নেপিদোতে বিক্ষোভকারীদের ধর্মঘটের ডাক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মিয়ানমারে প্রতিরোধ আন্দোলন
ছবি : ইন্টারনেট

পর পর পাঁচ মৃত্যুতে ফুঁসে উঠেছে মিয়ানমার। শনিবার জান্তা বাহিনী ও পুলিশের গুলিতে চারজন নিহত ও অন্তত ১০০ জন আহত হওয়ার পর আজ সোমবার দেশজুড়ে জান্তাবিরোধী সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে।

এর আগে শুক্রবার মারা যায় আহত এক ছাত্রী। ফলে অসহযোগ আন্দোলন (সিডিএম) আরও জোরদার করে সেনাশাসন উৎখাতের লক্ষ্যে এ ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়।

এতে লাখো মানুষ অংশগ্রহণ করবেন। ২২.০২.২০২১-এ অনুষ্ঠিত হবে বিধায় এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘ফাইভ টুজ বিপ্লব’। এদিকে নেপিদোতে হামলার শিকার হয়ে শুক্রবার মারা যাওয়া ওই ছাত্রী হত্যার দায় অস্বীকার করেছে জান্তা। ইরাবতী।

পহেলা ফেব্রুয়ারি ক্ষমতা দখলের পর ধীরে চললেও ক্রমশ চড়াও হচ্ছে জান্তা। সম্প্রতি প্রতিবাদ-বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন-পীড়ন তীব্র করেছে। সেনা শাসনবিরোধী প্রতিবাদ-বিক্ষোভ সহ্য করা হবে না- এমন ইঙ্গিত দিচ্ছে সামরিক বাহিনী। শনিবার দেশজুড়ে বিভিন্ন স্থানে সেনা ও পুলিশের হামলায় চারজনের প্রাণহানি ও শতাধিক আহত হওয়ার ঘটনা তার প্রমাণ। বিপরীতে জনতাও ছেড়ে কথা বলতে রাজি নয়। আজকের সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়ে নিজেদের অনড় অবস্থানের জানান দিয়েছে তারা। ধর্মঘট আহ্বানকারী অধিকারকর্মী ও বিভিন্ন ক্ষেত্রের তারকারা প্রতিটি নাগরিককে ধর্মঘটে যোগদানের আহ্বান জানিয়েছেন।

শেষ পর্যন্ত জান্তার বাধা উপেক্ষা করে সাধারণ ধর্মঘট অনুষ্ঠিত হলে এটি হবে ১৯৮৮ সালের ৮ আগস্টের পর মিয়ানমারের আধুনিক ইতিহাসে দেশজুড়ে দ্বিতীয় জনপ্রিয় বিপ্লব। ওই বিপ্লবে কয়েক লাখ মানুষ অংশ নিয়েছিলেন। আজকের ধর্মঘটে দেশের অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য সব বন্ধ হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রোববার মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় খুচরা বিক্রেতা ‘সিটি মার্ট হোল্ডিং’ ও থাই পাইকারি ব্যবসা ‘মাকরো’ ইয়াঙ্গুন ও অন্যান্য শহরে সোমবার তাদের ব্যবসা বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। এ ছাড়া বেশিরভাগ দোকান ও মার্কেট মালিকরা শনিবার থেকেই তাদের গ্রাহকদের বলে দিচ্ছেন, সোমবার প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। এরই মধ্যে বিক্ষোভ তীব্র রূপ ধারণ করা মিয়ানমারের জন্য আজকের দিনসহ কয়েকদিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

জান্তা ও জনগণ-দুপক্ষই নিজেদের অনড় অবস্থানে মরিয়া। জান্তার হুমকি উপেক্ষা করে রোববারও দেশজুড়ে হাজারো মানুষ তীব্র প্রতিবাদ দেখিয়েছে। কিছু মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছেন ‘যত বেশি তোমরা দমন করবা, ততবেশি আমরা উঠে দাঁড়াব।’

এর মধ্য দিয়ে নিজেদের দৃঢ়সংকল্পের চিত্র তারা তুলে ধরছে। সাধারণ ধর্মঘট সুষ্ঠুভাবে পালনের জন্য ২৫টি সংগঠনের নেতাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে রাজনৈতিক দল, শ্রমিক সংগঠন, ছাত্র ও কৃষক সংগঠন, ধর্মীয়, নারী, আইনজনীবী, ডাক্তার, লেখক ও সন্ন্যাসীদের বিভিন্ন সংগঠন থেকে নেওয়া নেতা-কর্মী। এই কমিটি সামরিক শাসন বিলোপ, ২০০৮ সালের সংবিধান বাতিল ও ফেডারেল ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন গঠনের জন্য কাজ করবে।

কমিটি তাদের বিভিন্ন আঞ্চলিক ও সাবকমিটি গঠন করবে। কমিটির সদস্য ও ডেমোক্রেটিক পার্টি ফর নিউ সোসাইটির (ডিপিএনএস) সদস্য অং মোয়ে ঝাও বলেন, ‘আমরা পিছু হটলে চলবে না। আমরা এখন শিথিলতা দেখালে জান্তা জেঁকে বসবে। দমন-পীড়ন কঠোর করবে। এখন সংগঠনগুলোর ঐক্যবদ্ধভাবে তীব্র আন্দোলনের বিকল্প নেই।’

১০ ফেব্রুয়ারি নেপিদোতে দাঙ্গা পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা করলে গুরুতর আহত হন ২০ বছর বয়সি ছাত্রী মা মিয়া থোয়েট খাইন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯ ফেব্রুয়ারি তিনি মারা যান। অভ্যুত্থানবিরোধী বিপ্লবে প্রথম নিহত তিনি। কিন্তু তার মৃত্যুর দায় অস্বীকার করেছে জান্তা। রোববার জান্তার মুখপত্র রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্র ‘দ্য মিরর’ বলেছে, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট অনুযায়ী, থোয়েটের মাথায় এক টুকরো গ্রাফাইট পাওয়া গেছে। এটি মিয়ানমার পুলিশের ব্যবহার করা অস্ত্রের চেয়ে ভিন্ন অস্ত্রের নিদর্শন। বিক্ষোভের সময় তো নয়ই, সাধারণ সময়েও মিয়ানমার পুলিশ এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করে না।

পত্রিকাটিতে আরও দাবি করা হয়, দাঙ্গাকারীরা পুলিশের পথ আটকালে তারা রাস্তা পরিষ্কার করার জন্য ছত্রভঙ্গ করতে গিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। থোয়েটের মৃত্যুর খবরে ফুঁসে ওঠা প্রতিবাদী জনগণ শনিবার ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু করলে তাতে সেনাদের দমন সহিংস হয়। প্রথমবারের মতো বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদেই সাধারণ ধর্মঘট আহ্বান করেন বিক্ষোভকারীরা।

শেয়ার করুন