সৈয়দ আবুল মকসুদের মৃত্যুতে মোকতাদির চৌধুরী ও ফাহিমা খাতুনের শোক

র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি-সৈয়দ আবুল মকসুদ।
র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি-সৈয়দ আবুল মকসুদ। ছবি: মত ও পথ

দেশের খ্যাতিমান কলামিস্ট, গবেষক, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক ও লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি এবং মত ও পথ সম্পাদক যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর ফাহিমা খাতুন।

গণমাধ্যমে পাঠানো পৃথক শোকবার্তায় তাঁরা গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন।

universel cardiac hospital

এক শোকবার্তায় মত ও পথ সম্পাদক মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেন, সৈয়দ আবুল মকসুদ ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক সাংবাদিক ও গবেষক। তিনি ছিলেন মত ও পথ পরিবারের একজন ঘনিষ্ঠজন। তিনি আমাদের মত ও পথে নিয়মিত কলাম লিখতেন। এছাড়াও সৈয়দ আবুল মকসুদ চিনাইর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অনার্স কলেজ মাঠে আয়োজিত শিশু মেধাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান ও শিশুমেলায় বহুবার এসে এই অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করে গেছেন। কর্মজীবনের প্রতিটি স্তরে তিনি দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশের রাজনীতি, সমাজ, সাহিত্য ও সংস্কৃতি নিয়ে বিভিন্ন গ্রন্থ ও প্রবন্ধ লেখার পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় জনসচেতনতা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন । তাঁর মৃত্যুতে দেশ একজন প্রতিশ্রুতিশীল সন্তানকে হারালো। আমি তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনাসহ শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।

অপর একটি শোকবার্তায় প্রফেসর ফাহিমা খাতুন বলেন, সৈয়দ আবুল মকসুদ তাঁর গবেষণাধর্মী প্রবন্ধের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন। তিনি বিখ্যাত সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদদের জীবনী ও কর্ম নিয়ে গবেষণামূলক বহু প্রবন্ধ লিখেছেন। তাঁর হঠাৎ চলে যাওয়া দেশ ও জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি । আমি এই গুণী লেখকের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনাসহ শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।

উল্লেখ্য, দেশের খ্যাতিমান কলামিস্ট, গবেষক, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক ও লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

সৈয়দ আবুল মকসুদের ছেলে সৈয়দ নাসিফ মকসুদ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় গণমাধ্যমকে জানান, বিকালে বাবা হঠাৎ করে শ্বাসকষ্টে ভুগলে আমরা তক্ষুনি তাকে স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে আসি। একটু আগে তিনি মারা যান।

সৈয়দ আবুল মকসুদ বাংলাদেশের রাজনীতি, সমাজ, সাহিত্য ও সংস্কৃতি নিয়ে নানা বই ও প্রবন্ধ লিখেছেন। বিখ্যাত সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদদের জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধ লিখেছেন। পাশাপাশি কাব্যচর্চাও করেছেন। তার রচিত বইয়ের সংখ্যা চল্লিশের ওপর। বাংলা সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৫ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সৈয়দ আবুল মকসুদ ১৯৪৬ সালের ২৩ অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার এলাচিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সৈয়দ আবুল মাহমুদ ও মা সালেহা বেগম। শৈশব থেকে আবুল মকসুদ দেশি বিদেশি বিভিন্ন পত্রিকা পড়ার সুযোগ পান।

সৈয়দ আবুল মকসুদের কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৬৪ সালে এম আনিসুজ্জামান সম্পাদিত সাপ্তাহিক নবযুগ পত্রিকায় সাংবাদিকতার মাধ্যমে। এটি ছিল পাকিস্তান সোশ্যালিস্ট পার্টির মুখপত্র। পরে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি সমর্থিত সাপ্তাহিক ‘জনতা’য় কাজ করেন কিছুদিন। পরে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ বার্তা সংস্থায় যোগ দেন। ২০০৮ সালের ২ মার্চ বার্তা সংস্থার সম্পাদকীয় বিভাগের চাকরি ছেড়ে দেন। তিনি দৈনিক প্রথম আলোর একজন নিয়মিত কলামিস্ট। এই দৈনিকে ‘সহজিয়া কড়চা’ এবং ‘বাঘা তেঁতুল’ শিরোনামে তিনি সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে কলাম লেখেন।

সৈয়দ আবুল মকসুদ মত ও পথ পরিবারেরও ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। তিনি মত ও পথ পক্ষিক এবং অনলাইনে ‍নিয়মিত কলাম লিখতেন।

সৈয়দ আবুল মকসুদ সাহিত্যিক হিসেবেও খ্যাতিমান ছিলেন। ১৯৮১ সালে তার কবিতার বই বিকেলবেলা প্রকাশিত হয়। ১৯৮৭ সালে তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ দারা শিকোহ ও অন্যান্য কবিতা প্রকাশিত হয়। মানবাধিকার, পরিবেশ, সমাজ ও প্রেম নিয়ে তিনি কবিতা লিখেছেন। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বুদ্ধদেব বসু, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী প্রমুখ প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদদের জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষণা করেছেন।

আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে নিয়ে তিনি লিখেছেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানীর জীবন, কর্মকাণ্ড, রাজনীতি ও দর্শন (১৯৮৬) ও ভাসানী কাহিনী (২০১৩)। ভাসানী কাহিনীতে তিনি ভাসানীর বৈচিত্র্যময় ও ঘটনাবহুল দীর্ঘ জীবন এবং তার রাজনৈতিক দর্শন বর্ণনা করেছেন। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহকে নিয়ে লিখেছেন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর জীবন ও সাহিত্য (২০১১) ও স্মৃতিতে ওয়ালীউল্লাহ (২০১৪)। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর জীবন ও সাহিত্য গ্রন্থে তিনি সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর জীবন ও তার সাহিত্যকর্ম নিয়ে লিখেছেন। এ ছাড়া, তৎকালীন সময়ের সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক দিকগুলো তুলে ধরেছেন।

শেয়ার করুন