ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার

নিজস্ব প্রতিবেদক

শহীদ মিনার

আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই (শনিবার দিবাগত রাত ১২টায়) শুরু হবে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহর। ৬৯ বছর আগে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির এই দিনে রফিক, সালাম, বরকত, সফিউর, জব্বাররা মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রাখতে গিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন। তাদের তাজা রক্তের বিনিময়ে শৃঙ্খলমুক্ত হয়েছিল মায়ের ভাষা, বাংলা বর্ণমালা।

রাত ১২টা ১ মিনিট থেকেই অর্থাৎ ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে আসবেন সর্বস্তরের মানুষ। প্রতিবছর এই দিনে প্রথম প্রহরেই শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের উপচেপড়া ভিড় থাকলেও এবার মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব কার্যক্রম পালন করা হবে।

সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ইতোমধ্যেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। রং আর নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় জীবন্ত হচ্ছে শহীদ বেদি। তুলির আঁচড়ে প্রকাশ পাচ্ছে আলপনার অবয়ব। প্রতি বছরের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা আঁকছেন আলপনা। তবে কোভিড বাস্তবতায় ভিন্নতা এসছে কিছুটা। এবারই প্রথম শহীদ মিনারের আশপাশের রাস্তা রাঙানো হচ্ছে না। সার্বিক প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন, তাই দিনরাত চলছে আঁকিবুকির কাজ।

সর্বশেষ প্রস্তুতি দেখতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রং আর আলপনার কাজ শেষে চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে রাখা শহীদ মিনারে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না কাউকেই।

আয়োজকরা আগেই জানিয়েছেন, সীমিত পরিসরে হবে প্রভাতফেরি। বাধ্যতামূলক করা হয়েছে মাস্ক আর শারীরিক দূরত্ব। যারা শ্রদ্ধা জানাতে আসবেন প্রবেশ করতে পারবেন পলাশী মোড় দিয়ে, বের হতে হবে চানখারপুল অথবা দোয়েল চত্বর দিয়ে।

শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে আসা সর্বসাধারণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতের জন্য শহীদ মিনার এলাকায় তিনস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুরো এলাকাকে নজরদারিতে রাখতে স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে স্থাপন করা হয়েছে সিসি ক্যামেরা। বসানো হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। এছাড়াও সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দিতে কাজ করবে পুলিশ সদস্যসহ র‌্যাব, বোম্ব স্কোয়াড ও স্ট্রাইকিং ফোর্স।

প্রতিবার শ্রদ্ধা জানানোর কর্মসূচি উদ্বোধন করতেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। এবার করোনার কারণে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী আসছেন না। তাদের পক্ষ থেকে সামরিক সচিব ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও অমর একুশে উদযাপনের কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী বলেন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সামরিক সচিব শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এরপর সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রদ্ধা জানানোর অনুরোধ করেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কোভিড-১৯ উদ্ভুত পরিস্থিতি বিবেচনায় ‘মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২১’ সুষ্ঠুভাবে উদযাপনের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আগত সবাইকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান করতে হবে। এছাড়া সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে প্রতিটি সংগঠন/প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ পাঁচজন প্রতিনিধি ও ব্যক্তিপর্যায়ে একসঙ্গে সর্বোচ্চ দুই জন শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে পারবেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও আজিমপুর কবরস্থানে যাতায়াতের জন্য একটি রুট-ম্যাপ প্রণীত হয়েছে, তা যথাযথভাবে অনুসরণ করার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিবেচনায় শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রে এ বছর কোন জনসমাগম ও অভ্যর্থনার ব্যবস্থা থাকবে না। তাই শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রে কোন জনসমাগম করা যাবে না।

কোভিড-১৯ উদ্ভুত পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে দিবসটি উদযাপনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদালয় কর্তৃপক্ষ এ বছর সীমিত পরিসরে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, দিবসটি উপলক্ষ্যে উপাচার্য ভবনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ভবনগুলো জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা ও কালোপতাকা উত্তোলন করা হবে।

শুধু বাংলাদেশশেই নয়, আগামীকাল বিশ্বজুড়ে দিনটি পালিত হবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (ইউনেস্কো) ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ৩০তম সম্মেলনে ২৮টি দেশের সমর্থনে ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, যা ২০০০ সাল থেকে বিশ্বের ১৮৮টি দেশে একযোগে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

শেয়ার করুন