উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে হতে পারে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। সেক্ষেত্রে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার ক্ষেত্রে যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তা প্রত্যাহারের জন্য দলের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তিনি।
আজ সোমবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান নজরুল ইসলাম খান।
এর আগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক হয়। বৈঠকের আলোচ্য বিষয় নিয়ে বিস্তারিত জানাতেই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা যতটুকু জানি খালেদা জিয়া অসুস্থ। তার সুচিকিৎসা প্রয়োজন, যা দেশে সম্ভব নয়। সুচিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে হতে পারে তার। তবে এ বিষয়ে সরকারের একটি নিষেধাজ্ঞা আছে।
নজরুল বলেন, আমরা চাই খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সেটি প্রত্যাহার করা হোক। দেশনেত্রীর মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হোক, যেন তিনি চিকিৎসার প্রয়োজনে যখন যেখানে প্রয়োজন, সেখানে যেতে পারেন।
গত বছরের ২৫ মার্চ থেকে সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা ছয় মাস স্থগিত করে মুক্তি দেয়ার পর থেকে তিনি গুলশানে নিজের বাসা ফিরোজাতে রয়েছেন। তবে যে তিনটি শর্তে তিনি মুক্তি পেয়েছেন তার মধ্যে বিদেশে চিকিৎসা নিতে যেতে পারবেন না এমন শর্তও আছে।
বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞাকে অমানবিক ও অযৌক্তিক দাবি করে নজরুল ইসলাম বলেন, এদেশের ইতিহাস বলে যে, অসুস্থতার কারণে রাজনৈতিক নেতাদের বাইরে যাওয়ার অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। এমনকি জেলে থাকা অবস্থাও বাইরে যাওয়ারও দৃষ্টান্ত আছে। কিন্তু খালেদা জিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাখা হয়েছে। আমরা মনে করি এ অযৈাক্তিক ও অমানবিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা দরকার। শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে তিনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন যে, কখন কোথায় চিকিৎসার জন্য যেতে চান।
নজরুল ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়ার চেয়েও বেশি দণ্ডপ্রাপ্তদের মুক্তি দেয়া হয়েছে। কেন দেয়া হয়েছে সেটা আপনারাও জানেন। কারণ এটা খালেদা জিয়ার জন্য প্রযোজ্য না। তিনি সরকারের আপনজন না, প্রতিপক্ষ। যদিও সরকার তার প্রতি যে আচরণ করছে যেটা প্রতিপক্ষের না, শত্রুর আচরণ।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে তার যারা চিকিৎসক টিম এবং তার আত্মীয়-স্বজনদের বক্তব্য আপনারা বিভিন্ন সময়ে জেনেছেন এবং প্রকাশও করছেন। এর বাইরে তো বলার কিছু নাই। কারণ আমরা তো তার সঙ্গে দেখাই করতে পারি না। আমরা আপনাদের মতো যতটুকু জানি তিনি দারুণভাবে অসুস্থ। তার সুচিকিৎসা প্রয়োজন। একজন অসুস্থ মানুষ সুচিকিৎসা না পেলে যা হতে পারে, তা সরকারের বিবেচনায় নেয়া দরকার।
অ্যাটর্নি জেনারেলকে পদ ছাড়ার পরামর্শ
সম্প্রতি আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপকমিটিতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনকে সদস্য করার সমালোচনা করেছে বিএনপি। এই সংবাদ সম্মেলনে নজরুল ইসলাম খান আওয়ামী লীগের দলীয় পদ অথবা অ্যাটর্নি জেনারেল যেকোনো একটি পদ থেকে পদত্যাগ করার দাবি জানান।
নজরুল বলেন, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণের মাধ্যমে কুক্ষিগত ও কলুষিতকারী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটিতে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেলকে সদস্য নিয়োগ করায় বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।
একে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তার কার্যালয়কে নগ্ন দলীয়করণের অপচেষ্টা ও একটি অত্যন্ত মন্দ দৃষ্টান্ত আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি মনে করে যে, দেশের বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ও রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তার পদের নিরপেক্ষতা যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অ্যাটর্নি জেনারেলের উচিত হয় দলীয় পদ কিংবা অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ থেকে পদত্যাগ করা।
এসময় তিনি বগুড়ায় দলীয় সংসদ সদস্য জি এম সিরাজের ওপর ছাত্রলীগের হামলার সমালোচনা করেন। এছাড়াও নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংর্ঘষে নিহত সাংবাদিক বুরহান উদ্দিনের হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।