব্র্যাথওয়েটের বলে শর্ট কাভারে মোসেলের হাতে ধরা পড়েছেন তামিম ইকবাল। তার সংগ্রহ ৫০ রান। টেস্টে তামিমের এটি ২৮তম অর্ধশত। দলীয় ৭৮ রানে রাখিম কর্নওয়ালের বলে শর্ট লেগে মোসেলের হাতে ক্যাচ হয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ৩১ বল খেলে ১১ রান করেছেন তিনি।
প্রথম ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪ রান করে আউট হয়েছেন মুশফিকুর রহিম। দলীয় ১০১ রানে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ হয়েছেন তিনি। ছয় নম্বর পজিশনে নেমে ১০ রান করে কর্নওয়ালের শিকার হয়েছেন মোহাম্মদ মিথুন।
পরের উইকেটে লিটনকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা চালান টাইগার অধিনায়ক মুমিনুল হক। কিন্তু ব্যর্থ হন মুমিনুল। ব্যক্তিগত ২৬ রানে ওয়ারিকানের বলে কর্নওয়ালের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান। দলনেতা মুমিনুল আউট হওয়ার পর ধীরে সুস্থে মিরাজকে দলীয় স্কোরটা বাড়িয়ে নিচ্ছিলেন লিটন। কিন্তু অন্যান্যদের মতো ব্যক্তিগত স্কোরটা বড় করতে পারেননি তিনিও। বড় দেহের অধিকারী রাখেম কর্নওয়ালের বলে কট বিহাইন্ড হন লিটন। আউট হওয়ার পূর্বে ৩৫ বল খেলে করেন ২২ রান।
তৃতীয় সেশনের শেষদিকে মেহেদি হাসান মিরাজ দলকে জয় এনে দেওয়ার ক্ষুদ্র প্রয়াস চালালেও তা আর সম্ভব হয়নি। ক্রিজে তার যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেননি কেউই। ২০ বলে ১৪ রান করে ক্যারিবীয় অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন নাঈম হাসান। শেষদিকে দ্রুত কয়েকটি চার-ছয় মেরে জয়ের শেষ আশাও জাগিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু একাই লড়তে থাকা মিরাজ আত্মসমর্পন করেন ব্যক্তিগত ৩১ রানে। ইনিংসের ৬২তম ওভারে ওয়ারিকোনের করা বলে মিরাজ ব্যাটের কোণায় লেগে ক্যাচ উঠলে সেটা ধরতে ভুল করেননি কর্নওয়াল। আর রাহি অপরাজিতই থাকেন ০ রানে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে এই ইনিংসে সর্বোচ্চ ৪টি করে উইকেট নেন কর্নওয়াল। আর ওয়ারিকান ও ব্র্যাতওয়েট ৩টি করে উইকেট নেন।
ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ৪০৯ রান করা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দ্বিতীয় ইনিংসে ১১৭ রানে অলআউট করেছে টাইগাররা। যার ফলে এই ম্যাচ জিততে বাংলাদেশের সামনে টার্গেট দাঁড়িয়েছে ২৩১ রান। কারণ প্রথম ইনিংস শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১১৩ রানের লিডে ছিল।
গতকাল (শনিবার) ৩ উইকেটে ৪১ রান করে দিনের খেলা শেষ করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তৃতীয় দিন শেষে অপরাজিত থাকা ব্যাটসম্যান জোমেল ওয়ারিকানকে আজ বেশিদূর এগোতে দেননি রাহি। রবিবার দিনের পঞ্চম ওভারে বোলিংয়ে এসে ওয়ারিকানকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন তিনি। ২ রান করে ফিরেন এই ব্যাটসম্যান।
দলীয় ৬২ রানে কাইল মায়ার্সও রাহির বলে এলবিডব্লিউ হন। চট্টগ্রাম টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করা এই ব্যাটসম্যান করেন ৬ রান। ৩৫তম ওভারে তাইজুল ইসলামের বলে স্ট্যাম্পিং হন জার্মেই ব্লাকউড। তার সংগ্রহ ৯ রান।
৬ উইকেটে ৯৮ রান করে লাঞ্চ বিরতিতে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বিরতির পর বাকি চার উইকেটও দ্রুত তুলে নেয় বাংলাদেশ। তাইজুল ইসলাম ৩৬ রান দিয়ে ৪টি, নাঈম হাসান ৩৪ রান দিয়ে ৩টি ও আবু জায়েদ রাহি ৩২ রান দিয়ে ২টি উইকেট শিকার করেছেন। ১৫ রান দিয়ে ১টি উইকেট নিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
গত বৃহস্পতিবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের শেষ ম্যাচ।
প্রথম দিন টস জিতে ব্যাট করতে নামে ক্যারিবীয়রা। প্রথম ইনিংসে তারা ৪০৯ রান করে অলআউট হয়। পরে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে অলআউট হয় ২৯৬ রান করে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস: ৪০৯ (১৪২.২ ওভার)
(ক্রেইগ ৪৭, ক্যাম্পবেল ৩৬, মোসেলে ৭, বোনার ৯০, মায়ার্স ৫, ব্লাকউড ২৮, জশুয়া ৯২, আলজারি ৮২, কর্নওয়াল ৪*, ওয়ারিকান ২, গ্যাব্রিয়েল ৮; রাহি ৪/৯৮, মিরাজ ১/৭৫, নাঈম ০/৭৪, তাইজুল ৪/১০৮, সৌম্য ১/৪৮)।
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ২৯৬ (৯৬.৫ ওভার)
(তামিম ৪৪, সৌম্য ০, শান্ত ৪, মুমিনুল ২১, মুশফিক ৫৪, মিথুন ১৫, লিটন ৭১, মিরাজ ৫৭, নাঈম ০, তাইজুল ১৩*, রাহি ১; গ্যাব্রিয়েল ৩/৭০, কর্নওয়াল ৫/৭৪, আলজারি ২/৬০, মায়ার্স ০/১৫, ওয়ারিকান ০/৪৮, বোনার ০/১৭, ক্রইগ ০/৭)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংস: ১১৭ (৫২.৫ ওভার)
(ক্রেইগ ৬, ক্যাম্পবেল ১৮, মোসেলে ৭, বোনার ৩৮, ওয়ারিকান ২, মায়ার্স ৬, ব্লাকউড ৯, জশুয়া ২০, আলজারি ৯, রাখিম ১, গ্যাব্রিয়েল ১*; তাইজুল ৪/৩৬, নাঈম ৩/৩৪, মিরাজ ১/১৫, রাহি ২/৩২)।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ২১৩(৬১.৩ ওভার)
(তামিম ৫০, সৌম্য ১৩, শান্ত ১১, মুমিনুল ২৬, মুশফিক ১৪, মিথুন ১০, লিটন ২২, মিরাজ ৩১, তাইজুল ৮, নাঈম ১৪, রাহি ০*; কর্নওয়াল ৪/১০৫, আলজারি ০/১৬, গ্যাব্রিয়েল ০/৮, ওয়ারিকান ৩/৪৭, ব্র্যাথওয়েট ৩/২৫)