ঢাকা-সিলেটের দুই লেনের ২০৯ কিলোমিটার সড়ক ভেঙে চার লেনের মহাসড়কে উন্নীত করা হবে। এ কাজে ব্যয় হবে মোট ১৭ হাজার ১৬১ কোটি ৯২ লাখ টাকা। সেই হিসাবে প্রতি কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে গড় খরচ পড়বে ৮১ কোটি ৯৮ লাখ টাকার বেশি। এশিয়ান হাইওয়ে, বিমসটেক করিডোর এবং সার্ক হাইওয়ে করিডোরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই সড়ক চার লেন হলে বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, ভুটান ও চীন সুবিধা পাবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, সাসেক ঢাকা-সিলেট করিডোর উন্নয়ন’ নামের বিশাল বাজেটের এ প্রকল্পটি মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেতে যাচ্ছে। প্রকল্পটির মোট খরচের মধ্যে সরকার দেবে ৩ হাজার ৬৭৩ কোটি ৮৯ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। বাকি ১৩ হাজার ২৪৪ কোটি ৬৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছ থেকে ঋণ নিয়ে সড়কটি নির্মাণ করবে সরকার।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. মামুন-আল-রশীদ গণমাধ্যমকে বলেন, প্রকল্পটি আগামীকাল (মঙ্গলবার) একনেকে উঠছে। এটি ১৭ হাজার ১৬১ কোটি টাকার প্রকল্প ছিল। সেখান থেকে পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভায় আড়াইশ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। পরামর্শক ও অন্যান্য আরও কিছু খাত থেকে কমেছে। কিন্তু আরেক জায়গায় আমরা নতুন কম্পোনেন্টও যোগ করে দিয়েছিলাম। সেটা হলো, নারায়ণগঞ্জে জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে, সেখান (অর্থনৈতিক অঞ্চল) থেকে হেভি ট্রাফিক মুভমেন্ট হবে। তারা যেন হাইওয়েতে সরাসরি উঠতে পারে সেজন্য একটা কম্পোনেন্ট আমাদের সুপারিশের প্রেক্ষিতে তারা (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) যোগ করে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অনুরোধ করে দিয়েছিল, এটা দেয়ার জন্য। সেখানে আবার ১৪০ কোটি টাকা লাগবে।
তিনি বলেন, প্রতি মিটারে ৮ লাখ টাকা খরচ হবে। প্রতি কিলোমিটারে ৮১ কোটির কম খরচ হওয়ার কথা। যাই হোক, সমসাময়িক অন্যান্য যেসব চার লেনের প্রকল্প আছে সেগুলোর সঙ্গে তুলনা করে দেখেছি, এটার খরচ ঠিক আছে।
প্রকল্প সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উদ্যোগে বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পের আওতায় ঢাকা (কাঁচপুর) থেকে সিলেট পর্যন্ত ২০৯ দশমিক ৩২৮ কিলোমিটার সড়ক দুই লেন থেকে চার লেনে উন্নীত করা হবে। এই চার লেনের উভয় পাশে ধীরগতির যান চলাচলের জন্য ৫ দশমিক ৫ মিটার প্রস্থে পৃথক সার্ভিস লেন নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ৬৬টি সেতু, ৩০৫টি কালভার্ট, ৭টি ফ্লাইওভার বা ওভারপাস, ৬টি রেলওভার ব্রিজ এবং ২৬ ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে।
ঢাকা (কাঁচপুর) থেকে সিলেটের পীর হাবিবুর রহমান চত্বর পর্যন্ত সড়কের মোট দূরত্ব ২২৩ দশমিক ২২৮ কিলোমিটার। কিন্তু ১১ দশমিক ৫৬ কিলোমিটার সড়ক (ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত) ‘আশুগঞ্জ (নদীবন্দর)-সরাইল-ধরখার-আখাউড়া (স্থলবন্দর) সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন হচ্ছে এবং ২ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ভৈরব সেতু চার লেনবিশিষ্ট হওয়ায় তা বাদ দেয়া হয়েছে। ফলে সড়কের মোট ২০৯ দশমিক ৩২৮ কিলোমিটার চার লেন করা হবে বলেও জানিয়েছে সূত্র।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, টেকসই সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার দেশব্যাপী জাতীয় মহাসড়কের উভয় পাশে পৃথক সার্ভিস লেনের পাশাপাশি বিদ্যমান সড়কগুলো ক্রমান্বয়ে চার লেনে উন্নীত করার মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে এডিবির আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় দেশব্যাপী ১ হাজার ৭৫২ কিলোমিটার মহাসড়কের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। এর আওতায় ঢাকা (কাঁচপুর)-সিলেট-তামাবিল মহাসড়কটিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি এশিয়ান হাইওয়ে (এইচ-১ ও এইচ-২), বিমসটেক করিডোর (করিডোর-৩) এবং সার্ক হাইওয়ে করিডোরের (এসএইচসি-৫) একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ বিশেষ করে ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, ভুটান ও চীনের সাথে যোগাযোগের জন্য ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। সড়কটি উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের সাথে রাজধানীসহ অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগের প্রধান করিডোর হওয়ায় তা চার লেনে উন্নীত করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে উদ্যোগী মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।