দেশের সেবা এবং জনগণের কল্যাণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একনিষ্ঠভাবে কাজ করার জন্য বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর (বিএএফ) সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ। এই বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে পেশাদারিত্ব বজায় রাখার তাগিদ দিয়েছেন রাষ্ট্রপ্রধান।
আজ সোমবার বিকালে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক রাষ্ট্রপতি গণভবন থেকে এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বরিশাল রাডার ইউনিট এবং হেলিকপ্টার সিমুলেটর ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন। খবর বাসসের।
বরিশালে বিমান বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে রাষ্ট্রপতির পক্ষে চিফ অব এয়ার স্টাফ চিফ মার্শাল মশিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত বরিশাল রাডার ইউনিট এবং হেলিকপ্টার সিমুলেটর ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের ফলক উন্মোচন করেন।
বিমান বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, এ দেশের সন্তান হিসেবে, আপনারাও দেশের মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার সমান অংশীদার। তাই পেশাদারিত্বের নিপুণতা বজায় রাখার পাশাপাশি জনগণের প্রয়োজনে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আপনাদেরকে কাজ করতে হবে।
আবদুল হামিদ বলেন, ‘মনে রাখবেন, পরিশ্রম ও সততার কোনো বিকল্প নেই। সুদৃঢ় মনোবল, কঠোর পরিশ্রম, সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও দেশপ্রেমই আপনাদেরকে পেশাগত জীবনে উৎকর্ষের শিখরে পৌঁছে দিতে পারে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, পূর্বসূরিদের আত্মত্যাগের সার্থকতা আসবে আপনাদের একনিষ্ঠ দেশপ্রেম ও কর্তব্যনিষ্ঠার মাধ্যমে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের চলমান উন্নয়ন তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ এখন সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। একই সাথে সশস্ত্র বাহিনীর পরিসর ও আকারও ধীরে ধীরে বর্ধিত হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমান বাহিনীকে একটি অত্যাধুনিক ও চৌকস বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নতুন নতুন বিমান ঘাঁটি স্থাপন এবং যুদ্ধ বিমান, পরিবহন বিমান, হেলিকপ্টার, এয়ার ডিফেন্স রাডার, ক্ষেপণাস্ত্র ও অন্যান্য যুদ্ধ উপকরণ সংযোজন করে চলেছেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, হেলিকপ্টার সিমুলেটর ট্রেনিং ইনস্টিটিউট স্থাপন ভবিষ্যতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে উল্লেখ করে হামিদ বলেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে তৎকালীন বিমান বাহিনীর সদস্যরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদাত্ত আহ্বানে সাড়া দিয়ে এদেশের জনগণের পক্ষে প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতি মহান মুক্তিযুদ্ধে তাদের এই সাহসিকতাপূর্ণ অবদান চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।
আবদুল হামিদ বলেন, একটি দক্ষ ও চৌকস সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলা ছিল তার (বঙ্গবন্ধু) লক্ষ্য। আর এ কারণেই তিনি স্বাধীনতার পর যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশে আর্থিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও একটি আধুনিক সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার প্রয়োজনীয় সকল উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং ১৯৭৪ সালে ‘জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি’ প্রণয়ন করেন।
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ২১ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বর্তমান সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে একটি কার্যকরী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ও ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ প্রণয়ন করেছে যা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু একটি আধুনিক, শক্তিশালী ও পেশাগত বিমান বাহিনীর স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর এ লক্ষ্যে, তার শাসনকালের অতি অল্প সময়ের মধ্যেই বিমান বাহিনীতে সে সময়ের অত্যাধুনিক মিগ-২১ সুপারসনিক ফাইটার বিমানসহ পরিবহন বিমান, হেলিকপ্টার ও এয়ার ডিফেন্স রাডার যুক্ত হয়।
আব্দুল হামিদ বলেন, বরিশাল রাডার ইউনিট স্থাপন বরিশাল অঞ্চলে আকাশসীমা পর্যবেক্ষণ সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এগুলো সমুদ্র ও উপকূলীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, উদ্ধার-তৎপরতা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে ত্রাণ-কার্যক্রমে সহায়ক হবে বলে তিনি আশা করেন।